Categories রূপকথা

একটি ছোট্ট রূপকথার গল্প

অনেক অনেক বছর আগের কথা ! দুর দেশে এক জমিদার বাস করতো ! তার নাম লীগেরশ্বর ! জমিদার লীগেশ্বরের ছিল বিস্তার প্রভাব প্রতিপত্তি ! নিজ এলাকায় তার ব্যাপক ক্ষমতা ছিল ! পাইক পেয়াডা নিয়ে সে গ্রামের এক পাশে বসবাস করতো ! গ্রামের অন্য প্রান্তে আরেক জমিদার বাস করতো ! তার নাম ছিল জাতিশ্বর । তারও ক্ষমতা কম ছিল না ! কিন্তু জমিদার লীগেরশ্বরের মত এতো না । তবে তাকেও খাটো করে দেখার কোন বিষয় না ! সেও ছিল জমিদার । সেও পাইক পেয়াডা নিয়ে গ্রামের আরেক প্রান্ত বসবাস করত ! দুই জমিদারের ভিতর ছিল ব্যাপক দ্বন্দ্ব ! কেউ কাউকে দেখতে পারতো না ! দুজনেই চাইতো দুজনার ক্ষতি করতে ! তাদের পাইক পেয়াডাও থাকতো এই বাহানায় কখন ক্ষতি করা যায় ! উল্লেখ করার মত গ্রামে আর লোক ছিল ! তবে সে কোন জমিদার ছিল না । তবে তার প্রভাব কম ছিল না ।

সে অনেক সুন্দর গল্প বানাতে পারতো ! মিথ্যা গল্প ! মানুষের নামে মিথ্যা রটনা রটাতো সে ! এমন ভাবে বলতো কথা গুলো যে সবাই বিশ্বাস করতো ! তার নাম ছিল মতিচুর ! জমিদার লীগেরশ্বর মতিচুরকে বিশেষ প্রশ্রয় দিয়ে রেখেছিল ! তার অবশ্য কারনও ছিল ! সুযোগ পেলেই মতিচুর জমিদার জাতিশ্বরের নামে আকুথা কুকথা ছড়াতো ! তার সব যে মিথ্যা তা কিন্তু না । কিছু মিথ্যা আবার কিছু সত্য কথা ! যার ফলে মানুষ সহজেই মতিচুরের কথা বিশ্বাস করে নিত । সবাই জমিদার জাতিশ্বরকে ছিঃছিঃ করতো ! তবে গ্রামের কেউ কেউ আবার মতিচুরের এই সত্য মিথ্যার খেল ঠিকই জানতো ! তারা জমিদার লীগেরশ্বরের কাছে এসে বিচার দিতো ! বলত -জমিদার সাহেব মতিচুর তো মিথ্যা কথা বলতেছে ।

আপনি কিছু একটা করেন ! ওকে গ্রাম ছাড়া করুন ! জমিদার লীগেরশ্বর উত্তেজিত গলায় বলতো -আবে শালা ঘেচু ! দুচারটে মিথ্যে কথাই তো বলেছে ! আর তো কিছু করে নি ! এতো চিৎকার চেঁচামিচি কি আছে ! এই ভাবেই দিন চলতে লাগলো ! জামিদার জাতিশ্বরের পাইক পেয়াডারা মতিচুরকে একটুও দেখতে পারতো না ! কথায় কথায় তাকে গাল দিল ! এদিকে জমিদার লীগেরশ্বরের পাইক পেয়াডারা যখন গ্রামের ভিতর ঘুরে বেড়াতো জাতিশ্বরের কাউকে দেখলেই টিটকারি মারতো ! মতিচুর ছড়ানো সত্য মিথ্যা মিলিয়ে তাদের সাথে তর্ক করত ! তাদেরকে গালি দিতো ! জাতিশ্বরের লোকেরাও কম যায় না ! তারা মতিচুর কে লীগেরশ্বরের দালাল বলে গালাগাল করতো ! এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল ! গ্রামের মানুষ মতিচুরের কথা শুনতে লাগলো !

পেছন দিয়ে ক্ষমতাধর জমিদারও কিছু বলতো না মতিচুরকে ! মতিচুর এবার যে কারো বিরুদ্ধেই কথা বলতে শুরু করলো ! এবার একদিন কি হল মতিচুর জমিদার লীগেরশ্বরের নামে কথা ছড়ালো ! আর যায় কোথায় ! লীগেরশ্বরের পাইক পেয়াডারা উঠে পড়ে লেগে গেল মতিচুরের বিরুদ্ধে ! সবার কাছে বলে বেড়াতে লাগলো মতিচুর একটা ভন্ড ! শয়তান ! কেউ যেন তার কথা না শোনে ! গ্রামে মিটিং ডাকা হল ! জমিদার লীগেরশ্বর সেই মিটিংয়ের প্রধান ! সে মতিচুর কে গ্রাম ছাড়া করার কথা বলল ! তারপর এতো দিন ধরে মতিচুর যেই সব অপকর্ম জানা সত্ত্বেরও জমিদার চুপ ছিল সেই অপকর্ম গুলো মানুষের সামনে তার একটা ফিরিস্তি দিতে শুরু করলো ! বলল বেটা খুব খ্রাপ ! খুব খ্রাপ ! বেটাকে বর্জন কর !

বেটা কেবল মিথ্যা কথা বলে বেড়ায় ! বেটা কে গ্রাম ছাড়া কর ! গ্রামের সেই লোক গুলো যারা আগেই জানতো মতিচুর আগে থেকেই এমন তারা উঠে দাড়িয়ে বলল -হুজুর ! মতিচুর তো কেবল মিথ্যাই বলেছে ! আর তো কিছু করে নি ! ওকে গ্রাম ছাড়া করবেন কেন ! মোরালঃ চোর কে প্রথম চুরির সময়ই ধরা উচিৎ ! অন্যের ঘরে চুরি করে এইটা জানা সত্ত্বেও চোর কে প্রশ্রয় দিলে সেই চোরই একদিন আপনার ঘরের সিধ কাটবে ! বিঃদ্রঃ ইহা কেবলই একটা রূপকথার গল্প ! বর্তমান কালের কোন ঘটনার সাথে কোন প্রকার মিলে গেলে লেখককে কিছুতেই এবং কোন ভাবেই দায়ী করা যাবে না !

আরো পড়তে পারেন...

লামা ভিক্ষুর ভৃত্য — তিব্বতের লোককাহিনী

তিব্বতের নির্জন একটি পাহাড়ের উপর থাকত এক বুড়ো লামা। ” তিনি ধর্ম-সাধনা করে পবিত্র জীবনযাপন…

জঙ্গলের মধ্যে রন্তপুরী

আশ্বিনের ভোঁর।বিশাল ঠাকুরাণ নদীর ঢেউয়ের মাথায় দোল খেতে খেতে দুলকি তালে চলেছে বনদপ্তরের ছোট এক…

শিয়াল পণ্ডিত–উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

কুমির দেখলে, সে শিয়ালের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না। তখন ভাবলে, ‘ ও ঢের লেখাপড়া…