মাতৃভাষা-গোপাল ভাঁড়

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় একজন লোক মাঝে মাঝেই আসত। সে লোকটা নানা ভাষায় কথা বলত। কী যে তার আসল মাতৃভাষা, কোথায় তার আসল দেশ কেউ জানতো না। সবগুলো ভাষাতেই সে সমান দক্ষ। প্রায় সবগুলো ভাষাতেই সে লিখতে পড়তে পারত। যেমন বাংলা বলত, তেমনি হিন্দী বলত, আবার ফার্সীও বলত। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র একদিন গোপালকে বললেন, ‘গোপাল, লোকটা কী জাতি এবং ওর মাতৃভাষাই বা কী, তুমি যদি ঠিক ঠিক বলতে পার- আমি তোমাকে পুরস্কার দেব’। মহারাজের কথা শুনে গোপাল বলল, ‘এ আর তেমন কষ্ট কী? আমি দু’দিনের মধ্যেই ঠিক বলে দিতে পারব’। গোপালের কথা শুনে মন্ত্রী মশায় বললেন, ‘ওহে গোপাল, কাজটা যত সোজা ভাবছ, ততটা সোজা নয়। লোকটা তোমার থেকেও সেয়ানা। ও সহজে ধরা দেবে না’। গোপাল বলল, ‘মন্ত্রী মশাই, আমার নামও গোপাল ভাঁড়। দেখবেন, আমি লোকটির আসল পরিচয় বের করে নেব’। পরদিন গোপাল অনেক আগেই এসে রাজসভার দ্বারে একপাশে লুকিয়ে রইল। কারণ, বিশেষ কাজে ঐ দিনই ঐ লোকটার রাজসভায় আসার কথা ছিল। কিছুক্ষণ পরেই ঐ লোকটা এল। গোপাল বেরোতে যাবার ভাণ করে- আচমকা লোকটাকে ধাক্কা দিল, লোকটা একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বলল, ‘সঁড়া অন্ধা! দিনের বেলা চোখে দেখতে পাও না? এই বয়সেই চোখের মাথা খেয়ে বসে আছ’? গোপাল বলল, ‘গালাগাল দাও, আর যাই বল- তুমি যে উড়ে আমি বুঝতে পেরেছি। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়ে তোমার মুখ থেকে সবার আগে যে ভাষা বেরিয়েছিল, ওটা- তোমার মাতৃভাষা- তুমি বাপু উড়ে’। লোকটা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করল যে, সে উড়ে। মহারাজ সন্তুষ্ট হয়ে গোপালকে একশো টাকা পুরস্কার দিলেন। –সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

উল্টো জব্দ

গ্রামের এক বড়সড় বাজার। মানুষজনের আগমন, বেচাকেনার ধুমধাম; আর পকেটমার, চাপাবাজ, টাউট-বাটপারের আনাগোনাও কম নয়।…

ব্যথা বনাম চুলকানি – ভিক্তর গুরেৎস্কি

‘ডাক্তার সাহেব, আমার কী হয়েছে, বলুন তো?’ ‘আপনার কী মনে হয়?’ ‘আমার কিছুই মনে হয়…

‘কি মুসকিল, তোরা কি আমাকে পাগল করে দিবি’|

দেওয়ালে অথবা পোস্টারে, সাইনবোর্ডে কিংবা হোর্ডিংয়ে বিচিত্র বিপর্যয় আকছার চোখে পড়ে। তার কোনওটা, যে লিখেছে,…

মাতৃভাষা-গোপাল ভাঁড়

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় একজন লোক মাঝে মাঝেই আসত। সে লোকটা নানা ভাষায় কথা বলত। কী যে তার আসল মাতৃভাষা, কোথায় তার আসল দেশ কেউ জানতো না। সবগুলো ভাষাতেই সে সমান দক্ষ। প্রায় সবগুলো ভাষাতেই সে লিখতে পড়তে পারত। যেমন বাংলা বলত, তেমনি হিন্দী বলত, আবার ফার্সীও বলত। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র একদিন গোপালকে বললেন, ‘গোপাল, লোকটা কী জাতি এবং ওর মাতৃভাষাই বা কী, তুমি যদি ঠিক ঠিক বলতে পার- আমি তোমাকে পুরস্কার দেব’। মহারাজের কথা শুনে গোপাল বলল, ‘এ আর তেমন কষ্ট কী? আমি দু’দিনের মধ্যেই ঠিক বলে দিতে পারব’। গোপালের কথা শুনে মন্ত্রী মশায় বললেন, ‘ওহে গোপাল, কাজটা যত সোজা ভাবছ, ততটা সোজা নয়। লোকটা তোমার থেকেও সেয়ানা। ও সহজে ধরা দেবে না’। গোপাল বলল, ‘মন্ত্রী মশাই, আমার নামও গোপাল ভাঁড়। দেখবেন, আমি লোকটির আসল পরিচয় বের করে নেব’। পরদিন গোপাল অনেক আগেই এসে রাজসভার দ্বারে একপাশে লুকিয়ে রইল। কারণ, বিশেষ কাজে ঐ দিনই ঐ লোকটার রাজসভায় আসার কথা ছিল। কিছুক্ষণ পরেই ঐ লোকটা এল। গোপাল বেরোতে যাবার ভাণ করে- আচমকা লোকটাকে ধাক্কা দিল, লোকটা একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বলল, ‘সঁড়া অন্ধা! দিনের বেলা চোখে দেখতে পাও না? এই বয়সেই চোখের মাথা খেয়ে বসে আছ’? গোপাল বলল, ‘গালাগাল দাও, আর যাই বল- তুমি যে উড়ে আমি বুঝতে পেরেছি। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়ে তোমার মুখ থেকে সবার আগে যে ভাষা বেরিয়েছিল, ওটা- তোমার মাতৃভাষা- তুমি বাপু উড়ে’। লোকটা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করল যে, সে উড়ে। মহারাজ সন্তুষ্ট হয়ে গোপালকে একশো টাকা পুরস্কার দিলেন। –সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *