সবসময় সত্যকথা বলার নাম সত্যবাদিতা। যে কোন অবস্থায় যে কারো সামনে সত্যকথা বলতে পারাকেও বলে সত্যবাদিতা। সত্যবাদীরা লাভ ক্ষতির কথা চিন্তা করে না। জীবন-মৃত্যুর কথা ভাবে না। সত্যই তাদের একমাত্র অবলম্বন। জীবন গেলেও তারা মিথ্যা বলে না। কোন অবস্থাতেই তারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয় না। প্রাচীনকালে এমন একজন সত্যবাদী ছিলেন। তাঁর নাম প্রহ্লাদ। চলো আমরা প্রহ্লাদের সত্যবাদিরতার গল্প শুনি। দৈত্যদের রাজা হিরণ্যকশিপু। তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ। হিরণ্যকশিপু দেবতা বিষ্ণুর বিরোধী। কিন্তু প্রহ্ললাদ হয়ে উঠলেন অতিশয় বিষ্ণুভক্ত। একথা জানতে পেরে হিরণ্যকশিপু ভীষন রেগে গেলেন। তিনি প্রহ্লাদকে ডেকে বললেন, ‘বিষ্ণু আমার শত্রু। তোমাকে বিষ্ণুনাম ছাড়তে হবে।’ প্রহ্লাদ: তা কি করে সম্ভব, বাবা? তিনি যে ঈশ্বর।
হরিণ্যকশিপু: বিষ্ণু দৈত্যদের শত্রু। তাই দৈত্যকূলে জন্মে তুমি বিষ্ণুনাম নিতে পারবে না। প্রহাদ: বাবা, শ্রীবিষ্ণু তো ঈশ্বর। ঈশ্বর কারো শত্রু নন। তাই আমি তাঁর নাম ছাড়তে পারব না। হিরণ্যকশিপু রেগে গেলেন। কিন্তু কী করবেন? ছেলে তো। তাই তিনি তাকে গুরুমশাইয়ের নিকট পাঠালেন। যদি সংশোধন হয়। কিন্তু কোন ফল হলো না। প্রহ্লাদ আগের মতই বিষ্ণু নাম জপতে লাগলেন। হিরণ্যকশিপু আর সহ্য করতে পারছেন না। তাই ছেলেকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজার আদেশে সেনারা তরবারি দিয়ে তাঁকে আঘাত করল। কিন্তু প্রহ্লাদ মরলেন না। তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো। আগুন নিভে গেল। পায়ে পাথর বেঁধে নদীতে ফেলা হল। পাথর ভেসে উঠল। হাতির পায়ের নিচে ফেলা হল। হাতি শুঁড় দিয়ে পিঠে তুলে নলি। তাঁকে সাপের ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। সাপ ফনা তুলে তাঁর চারদিকে নাচতে লাগল। বিষ মাখানো খাবার খাওয়ানো হলো। তাতেও প্রহ্লাদের মৃত্যু হলো না। তারপর একদিন হিরণ্যকশিপু সিংহাসনেব বসে আছেন। ক্রোধে তাঁর চোখ লাল। তিনি প্রহ্লাদকে ডাকলেন।
প্রহ্লাদ বিষ্ণুনাম জপতে জপতে পিতার কাছে এলেন। হিরণ্যকশিপু ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে হুংকার দিয়ে বললেন, ‘আমি নিজের হাতে তোমাকে মারব। দেখি কে তোমাকে বাঁচায়!’ প্রহ্লাদ: বিষ্ণুই আমাতের বাঁচাবেন। হির্যণকশিপু: এখানে এসে? প্রহ্লাদ : তিনি সর্বত্রই আছেন , বাবা। হিরণ্যকশিপু: সর্বত্র! এই স্ফটিক সম্ভের মধ্যেও? প্রহ্লাদ: অবশ্যই, বাবা। হিরল্যকশিপু তখন হুংকার দিযে স্ফটিক স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেলেন। আর তখনই তার মধ্য থেকে বের হয়ে এলেন এক ভয়ংকর মূর্তি। তাঁর নাম নৃসিংহ। তাঁর মুখটা সিংহের মতো আর শরীরটা ‘নৃ’ অর্থাৎ মানুষের মতো। বের হয়েই হিরণ্যকশিপুকে দুই উরুর উপর রেখে বধ করলেন। প্রহ্লাদ কড়জোড়ে নৃসিংরূপী বিষ্ণুর স্তব করতে লাগলেন।