প্রতিজ্ঞা– শিশুতোষ গল্প

সেই ছোট বেলা থেকেই আমি খুব চঞ্চল স্বভাবের ছিলাম। সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতাম। লেখাপড়ার দিকে তেমন কোন মনযোগ ছিল না। মা-বাবা স্কুলে যাওয়ার কথা বললেই বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে চলে যেতাম। সারাদিন ডাংগুলি, গোল্লাছুট, ফুটবল, হা-ডু-ডু, কানামাছি, বৌছি খেলে দিন পার করতাম। তপ্ত রৌদের সময় মেঘনা নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে বন্ধুদের সাথে সাতার কেটে ছুয়াছুয়ি […]

জননী —- হাসান আজিজুল হক

কয়েক বছর আগে আমাদের ফ্ল্যাটবাড়িতে যে মেয়েটি কাজ খুঁজতে আসে, তার রূপ দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। চোদ্দ-পনেরো বছর বয়েস হবে তার, গায়ের রঙ ধপধপে ফর্সা, টানা টানা টলটলে বিশাল দুটি চোখ, ঈষৎ লম্বাটে মুখে টিকলো ছোটো নাক, তাতে শাদা পাথর বসানো এতটুকু একটা নাকফুল। আমার স্ত্রী তাকে জিগগেস করলেন, নাম কি তোর? আয়েশা। কাজ […]

গল্পঃ গোলাপ ফুলের গল্প

আমার মায়ের শখ বাগান করা। প্রতিদিন নিয়মমতো বাগানের ফুলগাছগুলোর তিনি যেভাবে যত্ন নিতেন তাতে মাঝে মাঝে মনে হত তিনি আমার মা না হয়ে এই গাছগুলোর মা হলে বেশি ভাল হত। আমাদের বাগানের গাছগুলোর মধ্যে লাল, গোলাপী,সাদা গোলাপ ছিল। এছাড়াও বেলী,হাসনাহেনা এবং আরও কিছু ফুল যার নাম আমি জানি না। এছাড়াও রক্তজবা, হলুদ জবা ছিল বাসার […]

হালালে হারাম

গাড়িগুলো বাড়ি ফিরছে পিচঢালা পথের বুক ছুয়ে পাখির মত উড়ে উড়ে ।পেছনের গাড়ির আলো যত দূর অতি সহজে চলে যায় ঠিক সেখানটাই অতিক্রম করা যেন গাড়ি গুলোর এক নেশা । ব্রিটেনের এই শহরটা সবসময় এতই চুপচাপ থাকে যে কয়েকটা খাল নালা তাদের বুকের পানি নিয়ে সারাক্ষন খেলা করেও চারদিক মুখর করে তুলতে পারে না । […]

শামসুরা এবং হতভাগ্য করিম মিয়ার গল্প

করিম মিয়ার পুত্র হইল। দাদী শখ কইরা নাম রাখল শামসুর রহমান। ডাকনাম শামসু। করিম মিয়া গরিব গ্রাম্য কৃষক, অভাবের অন্ত নাই। তার ভাঙ্গা ছনের ঘরে শামসুর মা রে নিয়া তার যুদ্ধ চলে অভাবের সাথে প্রতিনিয়ত। শামসু পড়াশোনায় ভাল। ক্লাস ফাইভের বৃত্তি সে পাইসে। করিম মিয়া শুরু করল অন্য স্বপ্ন দেখতে। সন্তান শিক্ষিত হবে, বিদ্যান হবে […]

লালসা

ওয়াজেদ সাহেবের মেজাজ আজ খুব ফুরফুরে ।মনের ভিতর উৎফুল্ল ভাব আজ পরীর সাথে দেখা হবে । আজ পরীর সাথে সারারাত এক অপার্থিব আনন্দে মেতে উঠতে পারবে । ৫০ বছর বয়সেও ২০ বছরের একটা তরুনীকে একান্তে পাওয়ার মজাই আলাদা। পরীকে পাওয়ার জন্য বেশ কায়দা করতে হয়েছে , একটু টাকা পয়সাও খরচ হয়েছে তাতে কি প্রেম ও […]

অদ্ভূত সকাল

বিয়ের অনুষ্ঠানে আকিব সচরাচর যায় না। হুই হুল্লোড় তার কাছে বিরক্তিকর লাগে। তবে ত্রপা আসতে বলেছে তাই এসেছে। ত্রপা কোন অনুরোধ করলে ফেলতে পারে না আকিব। আকিবের বন্ধু বান্ধব বেশি নাই। সে এক কোণায় দাঁড়িয়ে গেইট দিয়ে ঢোকা মানুষগুলোকে লক্ষ্য করছে। তার মনে বড় প্রশ্ন হিসাবে দেখা দিয়েছে, মানুষ এত সাজতে পারে কিভাবে! বেশিরভাগ মেয়েই […]

যাত্রা – বাসু আচার্য — পঞ্চম পর্ব

  “এক কাজ করলে পারিস তো,” সুরজিৎ গম্ভীর গলায় বলল। “কী করব?” জিজ্ঞাসু দৃষ্টি প্রজ্ঞার। “তোর শাশুড়িকে ফোন কর একটা,” বলেই চোখ টিপল সুরজিৎ। প্রজ্ঞা বিরক্তি-মাখানো গলায় বলল, “দেখ সুরজিৎ, তুই আমার বন্ধু, খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সব ব্যাপারে ইয়ার্কি মারবি। প্রায় একমাসের ওপর হয়ে গেল ওর কোনও খবর নেই…” […]

যাত্রা – বাসু আচার্য — চতুর্থ পর্ব

শংকরের চা বানানো দেখছিল বাবলু। পুরনো নারকেল তেলের টিন কেটে বানানো ছাঁকনির জাল দিয়ে কাঁচের গ্লাসে লালচে তরল গড়িয়ে পড়ছে। সেই ভোর থেকে শুরু করেছে, এখন শেষ বিকেল। একটু আগে দু-এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। মাটি আলতো ভিজে, সোঁদা গন্ধ উঠছে। রাস্তার ঝুলে-পড়া বৈদুতিক তারে জমে থাকা জলের ফোঁটাগুলো ব্যালকনিতে দাঁড়ানো ইস্কুল ছাত্রের মত নীচের […]

যাত্রা – বাসু আচার্য — তৃতীয় পর্ব

গত একমাস ধরে উত্তীয় এই গ্রামে আছে। দেখেছে, যা ও কখনও দেখেনি, শোনেওনি। যারা শুধু গালভারি পত্রিকায় বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেঁটে কৃষি উৎপাদনে পুঁজিবাদ এল কি এল না, বা ভারত রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের স্বরূপ ইত্যাদি নিয়ে চুলচেরা গবেষণা করে, তাদের প্রতি একটা অদ্ভুত ঘৃণা জেগে উঠছিল ওর মনে। Extortion আর exploitation, এই শব্দ দুটোর আসল মানে বোঝা […]

যাত্রা – বাসু আচার্য — দ্বিতীয় পর্ব

মহাবোধি সোসাইটির সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রজ্ঞা। ঘন ঘন চোখ চলে যাচ্ছে হাত-ঘড়ির দিকে। কখন যে আসবে লোকটা! এদেশে বিপ্লবটা হবে কী করে? যারা লড়াইয়ের ঠেকা নিয়েছে তাদের কোনও সময়জ্ঞানই নেই। সুরজিৎ-কে ডাকবে একবার? নাহ, লাভ নেই। নির্ঘাৎ ক্যান্টিনে বসে ফিলজফির ওই নতুন মেয়েটার সাথে বকর-বকর করছে। পারেও বটে! ও কী যেন একটা ইয়ার্কি […]

যাত্রা – বাসু আচার্য — প্রথম পর্ব

  বেশ কয়েক মাইল হেঁটে পূর্ব বিহারের এক প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছল উত্তীয়। তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পার্টির কৃষক-কমরেড সুদামা। বাংলা থেকে বিহার আসার সময় উচ্চতর নেতৃত্ব বলে দিয়েছে সে যেন কোনওভাবেই স্টেশন চত্ত্বর থেকে সিগারেট বা বিড়ি না কেনে, চা না খায়। গলা শুকিয়ে কাঠ। জলের বোতলটাও শেষ হওয়ার মুখে। মূল শহর থেকে গ্রাম […]

আলো আঁধারির ভূত

মানিক তখন ফরিদপুর জেলার পাংশা থানায় তার এক আত্মীয়ের বাড়ি লজিং থেকে পড়াশুনা করে। পাংশা স্কুলের শেষ বর্ষের ছাত্র। ভারত স্বাধীন হবার অল্প কিছুদিন পরের ঘটনা। তখন গ্রামে গঞ্জে বিজলি বাতি চালু হয়নি। মাটির পিদিম বা কুপি বাতির প্রচলনই বেশি তবে খুব খানদানি যারা তারা দুই এক ঘরে হারিকেন জ্বালায়। তখন কেউ টর্চ লাইট চিনতই […]

বেচারা

রিয়া একদৃষ্টিতে ওর বামহাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলির দিকে তাকিয়ে আছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে । এক ফোঁটা দুফোঁটা রক্ত ঝরে পড়ছে ওর কোলের ওপর। সেই কতক্ষন ধরে যাঁতির ভেতর হাত ঢুকিয়ে আঙ্গুল কেটে রক্ত বের করার চেষ্টা করছে ও। এতক্ষন চেষ্টার পর অবশেষে দুই তিনফোটা রক্ত বেরুল কনিষ্ঠাঙ্গুলি কেটে । আহা নরম পুষ্পকলির মত আঙ্গুলগুলো এখন প্রচন্ড […]

রুপালি মল — মো. আনোয়ার হোসেন

ভোরের আলোয় প্রথম যা নজরে পড়লো তা একটি রুপালি মল। এ নামটি বলাই হয়তো সংগত। মলটি আসলেই রুপার কিনা সে কথাও ভাবনায় এসেছে আনসার সাহেবের। গোড়ালি ছাড়িয়ে মলটি লুটিয়ে ছিল যে পায়ে তার আঙ্গুলগুলো সুন্দর। লাল নেইল পালিশ সরু ফর্সা আঙ্গুলগুলোকে আরো মোহনীয় করেছে। মাঝখানের দুটো আঙ্গুলে রুপালি আংটি। রমনা পার্কের লেক ঘেঁষা সিমেন্টের বেঞ্চে […]

নিশুতি

মেয়ের ঝলমলে জামাটার দিকে তাকিয়ে মন কেমন করে ওঠে মুকুলের। খুব খুশি হয়ে উঠেছে ওর পাঁচ বছরের মেয়েটা, জামাটার মতোই ঝলমল করছে ওর মুখটা। পিঁড়ির উপর বসে মেলায় কেনা আচারটা চেটেপুটে খাচ্ছে ও। এবার পূজোয় কিছু কিনবে না কিনবে না করেও মেয়ের জন্য এই জামাটা না কিনে পারেনি মুকুল, আর কারও জন্যই কিচ্ছুটি কেনেনি। আরতি […]

নিখোঁজ

ছবিজনের মাথাটা খারাপই হয়ে যাবে। আজ সকাল থেকে আদরীকে পাওয়া যাচ্ছে না। আদরী তার একমাত্র মেয়ে। মাটিতে উপুড় হয়ে বিলাপ করে ছবিজন। গতকাল মা-মেয়েতে তারা শুরী জসমতের বাড়িতে কাজ করেছে। বাড়ি ফিরেছিল সন্ধ্যার কিছু আগে। নলকূপে গোসল করে কলসি ভরে পানি এনেছিল আদরী। কিছুু দিন থেকে ছবিজনের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। পয়লা শীতের হাওয়া লেগে […]

কাউম্যান

গত দুই ঘণ্টা রাশাদ ‘গরুর’ রচনা লেখার চেষ্টা করছে। বাংলা বাড়ির কাজে বত্রিশটি বানান ভুল আবিষ্কার করার পর রাশাদের বাবা আফতাব সাহেব ছেলেকে ডেকে বলেছেন, ‘বত্রিশটা বানান ভুলের জন্য থাপড়ায়ে তোর বত্রিশ দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত। আফসোস তোর দাঁত বত্রিশটা না। মানুষ ইংরেজি, অঙ্কে দুর্বল হয় বলে শুনেছি। বাংলায় দুর্বল হয় কখনো শুনিনি। গরু কোথাকার!’ […]

মাংস পোড়া গন্ধ!!

কামরুল একটা খারাপ গালি দিয়ে উঠল । গালি দিয়েই জিহ্বায় একটা কামড় দিল । মনে মনে ঠিক করেছিল আজকে বাস চালানোর সময় কোন গালি দিবে না । বাঁ দিকের মহিলা যাত্রী গুলো কেমন বিব্রত চোখে তাকাচ্ছে । কেউ আবার এমন একটা ভাব করছে যেন কিছু শুনে নি । কামরুল নিজের উপর একটু বিরক্ত হল । […]

মগবাজারে কুকুরের ডাক !!

মিথিলা ওদের মগবাজারের ভাইয়ার বাসাতে বসে বসে টিভি দেখছিল ! এটা ওর ভাইয়ার গবেষনা কেন্দ্র ! কোন কাজ না থাকলেই ও এখানে চলে আসে । আজকেও এসেছিল সময় কাটানোর জন্য ! বেশ কিছুক্ষন ধরেই নিথিলা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছে ! একটু যেন অদ্ভুদ ! একবার মনে হল ওর মনে ভুল এমন টা হতে পারে না […]

কাজলের টিপে ‘নজর’ কাটানো

ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছি। সঙ্গে এক ভাবী ও ভাইঝি। মাঝপথে হঠাৎ খেয়াল করলাম, ভাইঝির কপালে এক মস্ত বড় টিপ। ৭/৮ মাসের শিশু হলেও, মেয়েতো- তাই প্রথমে ততটা অবাক হইনি। কিন্তু ভাল করে লক্ষ্য করতেই গলদটা ধরতে পারলাম। না, কপালের মাঝখানে নয়, ভাইঝির কপালের এক পামে অনেকটা থ্যাবড়ানো ভঙ্গিতে দেয়া হয়েছে। কালো কাজলের টিপ। সৌন্দর্য […]

জীবনের অঙ্ক ও কোকাকোলার গাড়ি

“মানুষের জীবন অঙ্কনির্ভর। জীবনের অঙ্ক ভুল হওয়া মানেই কর্মক্ষেত্রে বিপর্যটা ঘটা। যার জীবনের অঙ্ক যতো নির্ভুল তার জীবন ততো স্বচ্ছো ও নির্মল।” হাটখোলার মোড় থেকে প্রকাশিত দৈনিকটির একটি বিজ্ঞাপনের ভাষ্য থেকে ওপরের অংশটুকু নেয়া। বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ‘জীবনের অঙ্ক’। পাঠকরা ইতিমধ্যেই টের পেয়েছেন, এটি একজন জ্যোতিষ বাবাজির বিজ্ঞাপন। তিনি অভয় দিয়ে জানাচ্ছেন, যাদের জীবনের অঙ্ক মিলছে […]

রাসুর সাঁতার শেখা

প্রচণ্ড গরম পড়েছে। পুলক স্কুল থেকে বাড়িতে এল। বাড়িতে এসে স্কুলব্যাগটা টেবিলে রাখল। দ্রুত শার্ট-প্যান্ট পরিবর্তন করে দৌড়ে গেল পুকুর পাড়ে। দাঁড়িয়ে মনে মনে কী যেন ভাবল পুলক। তারপর ডিগবাজি দিয়ে নামল পুকুরে। পুলক ডুব দিচ্ছে আর বগের মতো মাথা লম্বা করে পাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখছে কেউ এল কি না। এর মধ্যেই পুকুরপাড়ে এসে হাজির […]

পলাশের ঘুড়ি

করতোয়া নদী। নদীতে নৌকা চলে। নদীর পাশে গ্রাম। গ্রামের নাম পাখিপুর। গ্রামটি সবুজে ভরা। মাঠে ধানখেত। রাস্তায় অনেক গাছ। গাছে পাখি বসা। অনেক রকমের পাখি। পলাশ পাখি দেখে। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। পলাশ পাখি দেখে বলল, ‘পাখি ভাইয়েরা। পাখি ভাইয়েরা। একটু উপকার করবে?’ গাছের ডাল নাড়ল। কে যেন বলল, ‘আমরা পাখি না। আমাদের পাখি বলছ কেন?’ […]

হাম্মামখানা –শামসুদ্দোহা চৌধুরী

প্যাচপেচে গরমে ঘামাচির মহোৎসব শরীরে। জ্যৈষ্ঠের রোদের ঝাঁজালো আগুনের পরশমণিতে হুল ফুটানো উৎসবে মেতে উঠছে প্রকৃতি। মেঘমুক্ত সুনীল আকাশ। শ্রান্তি হরণের জন্য বটচ্ছায়া আছে ঠিকই, কিন্তু প্যাচপেচে গরমের ক্লান্তি মুছে যাওয়ার জন্য একচিলতে ফুরফুরে বাতাসের বড্ড অভাব। সহসা বারি প্রস্রবণের চিহ্নটুকুও নেই। ঠিক এ সময়ে রক্তরোদ্রের বর্শাকে ফাঁকি দেয়ার জন্য আমি ও বাঁশমতি বেগম হন্যে […]

একটি অনুগল্প…

সত্যব্রত মাঝি। মাঝির পুরো নাম। সবার কাছে ও মাঝি বা মাঝিদা এসব নামেই পরিচিত। আজ উইক এন্ড। ও দেরী করে ঘুম থেকে ওঠেনা। জীবন টা শুরু করেছিল চাটারড ফার্মে কাজ দিয়ে। অনেক জাগায় ঘুরতে হয়েছে। ধরতে হয়েছে ভোরের ট্রেন। তাই সকালে ওঠা ওর বরাবরের অভ্যেস। আজ ও সকাল সকাল উঠে পড়েছে। আট টার মধ্যে স্নান […]

সত্যদাসের নব-জন্ম

সত্যদাস অমন হঠাৎ মারা যাওয়াতে প্রথমটা সকলের চমকে উঠেছিল বৈকি! সারা দেশ জুড়ে সে যেন এক বিরাট হৈ-চৈ শোর-গোল! আমাদের সেশের প্রান্তে সে দেশ,হিমালয়ের দক্ষিনে।নাম?নামটা না-ই বা শুনলে সে দেশের।ধরো,তাঁর নাম মিথ্যাপুর!হ্যাঁ এই নামই ভালো।কারণ,ওটা তো তাঁর সত্যিকারের নাম নয়,সবটাই যখন মিথ্যা তখন মিথ্যা যখন মিথ্যাপুরি ধরে নেওয়া যাক না।আর সে দেশের মানুষগুলো যখন অত […]

সাতরঙের দরোজা || উত্তম সেন

এখানে কী করে এলো সে! একেবারে অচেনা জায়গা। এর আগে কোনোদিন এসেছিল বলে মনে পড়ে না তার। তবে রঙগুলো খুব চেনা তার। রঙধনুর সাত রঙ। সাতটা দরোজাই খোলা। প্রত্যেক খোলা দরোজার ভেতর থেকে সাত রকমের আলোর দ্যুতি বেরুচ্ছে। কোথাও কোনো সাড়া-শব্দ নেই। এবার আরেকটু সামনে এগিয়ে গেল ছেলেটা; একেবারে সাত দরোজার সামনে। প্রথমেই সে এসে […]

বাদল বরিষনে-কাজী নজরুল ইসলাম-দ্বিতীয় অংশ

[চির-জনমের ছাড়াছাড়ি] তার পর-বছরের কথা। কাজরিয়ার সঙ্গে আবার আমার দেখা হল মির্জাপুরের পাহাড়ের বুকে বিরহী নামক উপত্যকায়। সেদিন ছিল ভাদ্রের কৃষ্ণা-তৃতীয়া। সেদিনও মেঘে আঁধারে কোলাকুলি করছিল। সেদিন ছিল কাজরি উৎসবের শেষ দিন। সেদিন বাদল মেঘ ধানের খেতে তার শেষ বিদায়-বাণী শোনাচ্ছিল, আর নবীন ধানও তার মঞ্জরি দুলিয়ে কেঁপে কেঁপে বাদলকে তার শেষ অভিনন্দন জানাচ্ছিল। হায়, […]

বাদল বরিষনে-কাজী নজরুল ইসলাম-প্রথম অংশ

[এক নিমেষের চেনা] বৃষ্টির ঝম-ঝমানি শুনতে শুনতে সহসা আমার মনে হল, আমার বেদনা এই বর্ষার সুরে বাঁধা!… সামনে আমার গভীর বন। সেই বনে ময়ূরে পেখম ধরেছে, মাথার উপর বলাকা উড়ে যাচ্ছে, ফোটা কদম ফুলে কার শিহরণ কাঁটা দিয়ে উঠছে, আর কীসের ঘন-মাতাল-করা সুরভিতে নেশা হয়ে সারা বনের গা টলছে!… এটা শ্রাবণ মাস, না? – আহা, […]

হেনা-কাজী নজরুল ইসলাম

ভার্দুন ট্রেঞ্চ, ফ্রান্স ওঃ! কী আগুন-বৃষ্টি! আর কী তার ভয়ানক শব্দ! – গুড়ুম – দ্রুম – দ্রুম! – আকাশের একটুও নীল দেখা যাচ্ছে না, যেন সমস্ত আশমান জুড়ে আগুন লেগে গেছে! গোলা আর বোমা ফেটে ফেটে আগুনের ফিনকি এত ঘন বৃষ্টি হচ্ছে যে, অত ঘন যদি জল ঝরত আসমানের নীলচক্ষু বেয়ে, তা হলে এক দিনেই […]

সয়ফুল-মুলকের কথা-কাজী নজরুল ইসলাম

আমি সেই শয়তান, আমি সেই পাপী, যে এক দেবীকে বিপথে চালিয়েছিল। – ভাবলুম, এই ভুবনব্যাপী যুদ্ধে যে-কোনো দিকে যোগ দিয়ে যত শিগগির পারি এই পাপ-জীবনের অবসান করে দিই। তারপর? তারপর আর কী? যা সব পাপীদের হয়, আমারও হবে। পাপী যদি সাজা পায়, তা হলে সে এই বলে শান্তি পায় যে তার উপর অবিচার করা হচ্ছে […]

মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া

যুবকের তিনটি চিঠি আমদের হাতে। প্রথম চিঠিটি তার মায়ের কাছে। সম্ভবত তখন প্রশিক্ষনের সবেমাত্র শুরু। যুবকের বিহ্বলতা। মা/ তোমাকে সশস্ত্র সালাম। এখানে এসে এই নতুন রকমে সালাম দেওয়া বেশ কায়দা করে শিখছি। সকাল বিকাল মাথা উচু ,শিরদাড়া সোজা আর সিনা টান করে কুচকাওয়াজ করে চলেছি। একবার ডান পা তুলছি আর একবার বাম পা। মাটির উপর […]

চুলার ওপর টাকা (আফগানিস্তানের রূপকথা)

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক ছিল কৃষক। খুবই সৎ আর আল্লাহভীরু লোক ছিল সে। কিন্তু কিছুতেই সে তার সংসারের অবস্থার উন্নতি করতে পারছিল না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতো। প্রতিটা পয়সা হিসাব করে খরচ করতো। কিন্তু তুবও দেখা যেত, একটা পয়সাও সে জমাতে পারছে না। সারাজীবন […]

ইমামসাহেব — নীহারুল ইসলাম

রশিদ মেম্বারের কাছে শোনার পরও খবরটা বিশ্বাস হয় না আত্তাব মৌলবীর। সরকার নাকি ইমামদের মাসে মাসে ভাতা দেবে! বাপ জন্মে কেউ কখনো শুনেছে এমন কথা? রশিদ মেম্বার রাজনীতি করে। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। সেই কারণে যত সব ভুজুং ভাজুং কথা বলে হয়ত তাকে হাতে রাখতে চাইছে। স্বভাবতই সে রশিদ মেম্বারের কথার পাত্তা দিচ্ছে না। আনাকানি দিচ্ছে। […]

আপদ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রথম অংশ

সন্ধ্যার দিকে ঝড় ক্রমশ প্রবল হইতে লাগিল। বৃষ্টির ঝাপট, বজ্রের শব্দ এবং বিদ্যুতের ঝিক্‌মিকিতে আকাশে যেন সুরাসুরের যুদ্ধ বাধিয়া গেল। কালো কালো মেঘগুলো মহাপ্রলয়ের জয়পতাকার মতো দিগ্বিদিকে উড়িতে আরম্ভ করিল, গঙ্গার এ পারে ও পারে বিদ্রোহী ঢেউগুলো কলশব্দে নৃত্য জুড়িয়া দিল, এবং বাগানের বড়ো বড়ো গাছগুলো সমস্ত শাখা ঝট্পট্ করিয়া হাহুতাশসহকারে দক্ষিণে বামে লুটোপুটি করিতে […]

অধ্যাপক-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রথম পরিচ্ছেদ

কলেজে আমার সহপাঠীসম্প্রদায়ের মধ্যে আমার একটু বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল। সকলেই আমাকে সকল বিষয়েই সমজদার বলিয়া মনে করিত। ইহার প্রধান কারণ, ভুল হউক আর ঠিক হউক সকল বিষয়েই আমার একটা মতামত ছিল। অধিকাংশ লোকই হাঁ এবং না জোর করিয়া বলিতে পারে না, আমি সেটা খুব বলিতাম। কেবল যে আমি মতামত লইয়া ছিলাম তাহা নহে, নিজেও রচনা […]

মহান পূজারী— সীমা ব্যানার্জী

“হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন” –জয়। -কি গিফট এনেছো মা আমার জন্য। -বাইরে ভীষণ স্নো পড়ছে সোনা। চারিদিকে চেয়ে দেখো শুধু দুধ সাদা বরফ। গাছ, রাস্তা, বাড়ী সব শুধু সাদা বরফে সেজেছে। এসো আজ আমি তোমাকে সেই মহান পূজারী ভ্যালেন্টাইন এর গল্প বলব। যাঁর জন্য এই দিনটা এত সুন্দর, এত লাল ফুল, বেলুন-এর ছড়াছড়ি। সব দেশে এই দিনটা […]

ছোট্ট তানিশা

ছোট্ট তানিশা, আজ খুব খুশি । আজ সে তার বাবা মায়ের সঙ্গে শপিং করতে যাবে, তার জন্য জামা কিনতে;কল্পনার জামা! ঈদ কিংবা পুজোর জন্য নয়।নিতান্তপক্ষে মনের খায়েশ পূরণের জন্য। রূপকথার গল্পে পরীরা যেমন জামা পড়ে ঠিক তেমন জামা কিনতে। ছোট্ট তানিশা ধনী বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যাসন্তান।তাঁর এতটুকুন জীবনে কোনকিছুর কমতি নেই;কিন্তু নিজের বাবা-মায়ের আদরটাই খুঁজে পায়না […]

মৃন্ময় চক্রবর্তী’র গল্প : বুনো সর্দার

ভাঙা সাইকেল লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছে। মাটির রাস্তায় বড় বড় খাদ, গর্ত। শীতের দুপুর বাজবরনতলায় কুড়ি পয়সা দিয়ে খাল পেরোলাম, সাইকেল কাঁধে তুলে। বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো পার হওয়া চাট্টিখানি কথা! পা হড়কালেই পচা পাঁকের খালে সটান গিঁথে যেতে হবে। যাব কাঁঠালতলা মদনপুর। সেই দুপুর থেকে ঠিকানা খুঁজছি। এই অঞ্চলে যে কত কাঁঠালতলা কত মদনপুর আছে ঈশ্বর […]

ব্যাখ্যান

তারপর রোদের তেজ আরও একটু বাড়লে পরেই ব্যা ফিরত ঘরে। ওর মা শ্রীমতী ব্যা-মা কচি ঘাসের আর কাঁঠাল পাতার প্রাতরাশ তৈরি করে রাখতেন ওর জন্য। ব্যা ঝর্নার জলে একটা ঝপঝপ পরিস্কার স্নান সেরে, মা-এর হাতে কাটা প্রাতরাশ খেত গব গব করে। তারপর চলে যেত – – – । ব্যা-জার পণ্ডিতের আখড়ায়। সেখানে ব্যা-কার ছাড়াও আরও […]

পার্কে এক সন্ধ্যায়

বেশ কিছুক্ষণ ধরে হাঁটছি আমরা—আমি আর আমার পাশের অ্যাপার্টমেন্টের আমিন সাহেব। আমরা দুজনেই অবসরভোগী। তাই স্বাস্থ্যরক্ষার তাগিদে এবং ডাক্তারের পরামর্শে দুজনে সন্ধ্যাবেলা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স থেকে সামান্য কিছু দূরের এই পার্কে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি। আমিন সাহেব বিপত্নীক। শিক্ষকতা করতেন মফস্বলের এক শহরে। অবসর নেওয়ার পর দেশের বাড়িতে একাই থাকতেন। সম্প্রতি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর ব্যবসায়ী […]

সদর ও অন্দর-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিপিনকিশোর ধনীগৃহে জন্মিয়াছিলেন, সেইজন্যে ধন যে পরিমাণে ব্যয় করিতে জানিতেন তাহার অর্ধেক পরিমাণেও উপার্জন করিতে শেখেন নাই। সুতরাং যে গৃহে জন্ম সে গৃহে দীর্ঘকাল বাস করা ঘটিল না। সুন্দর সুকুমারমূর্তি তরুণ যুবক, গানবাজনায় সিদ্ধহস্ত, কাজকর্মে নিরতিশয় অপটু; সংসারের পক্ষে সম্পূর্ণ অনাবশ্যক। জীবনযাত্রার পক্ষে জগন্নাথদেবের রথের মতো অচল; যেরূপ বিপুল আয়োজনে চলিতে পারেন সেরূপ আয়োজন সম্প্রতি […]

আমার যতো ইচ্ছে |

কিছুই ভালো লাগে না, মনে হয় লেখাপড়ার নামে সবাই আমাকে বন্দি করে রেখেছে। মা বলেন, ‘জন্মের পর ১২ বছর কেটেছে তোমার হাসতে খেলতে আনন্দ করতে করতে। সামনের ১২টা বছর তোমাকে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। ভালো ভালো রেজাল্ট আনতে হবে। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে। ভালো পদবিতে চাকরি করতে হবে।’ আমার শুধু ইচ্ছে করে একটা মাঠে একা […]

এবং একদিন | তাজনীন মুন

‘-মা, এমা,  দেইখা যাও আব্বায় আইজ কত্তো বাজার পাঠাইছে। সুগন্ধি চাইল রান্তে কইছে আইজ। রমিলা কিছু জমানো টাকায় কয়েকটা নারিকেল কিনেছিলো -ছেলে নাড়ু খেতে খুব পছন্দ করে ।নারিকেল কোড়ানোর মধ্যেই ছেলের ডাক শুনে ছুট্টে এলো আর এতো বাজার দেখে নিজের উত্তেজনা চেপে মুখে বিরক্তি ভাব এনে বললো-” তোর বাপ কি জমিদারের প্যাটের থিকা আইছিলো, নাকি […]

অপরিচিতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-১ম খন্ড

আজ আমার বয়স সাতাশ মাত্র। এ জীবনটা না দৈর্ঘ্যের হিসাবে বড়ো, না গুণের হিসাবে। তবু ইহার একটু বিশেষ মূল্য আছে। ইহা সেই ফুলের মতো যাহার বুকের উপরে ভ্রমর আসিয়া বসিয়াছিল, এবং সেই পদক্ষেপের ইতিহাস তাহার জীবনের মাঝখানে ফলের মতো গুটি ধরিয়া উঠিয়াছে। সেই ইতিহাসটুকু আকারে ছোটো, তাহাকে ছোটো করিয়াই লিখিব। ছোটোকে যাঁহারা সামান্য বলিয়া ভুল […]

অপরিচিতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-২য় খন্ড

শম্ভুনাথবাবু আমার দিকে চাহিয়া কহিলেন, “সেই কথা তবে ঠিক? উনি যা বলিবেন তাই হইবে? এ সম্বন্ধে তোমার কিছুই বলিবার নাই? ” আমি একটু ঘাড়-নাড়ার ইঙ্গিতে জানাইলাম, এ-সব কথায় আমার সম্পূর্ণ অনধিকার। “আচ্ছা তবে বোসো, মেয়ের গা হইতে সমস্ত গহনা খুলিয়া আনিতেছি।” এই বলিয়া তিনি উঠিলেন। মামা বলিলেন, “অনুপম এখানে কী করিবে। ও সভায় গিয়া বসুক।” […]

ইচ্ছাপূরণ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-১ম পাঠ

সুবলচন্দ্রের ছেলেটির নাম সুশীলচন্দ্র । কিন্তু সকল সময়ে নামের মতো মানুষটি হয় না । সেইজন্যই সুবলচন্দ্র কিছু দুর্বল ছিলেন এবং সুশীলচন্দ্র বড়ো শান্ত ছিলেন না । ছেলেটি পাড়াসুদ্ধ লোককে অস্থির করিয়া বেড়াইত , সেইজন্য বাপ মাঝে মাঝে শাসন করিতে ছুটিতেন ; কিন্তু বাপের পায়ে ছিল বাত , আর ছেলেটি হরিণের মতো দৌড়িতে পারিত ; কাজেই […]

অপরিচিতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-তৃতীয় খন্ড

চাপাইয়া দেয় নাই। ইহার গতি সহজ, দীপ্তি নির্মল, সৌন্দর্যের শুচিতা অপূর্ব, ইহার কোনো জায়গায় কিছু জড়িমা নাই। আমি দেখিতেছি, বিস্তারিত করিয়া কিছু বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। এমন-কি, সে যে কী রঙের কাপড় কেমন করিয়া পরিয়াছিল তাহাও ঠিক করিয়া বলিতে পারিব না। এটা খুব সত্য যে, তার বেশে ভূষায় এমন কিছুই ছিল না যেটা তাহাকে ছাড়াইয়া […]

রস

কার্তিকের মাঝামাঝি চৌধুরীদের খেজুর বাগান ঝুরতে শুরু করল মোতালেফ। তারপর দিন পনের যেতে না যেতেই নিকা করে নিয়ে এলো পাশের বাড়ির রাজেক মৃধার বিধবা স্ত্রী মাজু খাতুনকে। পাড়া-পড়শি সবাই তো অবাক। এই অবশ্য প্রথম সংসার নয় মোতালেফের। এর আগের বউ বছরখানেক আগে মারা গেছে। তবু পঁচিশ-ছাবি্বশ বছরের জোয়ান পুরুষ মোতালেফ। আর মাজু খাতুন ত্রিশে না […]

দুঃখিত!!