Categories রূপকথা

তিন ডাকাবুকো বন্ধু- তৃতীয় কাণ্ড -ডাকাত সন্ন্যাসী

সন্তুদের অনেক দিনের ইচ্ছে পড়ো বাড়িটার ওপাশে কী আছে সেটা জানার কিন্তু সাপের ভয়ে ওদিকে যাওয়া হয়ে ওঠে নি। তাই পুজোর ছুটি পড়তেই এক দুপুরে ওরা সাইকেল নিয়ে বাঁই বাঁই করে চলে এলো পবার কাছে। পবার পেছনে ও অন্য ধারে ঘন জঙ্গলের জন্য ওদিক দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তবে একটু খোঁজা খুঁজি করতে পবার অনেকটা পেছন দিয়ে একটা সরু মেঠো পথ দেখতে পেলো। ছোট খাটো ঝোপ ঝাড়ে ভরা ওই এবড়ো খেবড়ো পথ দিয়ে বট, জঙ্গলী ডুমুর ইত্যাদি গাছের ফাঁক দিয়ে ওরা সাবধানে সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে গেলো – খানা খন্দগুলোতে সাইকেল ঠেলে ঠেলে নিতে হচ্ছে, দু এক জায়গাতে তো সাইকেলকে প্রায় ঘাড়ে তুলতে হলো।

মিনিট দশেক এ ভাবে চলার পর দেখলো সামনেই একটা মোটামুটি চওড়া ইট বসানো রাস্তা। সাইকেল থেকে নেমে এদিক ওদিক ভালো করে দেখে সন্তু বললো, ‘মনে হচ্ছে রাস্তাটা ডান দিকে বাস রাস্তা থেকে এসেছে আর বাঁদিকে ঝিলের ওপাশ দিয়ে গিয়েছে নবনারায়ণপুর গ্রামের দিকে। চল, বাঁ দিকে একটু এগিয়ে দেখা যাক ঠিক কিনা আর ওদিকে কী আছে।’ বাঁ দিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে ওরা দেখে রাস্তার ধারে একটা বহু পুরাতন বিরাট বট গাছ – ডালগুলো থেকে মোটা মোটা ঝুরি নেমে মাটিতে চলে গেছে – মনে হচ্ছে গাছের মোটা মোটা ডালগুলোকে ওই ঝুরিগুলো লাঠির মত ধরে রেখেছে আর পুরো বট গাছটা অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। ঘন ডাল পালার জন্য গাছের নিচে সূর্যের আলো খুব একটা আসতে পারছে না তাই কেমন একটা আলো ছায়ার লুকোচুরি চলছে সেখানে। গাছটার গোড়াতে একটা গোল লম্বা মত পাথরে কে বা কারা সিঁদুর লাগিয়ে জবা ফুল দিয়ে বোধহয় পুজো করেছে আর জায়গাটা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা। অন্তু বললো, ‘আরেঃ, এটা তো সেই বুড়ো বট রে – এর কথাই আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা বলছিলো। গাছের নিচের শিবলিঙ্গটা নাকি পৃথিবীর মাঝখান থেকে উঠে এসেছে – গ্রামের লোকের খুব বিশ্বাস – বলে এটা নাকি জাগ্রত শিব তাই অনেকেই এখানে আসে পুজো দিতে – তার মানে নবনারায়ণপুর গ্রাম এখান থেকে খুব বেশি দূর হবে না।’
ওরা ঘুরে গাছটার পেছন দিকে আসতেই রন্তু চেঁচিয়ে উঠলো, ‘দেখ্‌ দেখ্‌ ওই তো সেই পড়ো বাড়িটা, তবে ওদিকে যাওয়া যাবে না – বড্ড ঝোপ ঝাড় আর কাঁটা গাছের জঙ্গল।’ বট গাছের অনেক ডাল নিচু হয়ে মাটির কাছে নেমে এসেছে, ফলে গাছে উঠতে কোন অসুবিধাই নেই। তিনজনই গাছে উঠে দেখলো গাছের উঁচু ডালের দিকে অনেক পাখি বাসা বেঁধেছে – গাছটা যেন সেই টার্জানের গল্পের মত বিরাট আর উপর দিকে ঘন ডাল পালার মধ্যে খুব সহজেই ঘর তৈরি করে থাকা যাবে। ওই কাল কেউটের জন্য এদিকে এখন কোন সাপ বা অন্য কিছুর ভয় নেই – সব ওরা খেয়ে নিয়েছিলো তাই সন্তুরা নিশ্চিন্ত মনে চার দিকটা ঘুরে দেখলো। ইতিমধ্যে সূর্য ঢলে আসছে দেখে আর দেরি না করে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিতে হলো – অন্ধকার হয়ে গেলে ওই খানা খন্দের মেঠো পথ ধরে যেতে খুব ঝামেলা হবে আর বেশি দেরি করলে বাড়িতেও সবাই চিন্তা করবে।

 

 

আর এক দিন না হয় তাড়াতাড়ি এসে গ্রামের দিকে যাওয়া যাবে। পরদিন সন্তুরা ঠিক করলো নবনারায়ণপুর গ্রামে তো যে কোন সময়ই যাওয়া যাবে বরং একবার ওই পড়ো বাড়ি আর পেছনের ওই ঘরটা দেখে এলে হয় – এখন তো ওই বিরাট যমদূতের মত কাল কেউটে দুটোর আর ভয়ও নেই আর ওদের দৌলতে অন্য সাপ খোপের ভয়ও নেই তবে ওই গিরগিটি দুটোর কী হাল কে জানে। দুপুরবেলা ওরা মাঠের দিকের ভাঙ্গা গেট দিয়ে পবাতে ঢুকে ওই সুঁড়ি পথ দিয়ে এগিয়ে গেলো পেছনের ঘরের দিকে। ঘরের দরজা হাট করে খোলা – ওরা ভেতরে ঢুকে দেখে অনেক শুকনো পাতা আর আবর্জনার মধ্যে একটা মস্ত বড় সাপের খোলস পড়ে আছে আর এক কোনাতে কিছু ভাঙা ডিমের খোলা।
সন্তু নাকটা কুঁচকে নিয়ে বললো, ‘সাপ দুটো বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে ভালোই সংসার করছিলো মনে হয় – আর কিছুদিন পর ওই বাচ্চা গুলো বড় হলে কি অবস্থা হতো বল তো? এত গুলো কাল কেউটে এক জায়গাতে – ভাবতেই ভয় করছে। ঘরটায় কেমন একটা বিচ্ছিরি গন্ধ করছে রে – চল বাইরে যাই।’ অন্তু বাড়ির ভেতর দিকে যাবার দরজাটা দেখে বললো, ‘এটা তো ওপাশ থেকে বন্ধ। আচ্ছা, এই বাড়িতে কারা থাকতো রে? মাঠের মধ্যে কেনই বা বাড়িটা করেছিলো আর সব বন্ধ করে চলে গেলো কেন? চলে যাওয়ারও তো অনেক বছর হয়েছে নিশ্চয়ই। কেমন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি – তোদের কি মনে হয়?’ পেছনের চাতালে বেরিয়ে এসে ওরা দরজাটা বন্ধ করে ওই বড় পাথরটা চাপা দিয়ে দিলো যাতে হাওয়াতে না খুলে যায়।
তারপর রন্তু বললো, ‘অন্তু, তোর প্রশ্নের উত্তর মনে হয় নবনারায়ণপুরের পুরাতন লোকেরাই দিতে পারবে। আচ্ছা, গুরুজী বলেছিলো কাল কেউটেরা সাধারণতঃ গভীর জঙ্গল আর পাহাড়ে থাকে – তাহলে কি ওদের বছর ১৮ / ১৯ আগে কেউ এনে এখানে ছেড়ে দিয়েছিলো? আমার মনে হয় গুরুজী কিছু একটা জানে বা আন্দাজ করেছে – তাই আমাদের বারণ করেছিলো এখানে আসতে – বলেছিলো বাড়িটা ভালো না। তাহলে কি কাল কেউটের সাথে এই পবার কোন সম্পর্ক আছে?’ সন্তু একটু ভেবে বললো, ‘গুরুজীও কিন্তু অবাক হয়েছিলো এই কাল কেউটেদের দেখে। তোরা ঠিকই বলেছিস – পবার একটা গভীর রহস্য আছে। তবে এখন কারুর সাথে এ নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো – পরে আস্তে আস্তে খোঁজ খবর করা যাবে। শুধু আমাদের ধারণায় তো কিছু হবে না – সত্যি ঘটনা খুঁজে বের করতে হবে।’

দুর্গা পুজোর পরই তিন বন্ধু ছুটির হোমওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কালী পুজোর সপ্তাহ খানেক আগে রন্তুদের বাড়ির কাজের মেয়েটা রন্তুর মাকে খবর দিলো, ওই বুড়ো বটতলাতে এক মস্ত সন্ন্যাসী ওর দুই চেলাকে নিয়ে ডেরা বেঁধেছেন। এই লম্বা চওড়া চেহারা, পরনে লাল কাপড়, খালি গায়ে ভস্ম মাখা, চোখ গুলো সব সময় লাল টকটকে হয়ে আছে। চেলারা বলেছে নাম শ্রীমৎ স্বামী বটেশ্বরানন্দ অবধূত। সন্ন্যাসীর খুব ক্ষমতা – হাত তুলে হাওয়া থেকেই ফুল, পেড়া বের করে ভক্তদের বিলি করছেন। বলেছেন ওই শিব লিঙ্গ পৃথিবীর মাঝখান থেকেই উঠে এসেছে – শিব ঠাকুর ওকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন এখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাই তো হিমালয়ের চূড়া থেকে নেমে এসেছেন এখানে।
এই জাগ্রত শিবের মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রামের লোক যার যেমন ক্ষমতা সেই হিসাবে দান দিচ্ছে। গ্রামের সবার খুব ভক্তি ও বিশ্বাস ওর ওপর – রোজ সকালে লোকে সবজি, ফল, মিষ্টির সিধে দিয়ে আসে। সন্ন্যাসী শুধু সন্ধ্যেবেলাতেই দেখা দেন – অন্য সময় উনি নাকি উচ্চমার্গে মানে আকাশে ঘুরে বেড়ান ভগবানের সাথে কথা বলার জন্য – মাঝে মাঝে হিমালয়ের চূড়াতেও চলে যান শিব ঠাকুরের সাথে দেখা করতে।
গলার কী গভীর আওয়াজ – সন্ধ্যে বেলা শিব পূজার ধুনোর ধোঁয়ার মধ্য থেকে ‘ব্যোম ব্যোম মহাদেব’ বলে যখন উচ্চমার্গ থেকে নেমে আসেন তখন সবার বুক ভয়ে কেঁপে ওঠে। গল্পটা রন্তুর মা সন্তু ও অন্তুর মায়ের সাথে করার পর তিন মা মিলে ঠিক করেছেন একদিন সন্ধ্যে বেলা যাবেন ওই সন্ন্যাসীর আবির্ভাব দেখতে। সন্ন্যাসীর খবরটা শুনে তিন বন্ধু লাফিয়ে উঠলো। অন্তু বললো, ‘এই তো পুজোর আগেই আমরা বুড়ো বটতলা ঘুরে এলাম আর এর মধ্যেই একেবারে হিমালয়ের চূড়া থেকে সন্ন্যাসী চেলাদের নিয়ে এসে হাজির।

সারাদিন আবার উচ্চমার্গে মানে আকাশে ঘুরে বেড়ান। অসম্ভব – ব্যাপারটা খুব গোলমেলে লাগছে।’ রন্তু উত্তর দিলো, ‘হিমালয়ের চূড়া মানে তো মাউন্ট এভারেষ্ট – ওখান থেকে এসেছে? আর গুল দেবার জায়গা পেলো না – ঠিক বুজরুক। গ্রামের লোকগুলোকে যা ইচ্ছে তাই পড়িয়ে যাচ্ছে। আর মায়েরাও কেমন বলতো – ও ব্যাটাকে দেখতে যাবে ঠিক করেছে। লোকটা নামও নিয়েছে লম্বা চওড়া – শ্রীমৎ স্বামী বটেশ্বরানন্দ অবধূত – অবধূত না কোথাকার ভূত কে জানে। চল তো এখন একবার দেখে আসি – সন্ন্যাসী এখন উচ্চমার্গে থাকলেও চেলারা তো থাকবে।’
ওরা বুড়ো বটতলায় এসে দেখে লম্বা চুল, দাড়ি ও গোঁফওয়ালা ডিগ ডিগে রোগা, খুব লম্বা আর ভীষণ কালো একটা লোক বটতলাটা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছে। দাড়ি গোঁফের ফাঁকে ওর দাঁত দেখার মতন – দু পাটি দাঁতই মুখের ভেতর যেন থাকতে চাইছে না – একেবারে ঠেলে খাড়া বেরিয়ে এসেছে – অন্ধকারে হঠাৎ দেখলে লোকে ভির্মি খাবে। শিব লিঙ্গের পাশে ঝুড়িতে নানা রকম তরকারি, কিছু ফল আর পেড়া রাখা আছে তার মানে গ্রামের লোক সকালে শিবের সিধে দিয়ে গিয়েছে। শিব লিঙ্গের একধারে মাটি সমান করে একটা বসার জায়গা আর ওটার সামনে একটা ধুনীর মত বানানো।
ওদের বটতলাতে এদিক ওদিক ঘুরতে দেখে লোকটা ভুরু কুঁচকে বিচ্ছিরি ধরনের হেঁড়ে গলায় বললো, ‘তোরা কোথা থেকে এসেছিস রে? আরে উজবুকের দল, এই জাগ্রত শিবকে প্রণাম করেছিস? আজকালকার ছেলেদের কোন রকম ভক্তি শ্রদ্ধার বালাই নেই – এক্ষুনি এখান থেকে পালা না হলে খুব খারাপ হবে কিন্তু।’ সন্তু কনুইএর খোঁচা দিয়ে অন্ত রন্তুকে আস্তে করে বললো, ‘চট করে প্রণাম করে নে – না হলে দেঁতো ঝামেলা করবে।’

 

 

ওদের হাত তুলে নমস্কার করতে দেখে লোকটা বীভৎস দাঁতে ভেংচি কেটে প্রায় তেড়ে এলো, ‘প্রণামের ছিরি দেখো – হাত তুলে একটু নমস্কার করেই যেন হয়ে গেলো। আরে, লোকে এখানে মাটিতে গড়া গড়ি খেয়ে শিব ঠাকুরকে প্রণাম করে – এই বুড়ো বটতলার মাটি গায়ে মাখে। বলি তোরা এখান থেকে যাবি না ঝাঁটা পেটা করে তাড়াবো। আবার যদি তোদের এখানে দেখেছি তো বাবাকে বলে তোদের শিবলোকে পাঠিয়ে দেবো।’ লোকটার তাড়া খেয়ে বটতলা থেকে বেরিয়ে এসে অন্তু লাফাতে লাগলো, ‘কী বিচ্ছিরি ব্যবহার ওই খিটকেল লোকটার – ইচ্ছে করছিলো তিন জনে মিলে আচ্ছা করে দু ঘা লাগাই। একেবারে কুকুর তাড়ানোর মত করে তাড়িয়ে দিলো দেঁতোটা।’ রন্তু বোঝালো, ‘এই বোকা, ওরা তো তিন জন – চেঁচামেচিতে বাকি দুজন এসে হাজির হলে আমরাই মার খেয়ে যেতাম। তাছাড়া গ্রামের লোকও আমাদের ওপর রেগে যেতো – ওদের কাছে তো এরা প্রায় ভগবানের কাছের লোক। আচ্ছা, এরা রাত্রে থাকে কোথায় বলতো? গাছ তলায় তো সে রকম কিছু দেখলাম না – নাকি বাঁদরের মত গাছের ওপরে থাকে?’ সন্তু বললো, ‘আমিও তাই ভাবছিলাম তবে গাছের ওপরে নয় বলেই মনে হয়। চল তো গাছের পেছন দিকটা ঘুরে দেখি – ওদিকে কোন ডেরা করেছে কিনা।’ ওরা বট গাছের পেছন দিকে এসে থাকার জায়গার মত কিছু দেখতে পেলো না বরং পেছন দিকে গাছতলা বেশ নোংরা। হঠাৎ রন্তু উত্তেজিত ভাবে ওদের ডাকলো, ‘দ্যাখ, দ্যাখ – ব্যাটারা এখান থেকে জঙ্গল কেটে একটা সুঁড়ি পথ বানিয়েছে পবাতে যাবার জন্য। তার মানে ওরা পবাতেই আস্থানা গেড়েছে পেছনের ওই ঘরটাতে। ওখানে তো সাপের সেই বড় খোলস আর ভাঙ্গা ডিমের খোসা গুলো পড়ে আছে – ওগুলো দেখে ভয় পায় নি? কাল কেউটেদের যে ধরা হয়েছে সেই খবর তো কারুর জানার কথা নয় – তাহলে?’ ওরা তিন জন এ ওর মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। অন্তু ধীরে ধীরে বললো, ‘মনে হয় ওখানে সাপের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করেছে। চল তো দেখে আসি।’ অন্তুকে ওই সুঁড়ি পথের দিকে এগুতে দেখে সন্তু তাড়াতাড়ি বললো, ‘এই অন্তু, এদিক দিয়ে যাস না – ওরা দেখে ফেলতে পারে আর তাহলেই ঝামেলা হয়ে যাবে। চল, আমরা বরং মাঠের দিক দিয়ে যাই তা হলে বুঝতে পারবে না।’

ওরা ঘুরে মাঠের ভেতর দিয়ে এসে পবার ভাঙ্গা গেটের বাইরে সাইকেল রেখে চুপি চুপি ভেতরে ঢুকলো। একটু এগিয়েই নাকে একটা অদ্ভুত ঝাঁঝালো গন্ধ লাগতে সন্তু দাঁড়িয়ে গিয়ে দু চারবার জোরে হাওয়া টেনে গন্ধটা বোঝার চেষ্টা করলো। ‘গন্ধটা কিসের বুঝতে পারছিস কি? কড়া ফিনাইল জাতিয় কিছুর মনে হয় না?’ রন্তু খুব আস্তে বললো, ‘মনে হয় সাপ তাড়ানোর জন্য কোন কড়া ওষুধ হতে পারে। তার মানে সব রকম ব্যবস্থা নিয়েই এসেছে অর্থাৎ এরা খুব একটা সাধারণ সন্ন্যাসী নয় রে।’ অন্তু উত্তর দিলো, ‘সাবধানে কোন রকম আওয়াজ না করে এগিয়ে চল তো – পেছনের ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে হবে বাকি দু্টো কি করছে। ওদের পরিচয়ের কিছুটা আন্দাজ হয়তো হতে পারে। তবে রন্তু ছাড়া আর কেউ তো উঁকি মারতে পারবে না – জানালাটা বেশ উঁচুতে।’ রন্তু একটু হেসে উত্তর দিলো, ‘আমাকে যে তোরা লম্বু বলে খ্যাপাস – এবার বোঝ মজা! ঠিক আছে, তোকে আমরা দুজনে মিলে আস্তে করে তুলে দেবো আর সন্তু না হয় তোর হাঁটুর ওপর দাঁড়িয়ে যাবে। তবে খুব সাবধান, কোন রকম কথা নয় – কোন আওয়াজও নয় ওখানে। জানালার পাল্লার কোনাতে চোখ দিয়ে দেখবি তাহলে ভেতর থেকে বুঝতে পারবে না। যাই দেখিস না কেন চুপচাপ ফিরে এসে কথা বার্তা হবে ঝিলের ধারে। এবারে চল খুব আস্তে।’ প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ওরা ওই সুঁড়ি পথ ধরে এগিয়ে গেলো। একটু এগিয়েই একটা ভারি গলার আওয়াজ শোনা গেলো তবে কেমন যেন জড়ানো। জানালার নিচে আসতে আর একটা ফ্যাসফ্যাসে গলা শোনা গেলো সেই সাথে কড়াইতে খুন্তি নাড়ার আওয়াজ মানে রান্না হচ্ছে। ‘বদরু ভাই, তুমি কিন্তু জায়গাটা বেড়ে বের করেছো। কোন ব্যাটা পুলিস আমাদের টিকির খোঁজও পাবে না।

আর তুমি তো সন্ন্যাসী হয়ে বাজার মাত করে দিলে – গ্রামের লোক তো বটতলায় মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে তোমাকে প্রণাম করছে। কে বুঝবে তুমি সেই বিখ্যাত বদরুদ্দিন মিঞা – যার নামে পুলিসের হুলিয়া আছে – ধরতে পারলে দশ হাজার টাকা পুরস্কার। বলিহারি তোমার বুদ্ধি – এই না হলে লিডার।’ শুনেই ওরা চোখ বড় বড় করে এ ওর দিকে তাকালো তারপর ওপরে জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে এই বড় দাড়ি আর বিরাট জটা – ব্যাটা ওখানে দাঁড়িয়ে নেই তো! ভাল করে তাকিয়ে দেখে জানালার হুকে ওগুলো ঝুলছে। এবার রন্তু ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে ডিঙ্গী মেরে পাল্লার নিচের ফাঁকটায় চোখ লাগালো – কেমন একটা চিমসে গন্ধ নাকে এলো। কিছু সময় দেখে বসে পরতে অন্তু হাঁটুর ওপর সন্তুকে দাঁড় করিয়ে দিলে সন্তু একই ভাবে উঁকি মারলো। এর মধ্যে জানালার ঠিক নিচে ভারী গলাটা বলে উঠলো, ‘গনশা, তুই ব্যাটা রান্নাটা ভালোই শিখেছিস – জব্বর গন্ধ বেরিয়েছে রে। ভাল করে মাংসটা রান্না কর্‌ তো – বেশ কিছুদিন মাংস খাওয়া হয় নি। গ্রামের লোকগুলো তো শুধু শাক পাতাই খাওয়াচ্ছে। তা ছাগলটাকে ধরলি কোথা থেকে?’ ‘বটতলার পেছনে কাল দুপুরে ঘাস খাচ্ছিলো। খপ করে ধরেই চেঁচাবার আগে মুখটা চেপে ধরে এনেই সোজা জবাই। চামড়া নাড়ি ভুড়ি মাটিতে পুঁতে দিয়েছি যাতে গন্ধ না বেরোয়। বিকেলে একটা বাচ্চা ছেলে কাঁদতে কাঁদতে এসেছিলো ছাগলটা খুঁজতে – হেঃ হেঃ কোথায় পাবে – ওটার তো পঞ্চত্ব প্রাপ্তি হয়েছে। বলেছি গুরুজীকে ভালো করে বললে হিমালয় থেকে এনে দেবে। এখন দিন দুয়েক প্রেমসে মাংস খাওয়া যাবে।’ অন্তুকে দুজনে মিলে তুলে ধরতে অন্তু ভালো করে দেখে নিয়ে নেমে এলে ওরা আস্তে আস্তে ওখান থেকে বেরিয়ে এলো। তিনজনই উত্তেজনাতে ছটফট করছে – অন্তু তো লাফাচ্ছে, ‘এরা তো দাগী আসামী রে। যাত্রা দলের পরচুলা পরে পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে পবাতে লুকিয়ে আছে। নিবারণ কাকুর কাছে তো এদের পুরো খবর থাকবেই। লোকটার গায়ে কি ভীষণ লোম রে তার উপর আবার বিরাট টাক – যেন একটা জাম্বুমান বসে গঞ্জিকা টানছে। ব্যাটা বদরুদ্দিন মিঞা হয়েছে বটেশ্বরানন্দ – মনে হয় নামটা বানিয়েছে ওই বুড়ো বটের সাথে মিলিয়েই।’ সন্তু একটু ভেবে বললো, ‘এখনই নয় – আরো কয়েক দিন যাক। এরা তো এখানে নিশ্চিন্তে ডেরা বেঁধেছে অতএব চট করে যাবে না।

ওই রান্না করা লোকটাকে নজর দিয়ে দেখেছিলি – বেঁটে খাঁটো গাট্টা গোট্টা চেহারা – অনেকটা যেন বড় অন্তু।’ বলেই অন্তুর হাতের নাগালের বাইরে সরে গেলো। রন্তু এত সময় চুপ করে ছিলো – ও কিন্তু সব থেকে বেশী সময় উঁকি মেরে দেখেছে। ‘আমার মনে হয় ওরা অন্য কোন উদ্দেশ্যেই এখানে ডেরা বেঁধেছে আর সন্ন্যাসী সেজে আছে লোকের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য। তোরা খেয়াল করেছিস কিনা জানি না, ঘরের অন্য কোনায় শাবল, লোহার রড, এই সবের সাথে একটা রিভলভারও খাপে ঝুলছিলো। বুঝতেই পারছিস খুব সাংঘাতিক লোক এরা অতএব আমাদের খুব সাবধানে কাজ করতে হবে।’ অন্তু একটু সময় ভেবে বললো, ‘একবার মনে হয় বুড়ো বট গাছে উঠতে হবে – সন্ন্যাসী হাত তুলে হাওয়া থেকে যে ফুল মিষ্টি বের করে সেটা বোধ হয় গাছের ওপর থেকেই হয়। দুপুরে মনে হয় বট তলায় কেউ থাকবে না – পাঁঠার মাংস খেয়ে সব মৌজ করবে তখনই সব থেকে ভালো সময়।’ দুপুরে ওরা বুড়ো বট তলায় কাউকে দেখতে না পেয়ে চটপট গাছে উঠে এ ডাল ও ডাল করে সন্ন্যাসীর বসার জায়গার ঠিক ওপরের মোটা ডালটায় এসে দেখে ডাল পালা কেটে ওখানে বেশ ভালো বসার জায়গা করা আছে আর তার পাশেই মাছ ধরার ছিপের মত গোটা কয়েক ছপটি রাখা যার মাথায় পাতলা নাইলনের সুতো বাঁধা।
সন্তু খুব হাসতে লাগলো, ‘বুদ্ধিটা খুব ভালো রে – এখানে বসে বঁড়শির সুতোতে ফুল, পেড়া এসব বেঁধে নিচে নামিয়ে দেয় আর সন্ন্যাসী ওগুলো হাতে টেনে নিয়ে লোক জনকে দেয়।
সন্ধ্যে বেলা ধোঁয়ার জন্য কেউই এই সুতো দেখতে পায় না তাই ভাবে সন্ন্যাসী হাওয়া থেকে সব কিছু বের করে দিচ্ছে। আঁধো অন্ধকারে ওপরের ডালের লোকটাকে কেউ দেখতে পায় না। যেমন ছিলো তেমনি সব রেখে দে যাতে বুঝতে না পারে আমরা গাছে উঠেছিলাম। এদের বুজরুকি তো বোঝা গেলো – এবার চল পালাই এখান থেকে।’   এর পর দুদিন ওদের মধ্যে নানা আলোচনা ও খোঁজ খবরেই কেটে গেলো। তারপরের দিন মায়েদেরও বুড়ো বটতলায় সন্ন্যাসীর আবির্ভাব দেখতে যাবার কথা তাই বিকেলেই মায়েরা একটা ভ্যান রিক্সা ভাড়া করে রওয়ানা হতেই রন্তু বললো, ‘তোরা বুড়ো বটতলায় যা – আমি একটা দরকারি কাজ সেরেই আসছি।’ সাইকেল চালাতে চালাতে অন্তু বললো, ‘এখন আবার রন্তুর কি কাজ পড়লো রে? সময় মত হাজির হলে হয়।’ সন্তু মাথা নাড়লো, মানে জানে না। প্রায় সন্ধ্যের মুখে বুড়ো বটতলায় এসে দেখে এর মধ্যেই গ্রামের বেশ কিছু লোক ওখানে এসে গিয়েছে। সবাই হাত জোড় করে উদগ্রীব হয়ে বসে আছে সন্ন্যাসী মহাপ্রভুর দর্শনের জন্য।

এর মধ্যে মায়েরাও এসে হাজির। বেঁটে লোকটা ধুনিতে কাঠ পাতা দিয়ে আগুন ধরাতে ব্যস্ত তবে লম্বুর পাত্তা নেই। সন্তু মুচকি হেসে অন্তুকে খোঁচা মারলো, ‘লম্বু ব্যাটা ঠিক গাছের ওপরে বসে ছিপে ফুল মিষ্টি লাগাচ্ছে রে।’ এদিক ওদিক দেখতে গিয়ে সন্তুর নজরে এলো বটতলার একটু বাইরে জনা তিনেক লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে আর একজন ধুতি পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলোক চুপ করে দাঁড়িয়ে। ভালো করে দেখে অন্তুকে খুব আস্তে বললো, ‘নিবারণ কাকু না? কি ব্যাপার? ঠিক কোন খবর পেয়ে এসেছে মনে হয়। দেখিস আমাদের যেন দেখতে না পায়। বাকি তিনটে লোক কি ওরই চেলা?’ এর মধ্যে রন্তু হাঁপাতে হাঁপাতে এসেই ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ওদের চুপ করে থাকতে বললো। অন্তু আঙ্গুল দিয়ে নিবারণ কাকুকে দেখাতে রন্তু মুচকি হাসলো। ভেজা পাতা আর কাঠের ধোঁয়াতে চোখ জ্বালা করতে শুরু করেছে। বেঁটে লোকটা হাত জোড় করে কি সব ওঁ বং করছে যার কোন মাথা মুন্ডু কেউই বুঝতে পারছে না। এর পর পাশের মাটির সরা থেকে এক মুঠো ধুনো নিয়ে আগুনে ছুড়ে ফ্যাসফেসে গলায় চেঁচিয়ে উঠলো, ‘জয় বাবা বটেশ্বরানন্দ, দেখা দাও বাবা। ভক্তরা যে তোমার দর্শনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে – ওদের নিরাশ করো না বাবা। দয়া করে নেমে এসো এই ভূমিতে।’ ঘন ধোঁয়াতে বটতলা প্রায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে – হঠাৎ ‘ব্যোম ব্যোম মহাদেব’ বলে ধোঁয়ার ভেতর থেকে এক বিরাট চেহারার লোক লাফিয়ে বেরিয়ে এলো সামনে – রীতিমত নাটকীয় ব্যাপার। মাথায় বিরাট জটা, এই-ই লম্বা দাড়ি, খালি গায়ে বিভূতি মাখা, ছয় ফুট খানেক লম্বা আর সেই রকম শক্ত চেহারা। বেশির ভাগ দর্শনার্থী ভয়ে হাত জোড় করে বসে আছে – এমন কি সন্তুদের মায়েরাও হাত জোড় করে নিয়েছেন। বটেশ্বরানন্দ নিজের আসনে বসে সবাইকে আর্শীবাদের ভঙ্গীতে হাত তুলে গমগমে গলায় বলে উঠলো, ‘তোমাদের জন্যই হিমালয় থেকে নেমে আসতে হলো। আজ মহাদেব ডেকেছিলেন কৈলাসে – বললেন, বাবা বটু, বুড়ো বটতলায় আমার মন্দির করতে এত দেরী কেন বাবা? আমি অনেক বোঝালাম যে জিনিষ পত্রের দাম বেড়ে গিয়েছে তাই গ্রামবাসীদের দানে তো মন্দির হবে না – আরো অনেক টাকা চাই।

সেটার ব্যবস্থা হলেই মন্দিরের কাজ শুরু হবে। হে আমার শিষ্যরা, এখন বুঝতে পারছো স্বয়ং মহাদেব মন্দিরের জন্য কতটা উতলা হয়ে উঠেছেন। তোমাদেরই তো এর ব্যবস্থা করতে হবে – আমি তো নিমিত্ত মাত্র।’ বলতে বলতে বটেশ্বরানন্দ কেমন যেন ছটফট করতে শুরু করলেন। রন্তু মুচকি হেসে বললো, ‘এবার মজাটা দ্যাখ – কেমন ভারতনাট্যমের নাচ শুরু হয়।’ তারপরই মনে হলো আর সহ্য করতে না পেরে ডান হাতে দাড়ি চুলকাতে শুরু করলেন – ডান হাতে না পেরে দুই হাত দিয়ে পাগলের মত দাড়ির ভেতর গাল, মুখ ও জটার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলেন। ওর বেঁটে চেলা ও সব দর্শনার্থীরা অবাক হয়ে দেখছে বাবার কাণ্ড। তারপর চুলকানি আর সামলাতে না পেরে বটেশ্বরানন্দ লাফিয়ে আসনের ওপর দাঁড়িয়ে এক টানে মাথার জটা আর লম্বা দাড়ি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দুই হাতে মাথার বিরাট টাক আর মুখ চুলকাতে শুরু করলেন – চুলকানি ধীরে ধীরে ঘাড়, বুক পেটের ঘন লোমের মধ্যেও শুরু হয়েছে। চুলকানির চোটে বটেশ্বরানন্দ রীতিমত লাফালাফি শুরু করে দিয়েছেন আর ওর ছুঁড়ে ফেলা পরচুলা ও দাড়ি ধুনির আগুনে পড়ে চড় চড় করে জ্বলতে লাগলো। হঠাৎ ‘ওরে বাবারে, সাপ’ বলে লম্বু গাছের ওপর থেকে ধড়াম করে এসে পড়লো বেঁটে চেলার ঘাড়ে – ওর দাড়ি ও পরচুলা গাছের ডালে আটকে ঝুলতে লাগলো – ওই ধাক্কায় দু জনেই ভির্মি খেয়ে চোখ উল্টে দিয়েছে।

এর পরই একটা বেশ মোটা চিত্র বিচিত্র সাপ গাছের ডাল থেকে ঝুলে বটেশ্বরানন্দের নাকের সামনে দোল খেতে শুরু করতেই ‘ইয়া আল্লা’ বলে বটেশ্বরানন্দ ওখানেই চিৎপাত আর ওর হাতের ধাক্কায় শিব লিঙ্গ ছিটকে পড়লো এক পাশে, ওটা যে পৃথিবীর মাঝ খান থেকে উঠে আসে নি তার প্রমাণ হিসাবে। সন্তুরা খেয়াল করে নি কখন নিবারণ কাকু ওদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ‘তোরাই তো দেখছি কেল্লা ফতে করে দিলি রে। দেখি বদরু মিঞা আর লরেল হার্ডির কী সমাচার – অনেক দিন ধরেই ওদের খুঁজছিলাম গোটা কয়েক ডাকাতির ব্যাপারে। ও ব্যাটাই যে শ্রীমৎ স্বামী বটেশ্বরানন্দ অবধূত হয়ে এই বটতলায় বসে আছে প্রথমে বুঝতে পারি নি। রন্তু একটু আগে ফোনে মজা দেখতে এখানে আসার কথা বলতেই বুঝলাম কাবাব ম্যে কুছ হাড্ডি হ্যায়।’ বলেই এগিয়ে গেলেন তিন মূর্তির দিকে। ওর হাতের ইঙ্গিতে বাইরের তিনটে লোক দৌড়ে এসে বটেশ্বরানন্দ, বেঁটে ও লম্বুর হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিলো। এর মধ্যে সিরাজ গাছ থেকে নেমে হাসতে হাসতে ওই সাপটাকে কোলে টেনে নিলো। ‘

আয়রে সুলতান, শেষ খেলা তো তুই-ই দেখালি – না হলে লম্বুকে গাছ থেকে নামানো মুস্কিল হতো – আজ তোর জন্য দুটো বড় ইঁদুর রেখেছি। দাদাভাইরা বুদ্ধিটা কিন্তু খুব ভালো দিয়েছো।’ রন্তুরা সুলতানের গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতেই মায়েরা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন। সিরাজ হেসে বললো, ‘ভয় পাবেন না মা-জীরা – সুলতান আমার পোশা অজগর – কাউকে কিচ্ছু বলে না।’ নিবারণ কাকু এগিয়ে এলেন, ‘হুঁ, প্ল্যানটা তো তোরা ভালোই বানিয়েছিস দেখছি – নাটক জমেওছিলো ভালো তবে এর মধ্যে মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্যটা কি ভাবে হলো?’ রন্তু মুচকি হাসলো, ‘বটেশ্বরানন্দের দাড়ি আর পরচুলা জানালায় ঝুলতে দেখে আইডিয়াটা মাথায় এসেছিলো। বাড়ির কাজের মাসিকে বলে এক ছোট শিশি অব্যর্থ দাওয়াই জোগাড় করেছিলাম গতকাল।

এখানে আসার আগে উনি যখন গঞ্জিকা সেবন করে উচ্চমার্গে ঘোরা ফেরা করছিলেন তখন জানালায় ঝোলানো ওর পরচুলা আর দাড়িতে সেটা ঢেলে দিয়ে আসি। সেই জন্যই আপনাকে ফোনে নাচ দেখার নিমন্ত্রণ জানাই।’ সন্তু ও অন্তু অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রায় এক সাথেই জিজ্ঞেস করলো, ‘সেই অব্যর্থ দাওয়াইটা কি রে?’ রন্তু খুব গম্ভীর মুখ করে উত্তর দিলো, ‘ছারপোকা।’

আরো পড়তে পারেন...

রান্না করলেন রাজপুত্র — যশোধরা রায়চৌধুরী

রাজা, রানি, রাজপুত্র, রাজকন্যা কে নিয়ে এক সুখের সংসার। কোন গোলমাল নেই,আবার গোলমাল আছেও বলা…

বুড়ী আর তার খড়ের ষাঁড় (উক্রেইনের উপকথা)

কোন এক সময়ে এক গাঁয়ে এক বুড়ো আর বুড়ি থাকত। বুড়ি ঘরে বসে চরখাতে সুতো…

ঠানদিদির বিক্রম

আমাদের এক ঠানদিদি ছিলেন। অবশ্য ঠাকুরদাদাও ছিলেন, নইলে ঠানদিদি এলেন কোত্থেকে? তবে ঠাকুরদাদাকে পাড়ার ছেলেরা…