
মুড়ির সঙ্গে জিলাপি খাবো নাকি খাবো না, এই নিয়ে তো ভয়ংকর তুফান এখন ফেসবুক জুড়ে। আজকে চলুন এই জিলাপি নিয়েই পেচাল পাড়ি!
মুড়ির সাথে জিলাপি মাখানো হবে নাকি হবে না—এই নিয়ে যে এমন মহাযুদ্ধ বেধে যাবে, কে জানতো!এখন দুই দলে ভাগ হয়ে গেছে লোকে—একদল বলে, “ভাই, জিলাপির চিনি আর মুড়ির ক্রাঞ্চি কম্বিনেশন স্বর্গীয়!” আরেক দল বলছে, “এটা আবার কোনো খাবার হলো? জিলাপি আলাদা, মুড়ি আলাদা—এগুলো মিশিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে কেন?” অনেক তো ক্যাচাল হলো,এখন তাহলে আলোকপাত করা যাক জিলাপি নিয়ে।জিলাপি আসলে কেমন হবে স্বাস্থ্যের জন্য? খাওয়া উচিত হবে নাকি না? দেখবো কোন দল স্কোরে জিতে থাকে।
ক্ষতিকর হাইড্রোজে সুস্বাদু জিলাপি!
জিলাপিতে হাইড্রোজিনেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহারের কারণ মূলত কিছু প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং খাবারের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা।কেন জিলাপিতে হাইড্রোজিনেটেড ফ্যাট ব্যবহার করা হয়?
টেক্সচার এবং ক্রাঞ্চি: হাইড্রোজিনেটেড ফ্যাট খাবারের টেক্সচার এবং ক্রাঞ্চি বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে জিলাপির মতো মিষ্টি খাবারে এটি প্রয়োজনীয় এক কোটা তৈরি করতে সাহায্য করে। জিলাপি আরও খাস্তা এবং সুন্দরভাবে ভাজা হয়।
স্থিতিশীলতা ও স্টোরেজ: হাইড্রোজিনেটেড ফ্যাট খাবারের স্থায়িত্ব বাড়ায়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে খাবারের গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং খাবারের প্রক্রিয়াজাতকরণের পরেও এটি তাজা রাখতে সাহায্য করে। জিলাপির মতো মিষ্টি খাবারে এই ধরনের তেল ব্যবহারের ফলে তা বেশি দিন ভালো থাকে এবং গন্ধ হারায় না।
তেলের দাম এবং সাশ্রয়ী: সস্তা তেল, যেমন পাম তেল বা সোয়াবিন তেল, হাইড্রোজিনেটেড বা ট্রান্স ফ্যাটে পরিণত করা হয়, যা উৎপাদনে সস্তা এবং অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। এর ফলে জিলাপি এবং অন্যান্য ভাজা মিষ্টির উৎপাদন খরচ কমে যায়।
খাবারের আকার: ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহারের ফলে জিলাপি আরো সুন্দরভাবে ভাজা যায় এবং তার আকার ঠিক রাখা যায়। এটি আরও সুন্দর দেখায় এবং খাওয়ার অভিজ্ঞতাকে ভালো করে তোলে।
যদিও ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহারের কারণে জিলাপির গুণগত মান ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়, কিন্তু স্বাস্থ্য এর জন্য এটি ক্ষতিকর। ট্রান্স ফ্যাটের ফলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এজন্য বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই ধরনের ফ্যাট ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করে।হাইড্রোজিনেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাট জিলাপির প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তার স্থায়িত্ব বাড়াতে ব্যবহৃত হয়, তবে এর স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণে এটি কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
জিলাপির উপাদান:
জিলাপি মূলত তিনটি প্রধান উপাদান দিয়ে তৈরি হয়!
ময়দা: জিলাপির মূল আটা বা ময়দা, যা এক ধরনের শর্করা। এটি শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে পারে, তবে অতিরিক্ত খেলে এটি শরীরের মধ্যে চর্বি জমাতে সাহায্য করে।
চিনি: জিলাপির শিরা বা সিরাপ সাধারণত চিনি দিয়ে তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়।
তেল: জিলাপি ভাজার জন্য প্রচুর তেল ব্যবহৃত হয়, যা স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উৎস। এই তেল শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ।
জিলাপির স্বাস্থ্যগত প্রভাব!
ওজন বৃদ্ধি:
জিলাপি একটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার, কারণ এতে প্রচুর চিনি এবং তেল থাকে। যদি একদিনে বা একাধিকবার এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তবে তা শরীরে ক্যালোরির আধিক্য সৃষ্টি করে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি:
জিলাপির প্রধান উপাদান হল চিনি, যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়াতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে বেশি চিনি খাওয়ার ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জন্য জিলাপি খাওয়া একদম নিষেধ।
হার্টের রোগ:
যেহেতু জিলাপি তৈরিতে প্রচুর তেল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট ব্যবহৃত হয়, সেগুলো শরীরে জমে গিয়ে কোলেস্টেরলের স্তর বৃদ্ধি করতে পারে। বেশি কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিতভাবে জিলাপি খাওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদী হৃদরোগের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
পেটের সমস্যা:
জিলাপি মিষ্টি এবং তৈলাক্ত হওয়ায় এটি গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিছু মানুষের জন্য, অতিরিক্ত জিলাপি খাওয়ার ফলে বদহজম বা পেটের অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ত্বকের সমস্যা :
অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে ত্বকেও সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন ব্রণ বা দাগ পড়া। জিলাপি ত্বককে সহজে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, বিশেষত যারা ত্বকের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।