মোসায়েব নির্বাচন

পূর্ব্বে জমিদারগণ মোসায়েব রাখতেন। পাশের এক জমিদার গোপালকে বললেন, ‘অনেকেই মোসায়েব গিরি করবার জন্য আসছে কে যে উপযুক্ত হবে, আমি ঠিক তা বুঝে উঠতে পারছিনা। তুমি আমার জন্য একজন যোগ্য মোসায়েব নির্বাচন করে দিতে পার গোপাল ভাই? কারণ তোমার বুদ্ধি অনেকের চেয়ে সরেস। তোমাকে ছাড়া কাকেও ভরসা পাচ্ছি না।’

গোপাল জমিদারকে বললেন, ‘ঠিক আছে, যারা মোসায়েব গিরি করতে আসবে তাদের আমার কাছে এক এক করে পাঠিয়ে দেবেন, আমি নিশ্চয়ই একজন উপযুক্ত মোসায়েব নির্বাচন করে দিতে পারব যা আপনার মনের মতন হবে।’

নির্দিষ্ট দিতে প্রথম জন আসতে গোপাল তাকে জিজ্ঞেস করলে, ‘ওহে, তুমি মোসায়েব গিরি করতে পারবে তো?’
‘কেন পারব না? আমার বাপ-দাদা সকলেই যে মোসায়েব ছিলেন। তা কি আপনারা শুনেন নাই।’
‘জুতো সেলােই থেকে চন্ডী-পাঠ পর্যন্ত সব কাজ করতে হবে, তো?’
‘পারব মানে নিশ্চয় পারব।’
‘আমার মনে হয় তুমি পারবে না।’
‘আজ্ঞে কাজটা দিয়েই দেখুন না পারি কি-না। না হয় বিদেয় দেবেন।’

গোপাল দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বিদায় করে দিয়ে তৃতীয় ব্যক্তিকে ঘরে ডাকল। তৃতীয় ব্যক্তি ঘরে ঢুকলে গোপাল জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি জমিদারের মোসায়েব হতে পারবে তো?’
‘আপনার কি মহে হয় আমি পারব?’
‘তুমি পারবে।’
‘তা হলে পারব হুজুর।’
‘মোসায়েব হলেও সব কাজ ঠিকমত করতে পারবে না।’
‘আজ্ঞে না, তা অবশ্য পারব না।’
‘সূর্য যে পশ্চিমদিকে ওঠে, তা কি তুমি স্বীকার করঃ’
‘স্বীকার করি মানে? আমার চৌদ্দ-পুরুষ স্বীকার করতে বাধ্য।’

গোপাল তৃতীয় ব্যক্তিকেই মোসায়েব নির্বাচন করল। জমিদারও উপযুক্ত মোসায়েব লাভ করে গোপালের বুদ্ধির তারিখ করলেন এবং গোপালকে পুরস্কৃতও করলেন উচিত মত।

বূদ্ধ রাখাল

অপরাজিতা-রুপকথা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *