হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি জেনার তোহমত -৩য় পর্ব
হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি জেনার তোহমত -২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মহিলা টাকার প্রলোভনে কারুনের পরামর্শ অনুসারে কাজ শুরু করে দিল। যেখানে হযরত মুছা (আঃ) এর ভক্তবিন্দু বসবাস করত সেখানে গিয়ে হযরত মুছা (আঃ) এর বিরুদ্ধে এ অপবাদ প্রচার করত। এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হল। দুষ্ট মহিলার কথা অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করল না। তবে কথক লোক যারা হযরত মুছা (আঃ) এর বিরুদ্ধে ছিল তারা এটাকে সুযোগ মনে করে সর্বত্র আলোচনা করে ফিরত। যাতে লজ্জায় ও ঘৃনায় তিনি দেশ ত্যাগ করে। একদিন হযরত মুছা (আঃ) মজলিশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সেখানে তিনি এক মিম্বারের তৌরাত কিতাবের আদেশ নিষেদ এর বিষয় মানুষ কে অবগত করছিলেন এবং নেক কাজের প্রতিদান ও পাপ কাজের জন্য জঘন্য পরিনামের কথা বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ব্যাভিচারের বিচার ও পরকালে শাস্তির কথা বলছিলেন।
এমন সময় মজলিসের এক পাশ থেকে বলে উঠল, হে মুছা! যদি আপনি ব্যাবিচারে লিপ্ত হন তবে কি হবে? হযরত মুছা (আঃ) বললেন আমার আইনের ক্ষেত্রে নবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বাভিচারীর শাস্তি হল তাকে পাথর নির্ক্ষেপ করে হত্য করা। কারুন তখন বলল, ঐ মেয়ে লোকটির সাথে আপনি জেনা করেছেন, এই বলে সে মেয়ে লোকটির তিনি দাড়াতে বলল, মেয়ে লোকটি দাড়াল। হযরত মুছা (আঃ) মেয়ে লোকটিকে বলল, সত্যি করে বল কি ঘটনা ঘটেছে। মেয়ে লোকটি তখন তার শরীর পাথরের মত শক্ত হয়ে যাচ্ছে দেখে ভয়ে ভীষণ ভাবে কাঁপতে আরম্ভ করল। তখন হযরত মুছা (আঃ) দ্বিতীয় বার থাকে ধমক দিয়ে বলেন, সঠিক করে বল কি হয়েছে, তখন মহিলা বলল, হুজুর! আমাকে কারুন টাকা দিয়েছে এবং আপনার বিরুদ্ধে এ অপবাদ ছড়াতে বাধ্য করেছে।
প্রকৃত পক্ষে আপনি নির্দোষ। তখন হযরত মুছা (আঃ) ক্রোধে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে মাটির দিকে লক্ষ্য করে বলেন, খুজিহে, অর্থাৎ হে মাটি কারুন কে ধর রবং তোমার মাঝে কারুন কে তলিয়ে নিয়ে যাও। হযরত মুছা (আঃ) এর আদেশে সঙ্গে সঙ্গে কারুনের হাঁটু পর্যন্ত মাটির ভিতরে চলে গেল। তখন কারুন বলল, হে মুছা! তুমি তোমার যাদু বিদ্যা দ্বারা হত্যা করে আমার ধন দম্পদ আত্নসাত করবে। এ উদ্দেশ্য আমাকে মাটির মধ্যে নিশ্চিহ্ন করতে আরম্ভ করেছ। এ কথায় হযরত মুছা (আঃ) বললেন, হে খোদা তুমি আমাকে অপবাদের অমঞ্জল থেকে রক্ষা কর। তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) কারুনের সমস্ত ধন- সম্পদ কারুনের চতুর্দিকে এনে পর্বতের ন্যায় উচু করে রাখলেন। যখন দ্বিতীয়বার হযরত মুছা (আঃ) বললেন। খুজিহে, তখন কারুন এর ধনসম্পদ সহ কমর পর্যন্ত মাটির মধ্যে ঢুকে গেল। কারুন তখন বলল, হে মুছা তুমি আমাকে মুক্তি দাও আমি সমস্ত ধন-সম্পদ তোমাকে দান করব।
হযরত মুছা (আঃ) পুনারায় বললেন, খুজিহে, তখন কারুনের বুক পর্যন্ত মাটির ভিতর ঢুকে গেল। তখন কারুন চিৎকার দিয়ে বলে হে মুছা! আমি তোমার দ্বীন গ্রহন করব। হযরত মুছা (আঃ) কারুনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে পুনারায় বললেন, খুজিহে, এবার মাটি কারুনের তার সমুদয় সম্পদ সম্পর্ন গ্রাস করে নিল। পৃথিবীতে তার আর কোন চিহ্ন অবশিষ্ট থাকল না। এ ঘটনার সময় মানুষ ভয়ে চিৎকার দিয়ে চতুর্দিকে ছুটাছুটি করছিল এবং সকলে হযরত মুছা (আঃ) কে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য অনুরুোধ করল। এমন কি হযরত হারুন (আঃ) পর্যন্ত ক্ষমার আবেদন করেছিল। কিন্তু তখন হযরত মুছা (আঃ) এত অধিক ক্রোধিত হয়ে ছিলেন যে, কার কথার প্রতি ভ্রক্ষেপ না করে মাটিকে বার বার হুকুম দিয়ে নাস্তিক কারুন কে তার অট্টলিকা ধন-রত্ন মাটির মাঝে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন।
এ দৃশ্য দেখে বনি ইসরাইল লোকেরা বলল, আল্লাহ আমাদের প্রতি যথেষ্ট মেহের বানি করেছেন। আমাদের অধিক ধন সম্পদ দেননি। আমারাও অধিক ধন সম্পদের মালিক হতাম তাহলে বিলাশিতার মহে আল্লাহর নবীর সাথে চরম বেয়াদবী করে ধ্বংস হয়ে যেতাম। অতএব প্রয়োজন মাফিক দৌলত মানুষকে মানবীয় চরিত্রের অধিকারি করে। হযরত মুছা (আঃ) এর এহেন বিশাল ও অন্যতম এক মো’যেজা দর্শন করার পরেও কাফের ও খোদাদ্রোহীদের চিন্তাধারার তেমন পরিবর্তন হল না।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি জেনার তোহমত -১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন