“হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন” –জয়। -কি গিফট এনেছো মা আমার জন্য। -বাইরে ভীষণ স্নো পড়ছে সোনা। চারিদিকে চেয়ে দেখো শুধু দুধ সাদা বরফ। গাছ, রাস্তা, বাড়ী সব শুধু সাদা বরফে সেজেছে। এসো আজ আমি তোমাকে সেই মহান পূজারী ভ্যালেন্টাইন এর গল্প বলব। যাঁর জন্য এই দিনটা এত সুন্দর, এত লাল ফুল, বেলুন-এর ছড়াছড়ি। সব দেশে এই দিনটা খুব আনন্দের সাথে পালন করা হ্য় জানো? আগে কিছু খেয়ে নাও, মুখ হাত পা ধুয়ে পরিষ্কার জামা কাপড় পড়ে এসো। আমরা এই জানলার কাছটায় বসি সবাই আর তাঁর নাম স্মরণ করে তাঁর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এইটাই হবে আজ তোমার ভ্যালেন্টাইন এর গিফট, যদি এই গিফট তোমার পছন্দ হয় তাহলে তোমার বাপী আর আমার মতন সুখী কেউ হবে না।
শুরু করি গল্প তাহলে? ২৭০ খৃষ্টাব্দে রোমের একটা শহরে ক্লডিয়াস নামে এক রাজা বাস করতেন। ইতিহাসে তিনি “ক্লডিয়াস দ্য ক্রুয়েল” নামে অধিক পরিচিত । ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন অতি সাধারণ পূজারী। তিনিও সেই রাজপ্রাসাদের কাছে একটা খুব সুন্দর মন্দিরে বাস করতেন। রোমানরা তাকে খুব ভালবাসত এবং তারা তাঁর মধুর বাণী শোনার জন্য সেই মন্দিরে জমায়েত হত। ধুনি জ্বলার আগে তারা তাঁর আশীর্বাদ নেবার জন্য হাঁটু গেড়ে বসত। ধনী -দরিদ্র , জ্ঞানী -অজ্ঞানী, শিক্ষিত- অশিক্ষিত, বৃ্দ্ধ- যুবা, সাধারণ- অসাধারণ লোকেরা এই পূজারী ভ্যালেন্টাইন এর কাছে সমবেত হতেন। কেন জানো তো? ওঁনার মিষ্টি ব্যবহারের জন্য। রোমান সাম্রাজ্যে হঠাৎ করে যুদ্ধ শুরু হলো। রাজা ক্লডিয়াস সমস্ত নাগরিকদের যুদ্ধে যোগদান দেবার জন্য আহ্বান করলেন। বছরের পর বছর এই যুদ্ধ চলতে থাকল। অনেক রোমান সেই যুদ্ধে সামাল দিতে চাইল না।
বিবাহিতরা নিজেদের সংসার ছেড়ে যেতে রাজি হলো না। কেন হবে বল? কেউ কি চায় তোমার মতন সোনাদের ছেড়ে যুদ্ধের নামে সেই ভয়ংকর হিংস্র জায়গায় যেতে? যুবারাও নিজেদের প্রিয় ভালবাসার জনকে ছেড়ে যেতে চাইল না। রাজা দেখেন যুদ্ধে যাবার সৈ্ন্য অনেক কম। তখন তিনি আদেশ দিলেন যে, কোন বিয়ে এই সময় যেন না হয় এবং সমস্ত বিয়ের তোড়জোড় যেন ভেঙ্গে ফেলা হয় এই মূহুর্ত্তে । এইবার সেই সদহৃদয় পূজারী ভ্যালেন্টাইন শুনলেন রাজার আদেশ এবং শুনে খুব হতাশ হলেন। আর মনে মনে দুঃখ পেলেন খুব।
যখন এক তরুন তরুনী নিরুপায় হয়ে তাঁর মন্দিরে এল তাদের বিয়ের শর্ত নিয়ে, তিনি তখন চুপিসারে ভগবানের মূর্তির সামনে তাদের বিয়ে দিয়ে দিলেন। আরও একজন তাঁর কাছে আসলে তিনি তাদেরও বিয়ে দিয়ে দেন সকলের অজ্ঞাতে। এইভাবে বেশ কিছু জনের বিয়ে তিনি দিয়ে দেন। ভ্যালেন্টাইন ছিলেন রোমের প্রত্যেকটি ভালবাসার জনদের নিকট বন্ধু। যারা ভালবাসতে জানে মানুষ,পশু-পক্ষী থেকে শুরু করে সবাইকে এক ভালবাসার হৃদয় নিয়ে, তিনি তাঁদের পবিত্র ভালবাসাকে শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু, রোমে এই গুপ্তকথা বেশীদিন অজ্ঞাত থাকল না।
ভ্যালেন্টাইন-এর বাণী রাজপ্রাসাদে যেন তেন প্রকারেণ পৌঁছে গেল এবং শয়তান রাজা ক্লডিয়াস ভীষন রেগে গেলেন, মাত্রাধিক রাগ যাকে বলে। তিনি তার সৈ্ন্যদের আদেশ দিলেন, “ যাও! সেই পূজারীকে মন্দির থেকে বেঁধে নিয়ে কারাগারে বন্দী করে রাখো। রোমের কোন মানুষ, পূজারী অথবা কেউ যেন আমার এই আদেশ অমান্য না করে। ভ্যালেন্টাইন কে মন্দিরের পূজারীর পদ থেকে বিচ্যুত করা হল। মূর্তি থেকে দূরে যেখানে একজন যুবতী এবং একজন রোমান যুবক দাঁড়িয়ে ছিল। সৈ্ন্যরা তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করল। অনেকে রাজা ক্লডিয়াসের কাছে ভ্যালেন্টাইন-এর মুক্তির জন্য আবেদন করল কিন্তু তিনি তা মেনে নিলেননা। দিনের পর দিন আন্ধকার কারাগারে বন্দী আবস্থায় শেষে একদিন ভ্যালেন্টাইন মারা গেলেন। তাঁর শিষ্যেরা সেন্ট প্রাক্সিডিস চার্চে তাঁর অন্তিম ক্রিয়া সম্পন্ন করলেন।
রোমে আমরা গেলে তোমাকে দেখাতে নিয়ে যাবো সেই জায়গা। সেই দিনটা ছিল ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারী। জানো তো? এই দিনটাতে বেশ সুন্দর সুন্দর চকলেট পাওয়া যায়। কেন বল তো? জানো না তো তাহলে আজকে বেশ ভাল ভাল গিফট পাচ্ছ বলো? কঙ্কিস্টাডোর ১৫২৪ খৃষ্টাব্দে স্পেন থেকে চকলেট এনেছিলেন। কেন এনেছিলেন? কারণ, বীনস থেকে চকলেট তৈরী করার পদ্ধতি তারা জানতেন। ২০ বছর পরে ক্যাডবারী ব্রাদার্সরা আবিষ্কার করল কিভাবে নরম আর মিস্টি চকলেট তৈ্রী করা যায়। ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে ক্যাডবেরী প্রথম চকলেট বাক্সে রাখা অবস্থায় বিক্রি হল। বাক্সটা তৈ্রী হল লাল ভেল্ভেট দিয়ে আর ভেতরে রাখা হল কাঁচের আয়না। তাহলে সেই আয়নাতে সুন্দর সুন্দর চকলেটগুলো বাক্স খুল্লেই দেখা যেত।
কে প্রথম হার্ট শেপ্ চকলেট বার করেছিলেন জানো? ১৮৭০ খৃষ্টাব্দে রিচার্ড ক্যাডবারী ভ্যালেন্টাইন ডে –এর জন্য প্রথম হার্ট শেপ্ড ক্যান্ডি আবিষ্কার করেছিলেন। কেমন লাগল জয় আজকের গল্প ? কত কিছু জানতে পারলে তাই না? তার মানে হলো এই ভ্যালেন্টাইন দিনটায় তোমার প্রিয় মানুষদের তুমি ক্যান্ডি –ও দিতে পারো। পরেরবার আমি তোমাকে সেন্ট প্যাট্রিক-এর গল্প-ও শোনাব কেমন?