বড় বাজার — বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

প্রসন্ন গোয়ালিনীর সঙ্গে আমার চিরবিচ্ছেদের সম্ভাবনা দেখিতেছি। আমি নসীরাম বাবুর গৃহে আসিয়া অবধি তাহার নিকট ক্ষীর, সর, দধি দুগ্ধ এবং নবনীত খাইতেছি। আহারকালে মনে করিতাম, প্রসন্ন কেবল পরলোকে সদ্গতির কামনায় অনন্ত পুণ্য সঞ্চয় করিতেছে-; জানিতাম, সংসারারণ্যে যাহারা পুণ্যরূপ মৃগ ধরিবার জন্য ফাঁদ পাতিয়া বেড়ায়, প্রসন্ন তন্মধ্যে সুচতুরা; ভোজনান্তে নিত্যই প্রসন্নের পরকালে অক্ষয় স্বর্গ; এবং ইহকালে … বিস্তারিত পড়ুন

আমার দুর্গোৎসব—–বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

সপ্তমীপূজার দিন কে আমাকে এত আফিঙ্গ চড়াইতে বলিল! আমি কেন আফিঙ্গ খাইলাম! আমি কেন প্রতিমা দেখিতে গেলাম! যাহা কখন দেখিব না, তাহা কেন দেখিলাম! এ কুহক কে দেখাইল! দেখিলাম-অকস্মাৎ কালের স্রোত, দিগন্ত ব্যাপিয়া প্রবলবেগে ছুটিতেছে-আমি ভেলায় চড়িয়া ভাসিয়া যাইতেছি। দেখিলাম-অনন্ত, অকূল, অন্ধকারে, ব্যাত্যাবিক্ষুব্ধ তরঙ্গসঙ্কুল সেই স্রোত-মধ্যে মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্রগণ উদয় হইতেছে, নিবিতেছে-আবার উঠিতেছে। আমি নিতান্ত … বিস্তারিত পড়ুন

একটি গীত —– বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

“শোন্ প্রসন্ন, তোকে একটি গীত শুনাইব।”প্রসন্ন গোয়ালিনী বলিল, “আমার এখন গান শুনিবার সময় নয়-দুধ যোগাবার বেলা হলো।” কমলাকান্ত। “এসো এসো বঁধু এসো।” প্রসন্ন। “ছি ছি ছি! আমি কি তোমার বঁধু?” কমলাকান্ত। “বালাই! ষাট, তুমি কেন বঁধু হইতে যাইবে? আমার গীতে আছে”- এসো এসো বঁধু এসো আধ আঁচরে বসো- সুর করিয়া আমি কীর্ত্তন ধরাতে প্রসন্ন দুধের … বিস্তারিত পড়ুন

বিড়াল—- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

আমি শয়নগৃহে, চারপায়ীর উপর বসিয়া, হুঁকা হাতে ঝিমাইতেছিলাম। একটু মিট্ মিট্ করিয়া ক্ষুদ্র আলো জ্বলিতেছে-দেয়ালের উপর চঞ্চল ছায়া, প্রেতবৎ নাচিতেছে। আহার প্রস্তুত হয় নাই-এজন্য হুঁকা হাতে, নিমীলিতলোচনে আমি ভাবিতেছিলাম যে, আমি যদি নেপোলিয়ন্ হইতাম, তবে ওয়াটার্লু জিতিতে পারিতাম কি না। এমত সময়ে একটি ক্ষুদ্র শব্দ হইল, “মেও!” চাহিয়া দেখিলাম-হঠাৎ কিছু বুঝিতে পারিলাম না। প্রথমে মনে … বিস্তারিত পড়ুন

ঢেঁকি—- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

আমি ভাবি কি, যদি পৃথিবীতে ঢেঁকি না থাকিত, তবে খাইতাম কি? পাখীর মত দাঁড়ে বসিয়া ধান খাইতাম? না লাঙ্গুলকর্ণদুল্যমানা গজেন্দ্রগামিনী গাভীর মত মরাইয়ে মুখ দিতাম? নিশ্চয় তাহা আমি, পারিতাম না। নবযুবা কৃষ্ণকায় বস্ত্রশূন্য কৃষাণ আসিয়া আমার পঞ্জরে যষ্টিপাত করিত, আর আমি ফোঁস্ করিয়া নিঃশ্বাস ফেলিয়া শৃঙ্গ লাঙ্গুল লইয়া পলাইতাম। আর্য্যসভ্যতার অনন্ত মহিমায় সে ভয় নাই-ঢেঁকি … বিস্তারিত পড়ুন

কমলাকান্তের পত্র—পলিটিক্‌স্—– বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শ্রীচরণেষু, আফিঙ্গ পাইয়াছি। অনেকটা আফিঙ্গ পাঠাইয়াছেন- শ্রীচরণকমলেষু। আপনার শ্রীচরণকমলযুগলেষু-আরও কিছু আফিঙ্গ পাঠাইবেন। কিন্তু শ্রীচরণকমলযুগল হইতে কমলাকান্তের প্রতি এমন কঠিন আজ্ঞা কি জন্য হইয়াছে, বুঝিতে পারিলাম না। আপনি লিখিয়াছেন যে, এক্ষণে নয় আইনে অন্যত্র কিছু পলিটিক্‌স্ কম পড়িবে-তুমি কিছু পলিটিক্‌স্ ঝাড়িলে ভাল হয়। কেন মহাশয়? আমি কি দোষ করিয়াছি যে পলিটিক্‌স্ সব্জেক্টরূপী ঝামা ইট মাথায় মারিব? … বিস্তারিত পড়ুন

হনূমাদ্বাবুসংবাদ—– বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

কদা প্রাতঃসূর্য্যকিরণোদ্ভাসিত কদলীকুঞ্জে শ্রীমান্ হনূমান বায়ু সেবনার্থ পরিভ্রমণ করিতেছিলেন। তাঁহার পরম রমনীয় লাঙ্গুলবল্লী চক্রে চক্রে কুণ্ডলীকৃত হইয়া কখন পৃষ্ঠে, কখন স্কন্ধে, কখন বৃক্ষশাখায় শোভিত হইতেছিল। চারি পাশে মর্ত্তমান, চাঁপা, কাঁঠালি প্রভৃতি নানাজাতীয় সুপক্ক এবং অপক্ক রম্ভা বৃক্ষ হইতে থরে থরে, কাঁদিতে কাঁদিতে শোভা পাইয়া সুগন্ধে দিক্ আমোদিত করিয়াছিল। বীরবর, কখন কোন গাছ হইতে এক আধটা … বিস্তারিত পড়ুন

কমলাকান্তের পত্র—বাঙ্গালীর মনুষ্যত্ব—– বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

মহাশয়! আপনাকে পত্র লিখিব কি-লিখিবার অনেক অনেক শত্রু। আমি এখন যে কুঁড়ে ঘরে বাস করি, দুর্ভাগ্যবশতঃ তাহার পাশে গোটা দুই তিন ফুলগাছ পুঁতিয়াছি। মনে করিয়াছিলাম, কমলাকান্তের কেহ নাই-এই ফুলগুলি আমার সখা সখী হইবে। খোশামোদ করিয়া ইহাদের ফুটাইতে হইবে না-টাকা ছড়াইতে হইবে না, গহনা দিতে হইবে না, মনযোগান গোছ কথা বলিতে হইবে না, আপনার সুখে উহারা … বিস্তারিত পড়ুন

পাঠশালার পণ্ডিত মহাশয়—বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

টিপ্ টিপ্ করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছে; আমি ছাতি মাথায়, গ্রাম্য পথ দিয়া হাঁটিতেছি। বৃষ্টিটা একটু চাপিয়া আসিল। তখন পথের ধারে একখানা আটচালা দেখিয়া, তাহার পরচালার নীচে আশ্রয় লইলাম। দেখিলাম, ভিতরে কতকগুলি ছেলে বই হাতে বসিয়া পড়িতেছে। একজন পণ্ডিত মহাশয় বাঙ্গালা পড়াইতেছেন। কাণ পাতিয়া একটু পড়ানটা শুনিলাম। দেখিলাম, পণ্ডিত মহাশয়ের ব্যাকরণের উপর বড় অনুরাগ। একটু উদাহরণ দিতেছি। … বিস্তারিত পড়ুন

কমলাকান্তের পত্র—বুড়া বয়সের কথা—– বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

সম্পাদক মহাশয়! আফিঙ্গ পৌঁছে নাই, বড় কষ্ট গিয়াছে। আজ যাহা লিখিলাম, তাহা বিস্ফারিত লোচনে লেখা। নিজ বুদ্ধিতে, অহিফেন প্রসাদাৎ নহে। একটা মনের দুঃখের কথা লিখিব। বুড়া বয়সের কথা লিখিব! লিখি লিখি মনে করিতেছি, কিন্তু লিখিতে পারিতেছি না। হইতে পারে যে, এই নিদারুণ কথা আমার কাছে বড় প্রিয়,-আপনার মর্ম্মান্তিক দুঃখের পরিচয় আপনার কাছে বড় মিষ্ট লাগে, … বিস্তারিত পড়ুন

দুঃখিত!