অসাধারণ একটি শিক্ষণীয় গল্প

অনেককাল আগের কথা। একজন দরিদ্র লোক একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পানি বহনের কাজ করত। তার দুটি পাত্র ছিল। একটি লাঠির দুই প্রান্তে পাত্র দুটি ঝুলিয়ে কাঁধে নিয়ে সে পানি বহন করত। রোজ অনেকটা পথ হেঁটে পাড়ি দিতে হতো।

দুটি পাত্রের একটি কিছুটা ভাঙা, আরেকটি ত্রুটিহীন। পানি নিয়ে যেতে যেতে ভাঙা পাত্রটি প্রায় অর্ধেক খালি হয়ে যেত। অপরদিকে ত্রুটিহীন পাত্রটি প্রতিদিন সুন্দরভাবে কানায় কানায় ভরে পানি পৌঁছে দিত। এভাবে দরিদ্র লোকটি রোজ তার মনিবের বাড়িতে দেড় পাত্র পানি পৌঁছে দিত।

স্বাভাবিকভাবেই, ভালো পাত্রটি তার এ কাজের জন্য খুব গর্বিত ও আনন্দিত থাকত। অপরদিকে ভাঙা পাত্রটির মন খুব খারাপ থাকত। সে লজ্জিত ও বিমর্ষ থাকত। কারণ, যে কাজের জন্য তাকে বানানো হয়েছিল, সে তা পুরোপুরিভাবে করতে পারছিল না।

এভাবে অনেকদিন পানি বহনের কাজ করার পর একদিন ভাঙা পাত্রটি আর সইতে না পেরে লোকটির কাছে তার ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাইল। সে বলল, “আমি আমাকে নিয়ে লজ্জিত ও হতাশ। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই।”

দরিদ্র লোকটি জানতে চাইল, “কেন তুমি লজ্জা পাচ্ছো?”

পাত্রটি কষ্ট ভরা কণ্ঠে বলল, “তুমি কত কষ্ট করে রোজ আমাকে বয়ে নিয়ে যাও, নদী থেকে আমাকে পানি দিয়ে পূর্ণ করো, অথচ আমি তোমার মনিবের কাছে যেতে যেতে অর্ধেক পানি ফেলে দিই। আমার এক পাশে ফাটল আছে, সেই ফাটল দিয়ে পানি ঝরে পড়ে যায়।”

লোকটি তার পাত্রটির প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বলল, “মন খারাপ করো না। হয়তো এর মাঝেও ভালো কিছু আছে, যা তুমি এখন বুঝতে পারছো না।”

তবু ভাঙা পাত্রটি তার অপরাধবোধ ও লজ্জা থেকে মুক্তি পেল না। তবে লোকটির সান্ত্বনার বাণী শুনে কিছুটা শান্তি পেল।

সে মন খারাপ করেই প্রতিদিনের মতো আজও লোকটির কাঁধে চড়ে পানি বহন করতে লাগল। আর পথ চলতে চলতে ফাটল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়তে লাগল, যেন তার কান্নার সঙ্গেই এক হয়ে ঝরছিল।

পাত্রটি যেতে যেতে আশেপাশে দেখতে লাগল— সবাই কত ভালো আছে, সুখে আছে! কী চমৎকার রৌদ্রজ্জ্বল সকাল! পাহাড়ি পথের পাশে নাম না জানা কত শত ফুল ফুটে রয়েছে! সকালের রোদে মন ভোলানো কোমল হাওয়ায় তারা হেলে দুলে খেলছে।

সে ভাবতে লাগল, “অথচ আমার মাঝে এত কষ্ট কেন?”

রোজকার মতো আজও ধনী লোকটির বাড়িতে পৌঁছে অর্ধেক পানি দিল। ফিরতি পথে আবারও সে তার ব্যর্থতার জন্য দরিদ্র লোকটির কাছে ক্ষমা চাইল।

তার মন খারাপ দেখে লোকটি একটু থেমে পথের পাশে ফুটে থাকা কিছু পাহাড়ি ফুল ছিঁড়ে এনে দিল তাকে।

তারপর বলল, “দুঃখ করো না। আমি আগে থেকেই তোমার এ ত্রুটির কথা জানতাম। তাই যাবার বেলা প্রতিদিন তোমাকে আমার কাঁধের একই দিকে বয়ে নিয়ে যেতাম। আর তুমি তোমার ফাটল দিয়ে পানি ঝরিয়ে দিতে, কখনো কাঁদতেও।

এভাবে পথের এক পাশে তুমি প্রতিদিন পানি দিতেই থাকলে। দেখো, পথের ঐ দিকে চেয়ে দেখো! কত শত সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে! তুমিই তো তাদেরকে পানি দিয়েছো। অথচ পথের অপর পাশে চেয়ে দেখো! ধুলো আর পাথর ছাড়া কিছুই নেই, কোনো ফুলও ফোটেনি।”

ভবিষ্যতের সুখের আশায় বর্তমানের সুখকে দূরে ঠেলা ঠিক নয়

না বুঝে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *