হযরত ফোজায়েল ইবনে ইয়াজ (রঃ)- পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দলের অন্য দস্যুরা এ টাকা ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু দরবেশ-রূপী দস্যু সর্দার বলেছিলেন, আমার প্রতি লোকটার ধারণা ভালো ছিল। আমাকে নির্ভরশীল বলে সে মনে করেছিল। যেমন-আল্লাহর প্রতি আমি ভালো ধারণা পোষণ করি ও তাঁকে নির্ভরশীল বলে জানি। তাই তাঁর সেই ভালো ধারণাকে আমি সত্যে পরিণত করলাম। আশা করি, আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমার ভালো ধারণাকে সত্যে পরিণত করবেন।
পথে যেতে যেতে দরবেশের কথাগুলো তার বারবার মনে পড়তে লাগল। এও কি সম্ভব?
অথচ শুধু সম্ভব নয়, নিরঙ্কুশভাবে সত্য।
এরপর আর একটি বাণিজ্য কাফেলা লুন্ঠিত হল। কাফেলার এক লোক এক লোটেরাকে শুধাল, তোমাদের কি সর্দার নেই।
সে এখন কোথায়?
তিনি এক নদী-তীরে নামাজ পড়ছেন।
এখন তো নামাজের সময় নয়।
উনি নফল নামাজ পড়ছেন।
তিনি খানাপিনা করেন কখন?
উনি দিনে রোজা রাখেন।
এখন তো রমযান নয়।
তা নয়। উনি নফল রোজা রাখেন।
দলপতির কাছে তাকে নিয়ে গেলে সে জিজ্ঞেস করে, আপনার নামাজ-রোজা ও দস্যুবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গতি কোথায়? তিনি বললেন, আল্লাহর কোরআন পড়েছ? সেখানে একটি আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দল নিজেদের পাপসমূহকে স্বীকার করল এবং পুণ্য কাজগুলোকে তার সঙ্গে মিশিয়ে দিল।
দস্যু প্রধানের কথাবার্তা শুনে বণিক অবাক হয়ে গেল।
অবাক হওয়ার কথাই বটে। অন্তরে আল্লাহর প্রতি অপরিমেয় অনুরক্তি। অথচ বাইরে দুর্ধর্ষ দস্যুবৃত্তি। একাধারে দরবেশ ও দস্যু।
এই বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্বটি হলেন ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (রঃ) । সে কালের এক সুবিখ্যাত সিদ্ধপুরুষ। সফলকাল সাধক।
লুটেরা দলের দলনেতা হিসাবেও তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। কাফেলার স্ত্রীলোক থাকলে তার ওপর হামলা না করার নির্দেশ ছিল তাঁর। কারও কাছে অল্প-স্বল্প টাকা থাকলে তা লুট করা হত না বা লুণ্ঠিত মালপত্রের একটা অংশ কাফেলা যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয়া হত।
প্রথম জীবনে তিনি এক নারীর প্রেমে পড়েন। লুটপাট করে যা কিছু পেতেন, তা সবই দিয়ে দিতেন তাঁকে। আবার মাঝে মাঝে তার কাছে গিয়ে কান্নাকাটিও করতেন। এক বিচিত্র-চরিত্রের মানুষ।
আল্লাহ পাকের অনুপম ইচ্ছায় একদিন আচমকা পরিবর্তন এল তাঁর মন-মানসিকতায়, চিন্তা ভাবনায়।
এক রাতে তিনি তাঁর তাঁবু থেকে শুনতে পেলেন এক কাফেলাযাত্রীর কোরআন আবৃত্তিঃ এখনও কি আল্লাহর স্মরণ দ্বারা ঈমানদারগণের হৃদয় সমূহকে ভীত ও জাগরিত করার সময় আসেনি? আয়াতটি শুনে অন্তরাত্না কেঁপে উঠল ফোজায়েল ইবনে আয়াজ (রঃ)-এর। বুকের তলায় বসে কে যেন বলে উঠল, রে দুরাত্না! এভাবে আর কতদিন লুটপাট চালিয়ে যাবি? ঢের হয়েছে, আর নয়। এবার তওবা করার সময় হয়েছে। কেননা, তোর পাপ এখন সীমা অতিক্রম করেছে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া