হযরত ইউনুস (আঃ) -এর শহর ত্যাগ – ২য় পর্ব

হযরত ইউনুস (আঃ) -এর শহর ত্যাগ – ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত ইউনুস (আঃ) সমুদ্রে পতিত হবার সাথে সাথে এক বিশাল আকারের মাছ এসে তাঁকে গিলে ফেলল। নবী অক্ষত অবস্থায় মাছের পেটে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকোষ্টে এসে পৌঁছলেন। অত্যন্ত গরম ছিল স্থানটি। শুধু কোন রকম শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সক্ষম হলেন তিনি। মহা বিপদজনক স্থান। নবী মাছের পেটে পৌঁছার পরে মাছ কিছুটা কষ্ট অনুভব করল। তাই সে তীব্র বেগে ছুটতে আরম্ভ করল। এক সমুদ্র থেকে অন্য সমুদ্রে সেখান থেকে অন্য সমুদ্রে। এভাবে এক এক করে বহু সমুদ্র অতিক্রম করতে আরম্ভ করল। এক সময় নবী শুনতে পেলেন নতুন ধরণের এক জেকের ও তাছবীহ। অসংখ্য কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছিল সে তাছবীহ।

 তাছবীর কথাগুলো ছিল “লাইলাহা ইল্লা আনতা ছোবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলেমীন ” নবী তাঁর পরিস্থিতির মওয়াফেক তাছবীহ শুনতে পেয়ে তিনি তা মুখস্ত করে নিলেন এবং অবিরাম তা পাঠ করতে আরম্ভ করলেন। এভাবে প্রাই বিশ পঁচিশ দিন অতিবাহিত হবার পরে একদিন নবী শুনতে পেলেন, কে যেন তাঁর নাম ধরে ডাক দিয়ে বলছে, হে হযরত ইউনুস (আঃ)! এ মাছের পেট থেকে তুমি কোন দিন রেহাই পেতে না। কিন্তু যে তাছবীহ তুমি পাঠ করছ তাতে আল্লাহ তায়ালা তোমার মুক্তির দিন অতি সন্নিকট করে দিয়েছেন। এ আওয়াজ শুনে নবী অনেক কাঁদলেন, তাঁর পরে পুনরায় স্বাভাবিক হলেন।

এ সময় সমুদ্রের কয়েকটি মাছ দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। মাছেরা দিবারাত্র আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে নিজেদের মুক্তির প্রার্থনা করত। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সমস্ত মাছগুলোকে জানিয়ে দেয়া হল, হে মৎস জাতি! তোমরা যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছ তাঁরা শুন, একজন নবীকে পেটে পুরে রাখা একটি বিশাল মাছ দ্রুত গতিতে তোমাদের নিকট দিয়ে সমুদ্র অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে। তোমরা তাঁর নিকট যাও, তাঁর মাথায় এক তেজস্বী জ্যোতি দেখতে পাবে।

তোমরা সে জ্যোতির উজ্জ্বলতা দর্শন কর এবং তাঁর শরীরে স্পর্শ করা পানি  তোমাদের শরীরে লাগাও। তাহলে তোমরা দুরারোগ্য রোগ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করবে। এটাই তোমাদের বাঁচার একমাত্র পথ। মৎস কুলেরা এ খবর জানতে পেরে সারি বেঁধে ঝাকে ঝাকে হযরত ইউনুস (আঃ)-কে ভক্ষণ করা  মৎস্যের চতুর্দিকে ভীড় জমালো। মাছেরা উক্ত মৎস্যের সংস্পর্শে সেগুলোর এসে রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবে। আর যে মাছেরা রোগমুক্ত ছিল সংস্পর্শে সেগুলোর এসে স্বাস্থ্য সমৃদ্ধ হল। ঝিনুকের সংস্পর্শে এসে মুক্তা লাভ করল।

 সমুদ্রের অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে কোন কোন প্রাণী আংশিক মানব আকৃতি লাভ করে মৎসরানী নাম লাভে ধন্য হল। এভাবে সমুদ্রের লক্ষ লক্ষ প্রাণী এক এক ধরণের বৈশিষ্ট্য লাভ করতে সক্ষম হল। উক্ত মৎটি সমুদ্রের যে পথে অগ্রসর হয়ে ছিল সে পথে অসংখ্য মানিক, জহরত, পান্না ও চুন্নি নামক দামী পাথরের জন্ম হয়েছিল। পরবর্তী সময় মানুষ সমুদ্র থেকে এগুলো আহরণ করতে সক্ষম হয়েছিল। অদ্য পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষেরা সমুদ্র থেকে উক্ত মূল্যবান পাথর উত্তোলন করে আসছে।

মৎসটি হযরত ইউনুসকে পেটে নিয়ে আর কোন আহার করে নি। শুধু সমুদ্রের পর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পথ অতিক্রম করে চলছিল। এভাবে একধারে চল্লিশ দিন অতিবাহিত হবার পরে একদা মৎসটি এক বালুময় চরাভূমির নিকটে এসে হযরত ইউনুস (আঃ)-কে উদ্গীরণ করে ফেলে দিল। হযরত ইউনুস (আঃ)-এর শরীর ছিল তখন ভীষণ স্পর্শ কাতর। সেহেতু গরমে তাঁর শরীরের চামড়া পাতলা হয়ে গিয়েছিল। বলতে গেলে চামড়ার উপরিভাগটা গলে গিয়েছিল। যাতে সর্ব শরীরে কিছুটা ঘায়ের মত সৃষ্টি রক্ত মাখা হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় সূর্যের কিরণ সহ্য করা তাঁর পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না বলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর পাশে একটি লাউগাছ উঠিয়ে দিলেন। গাছটি ক্ষণিকের মধ্যে বড় হল এবং বড় বড় পাতা ছেড়ে হযরত ইউনুস (আঃ)-এর শরীর ঢেকে দিল। হযরত জিব্রাইল (আঃ) প্রথমে তাঁর জন্য নরম খাবারের ব্যবস্থা করলেন। পরে তিনি গাছের লাউ খেলেন, সেখানে চল্লিশ দিন কাটালেন। যখন তাঁর শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এল তখন আল্লাহ তায়ালা নিকটস্থ লোকালয়ে গিয়ে দাওয়াত দিতে আদেশ দিলেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইউনুস (আঃ) -এর শহর ত্যাগ – ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।