অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান
বালআদাভিয়া গোত্রের এক ব্যক্তি বলেন, আমার দাদা আমার নিকট তাহার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করিয়া যাইয়া বলিয়াছেন যে, আমি মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইয়া উহার নিকটবর্তী এক উপত্যকায় পৌছিলাম। সেখানে দেখিলাম, দুই ব্যক্তি একটি বকরী ক্রয়-বিক্রয় করিয়াছে। ক্রেতা বিক্রেতাকে বলিতেছে, ক্রয় বিক্রয়ের ব্যাপারে আমার সহিত সদ্ব্যবহার কর। আমার দাদা বলেন, আমি মনে মনে বলিলাম, এই সেই হাশেমী ব্যক্তি হইবে, যে লোকদিগকে গোমরাহ করিয়াছে। এমন সময় অপর একজন লোককে আসিতে দেখিলাম। তাহার শরীর ছিল সুদর্শন, তাহার ললাট ছিল প্রশস্ত, নাক সরূ ভ্রূদ্বয় সূক্ষ্ণ ও বুকের ঊর্ধ্বাংশ হইতে নাভী পর্যন্ত ছিল কালো সূতার ন্যায় কালো চুলের রেখা। তিনি দুইটি পুরাতন চাদর পরিহিত ছিলেন। আমার দাদা বলেন, তিনি আমাদের নিকটবর্তী হইয়া বলিলেন, আসসালামু আলাইকুম। আমরা তাহার সালামের উত্তর দিলাম। ইতিমধ্যে ক্রেতা তাহারে ডাকিয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি বকরীওয়ালাকে বলুন, যেন আমার সহিত সদ্ব্যবহার করে। তিনি হাত তুলিয়া বলিলেন, তোমরাই তোমাদের জিনিসের মালিক। আমি চাই যেন কেয়ামতের দিন আল্লাহ্র সম্মুখে এমনভাবে হাযির হই যে, তোমাদের কাহারো জানমাল ও আব্রু-ইযযতের কোন দাবী আমার উপর না থাকে।
আল্লাহ্ তায়ালা সেই ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে ক্রয় বিক্রয় ও লেনদেন নরম ব্যবহার করে এবং সহজভাবে করয আদায় করে ও নম্রভাবে উহার তাগাদা করে। এই বলিয়া তিনি চলিয়া গেলেন। আমি মনে মনে বলিলাম, খোদার কসম, আমি এই ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে ভালরূপে অবগত হইব। লোকটির কথাবার্তা অতি উত্তম। অতএব আমি তাহার পিছনে চলিলাম এবং বলিলাম, হে মুহাম্মদ! তিনি আমার প্রতি পূর্ণ শরীরে ঘুরিয়া দাঁড়াইলেন এবং বলিলেন, কি চাও? আমি বলিলাম, আপনিই কি (নাউযুবিল্লাহ) লোকদেরকে গোমরাহ করিয়াছেন ও ধ্বংস করিয়াছেন এবং তাহাদিগকে বাপদাদার মা’বুদের উপাসনা হইতে ফিরাইয়াছেন? তিনি বলিলেন, এই সকল কাজ আল্লাহ্ তায়ালা করিয়াছেন।
আমি বলিলাম, আপনি কিসের প্রতি দাওয়াত দিতেছেন? তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহ্র বান্দাগণকে আল্লাহ্র প্রতি দাওয়াত দিতেছি। আমার দাদা বলেন, আমি বলিলাম, আপনি কি বলিয়া এই দাওয়াত দেন? তিনি বলিলেন, তুমি এই সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং আমি মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। আর আল্লাহ্ তায়ালা যাহা কিছু আমার উপর নাযিল করিয়াছেন উহার উপর ঈমান আনয়ন কর এবং লাত ও ওযযাকে অস্বীকার কর। নামায কায়েম কর ও যাকাত দাও। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, যাকাত কি জিনিস? তিনি বলিলেন, আমাদের ধনীগণ (তাহাদের মালদৌলতের একাংশ) আমাদের গরীবদের উপর খরচ করিবে। আমি বলিলাম, আপনি অতি উত্তম জিনিসের প্রতি দাওয়াত দিতেছেন!
আমার দাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত এই সাক্ষাৎ ও কথাবার্তার পূর্বে আমার দিলের অবস্থা এই ছিল যে, যমীনের বুকে আমার নিকট তিনি অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত আর কেহ ছিল না, কিন্তু এই কথাবার্তার পর আমার অবস্থা এই হইল যে, তিনি আমার নিকট আপন সন্তান ও পিতামাতা এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হইয়া গেলেন। আমার দাদা বলেন, সুতরাং আমি বলিয়া ফেলিলাম যে, আমি চিনিতে পারিয়াছি। তিনি বলিলেন, সত্যই কি চিনিতে পারিয়াছ? আমি বলিলাম, জ্বি হাঁ। তিনি বলিলেন, তবে কি সাক্ষ্য দিতেছ যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই এবং আমি মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ্র রাসূল, আর আমার উপর যাহা নাযিল হইয়াছে উহার প্রতি ঈমান আনিয়াছ? আমি বলিলাম, জ্বি হাঁ। তারপর বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি একটি জলাশয়ের নিকট অবতারণ করিব, যেখানে অনেক লোক বাস করে। সেখানে আমি তাহাদিগকে আপনার এই দাওয়াত দিব কি? আশা করি তাহারা আপনার আনুগত্য স্বীকার করিবে। তিনি বলিলেন, হাঁ, তাহাদিগকে দাওয়াত দাও।
আমার দাদা বলেন, জলাশয়ের নিকট (যাইয়া তিনি ইসলামের দাওয়াত দিলে সেখানে) বসবাসকারী মেয়ে-পুরুষ সকলেই ইসলাম গ্রহণ করিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশী হইয়া তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া দিলেন।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু নাজ্জার গোত্রের অসুস্থ এক ব্যক্তিকে দেখিতে যাইয়া তাহাকে বলিলেন, হে মামুজান, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলুন। উক্ত ব্যক্তি বলিলেন, আমি কি আপনার মামা হই, না চাচা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, না, বরং আপনি মামা হন, আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলুন। রুগী ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহা কি আমার জন্য কল্যাণকর হইবে? তিনি বলিলেন, হাঁ।
ইমাম বোখারী ও আবু দাউদ (রঃ) হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, এক ইহুদী বালক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করিত। সে অসুস্থ হইয়া পড়িলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে দেখিতে গেলেন এবং তাহার মাথার নিকট বসিয়া বলিলেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। সে তাহার পিতার দিকে চাহিল।
পিতা সেখানে উপস্থিত ছিল। পিতা বলিল, তুমি আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথা মান্য কর। অতএব সে ইসলাম গ্রহণ করিল। অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলিতে বলিতে বাহির হইয়া আসিলেন যে, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহ্ তায়ালা আমার দ্বারা তাহাকে আগুন হইতে রক্ষা করিলেন।
অপর রেওয়ায়াতে হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলিলেন, ইসলাম গ্রহণ কর, নিরাপদ থাকিবে। সে বলিল, আমার মন চাহিতেছে না। তিনি বলিলেন, তোমার মন না চাহিলেও (ইসলাম গ্রহণ কর)। (আহমদ)