
কোনও এক বদমাইস লোকের প্ররোচনায় মহারাজ একদিন গোপালকে আদেশ দিলেন, ‘একটা বৃষ-দোহন করে, তার দুধ আমায় কাল এনে দাও।’ গোপাল যত বলে যে, বৃষ দোহন করে দুধ পাওয়া যেতে পারে না, মহারাজ সে কথায় কান দিলেন না মোটেই। অগত্যা গোপালকে বেরুতে হল। গোপালের মত ধুরন্ধর লোক টো টো করে ঘুরে কোন উপায় না বের করতে পেরে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। মনে মনে ভাবতে থাকে, কি করে এ যাত্রা বাচা যায়।
গোপাল কোনও বুদ্ধিই মাথায় খাটাতে পারল না। গোপালের স্ত্রী স্বামীর এই রকম অস্বাভাবিক আচরণ দেখে বিস্মিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলো। গোপাল বললো, মহারাজ আমাকে বৃষ দোহন করে দুধ নিয়ে যেতে আদেশ দিয়েছেন। কি যে করি? কোথায় যাই, কে আমাকে এ বিপদ রক্ষা করবে ভেবেই কুলকিনারা কোনও পাচ্ছি না।’ যদি ষাড়ের দুধ দিতে না পারি গর্দান যাবে। নিশ্চয়ই মহারাজ কারো প্ররোচনায় এমন অসম্ভব কাজ আমার ঘাড়ে চাপিয়েছেন। এখন কি করে রেহাই পাওয়া যাবে ভেবে স্থির করতে পারছি না।’
গোপালের স্ত্রী স্বামীকে বললে, ‘তুমি কাল আর বেরিয়ো না। যা করবার, আমি করছি। এই সামান্য কাজের জন্য এত চিন্তা।’ গোপালের স্ত্রী গোপালের চেয়েও সরেস বুদ্ধি ধরে কখনও কখনও। পরদিন খুব ভোরবেলাতেই রাজবাড়ির সম্মুখে নদির ঘাটে গিয়ে গোপালের স্ত্রী গাদা গাদা কাপড় সম্পদে কাচতে লাগলো। ওইখানটিতে মহারাজ রোজ সকালে ভ্রমন করেন। তিনি কাপড় কাচার শব্দ শুনে ভাবলেন এ সময় এখানে কিসের শব্দ?
কাছে এসে দেখলেন, এক পরমা লাবণ্যবর্তী মহিলা ধোপানীর মত কাপড় কাচতে ব্যস্ত দাড়িয়ে খানিকক্ষণ দেখলেন, আকৃতি দেখেই বুঝতে পারলেন এই নারী কোনো বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন বংশের মহিলা। তিনি সবিস্ময়ে বললেন, ‘ভদ্রে। এই কঠোর শ্রমের কাজ দাসীতেই করে। আপনি নিজে এই কাজ করছেন কেন? যদি বলেন, খুবই আনন্দিত হই।’
গোপাল মহিষী বললেন, ‘কি করবো বলুন বাবা দাসীর অসুখ করেছে। অথচ নতুন দাসী খুজে আনবার সামর্থ্ আমার স্বামীর আজ আপাতত নেই। কারণ, তিনি প্রসব বেদনায় একান্ত কাতর। কাপড় সিদ্ধ হয়ে গেছে, কাজেই নিজে কাপড় কাচা ছাড়া আর উপায় কি? ঘরে আর কেউ নেই যে কাজটুকু করে দেয়। ২/১ দিন ভেজা কাপড় ফেলে রাখাও যায় না নষ্ট হয়ে যাবে।’
মহারাজ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘স্বামী প্রসব বেদনায় কাতর? একি অসম্ভব কথা বলছেন আপনি? পুরুষেরা কি সন্তান প্রসব করতে পারে? এ আমি আপনার মুখে ছাড়া কোথাও কোনওদিন দেখা দুরের কথা শুনিওনি।’
গোপালের স্ত্রী বললেন, ‘কেন হবে না? যে দেশে, বৃষ দোহন করলে দুধ পাওয়া যায় সে দেশে পুরুষের পক্ষে সন্তান প্রসব করা কি এতই অসম্ভব। আজ শুনলাম আমাদের মাননীয় মহারাজ আদেশ দিয়েছেন একজনকে বৃষ দোহন করে দুধ আনতে।’
মহারাজ নিজের ভুল বুঝতে পারলেন এবং অনুমান করলেন, ইনি গোপালের স্ত্রী। তখন তিনি নিজে গোপালের বাড়ি গিয়ে গোপালকে ডেকে, প্রাসাদে নিয়ে গেলেন এবং সুকৌশলে এই ভুল ভাঙানোর জন্য গোপালের স্ত্রীকে বেশ ভালভাবেই পুরস্কৃত করলেন এবং যার প্ররোচনার তিনি গোপালকে এই কাজের জন্য বিড়ম্বিত করেছিলেন, তাকেও প্রচুর জরিমানা করেন।