শাহ্‌রবনু’র গল্প -২

মোল্লাবাজি শাহরবনুকে এক পোটলা তুলার পরিবর্তে তিন পোটলা তুলা আর গরু নিয়ে চারণভূমিতে পাঠিয়েছে গরুকে ঘাসা খাওয়ানো আর সূতা বানানোর জন্য। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটির পক্ষে এতো বেশি কাজ করা কী করে সম্ভব! তাই বিকেলের দিকে সে বসে কাঁদছিল। সে সময় হলুদ গরু এসে তাকে একটা পথ বাতলে দিলো। দৈত্যের কাছে গিয়ে সে দৈত্যের মন জয় করলো। দৈত্য শেষ পর্যন্ত তার সব কাজ করে দিয়ে বললো তৃতীয় উঠোনে গিয়ে ঝরনাধারার পাশে বসে  হলুদ রঙের পানি নিয়ে তার চোখে-মুখে-ভ্রু-তে মাখতে আর সাদা পানি দিয়ে চেহারা ধুতে। শাহরবনু মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে উঠোন পেরুলো।   শাহরবনু তৃতীয় উঠোনে গেল এবং বহমান পানির ধারার পাশে কসলো। দৈত্য যেভাবে যেভাবে বলেছিলো ঠিক সেভাবেই তার চোখ-ভ্রু-মাথা ধুয়ে নিলো কালো পানি দিয়ে আর সাদা পানি দিয়ে ধুইলো তার কচি চেহারাটা। তারপর ফিরে এলো দৈত্যের কাছে। দৈত্যের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরতে চাইলো সে। দৈত্য বললো: যখনই তোমার কষ্ট হবে কঠিন কাজের চাপ পড়বে চলে আসবে আমার কাছে। শাহরবনু অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে তার সূতাগুলো নিয়ে কূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। এসেই দেখে হলুদ রঙের গরুটা দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে তখন।
চারদিকে আঁধার নেমে আসছিল। কিন্তু শাহরবনু দেখলো তার পায়ের সামনে আলো। সুন্দরভাবে পথ দেখা যাচ্ছে। কোত্থেকে এ আলো আসছে সে দেখতে চাইলো তার চারপাশে।     অনেকক্ষণ পর সে বুঝলো এ আলো তার নিজের চেহারা থেকে আসছে। যখন সে তার চেহারায় সাদা পানি দিয়েছিল তখন তার কপালের মাঝখানে পূর্ণিমার চাঁদের মতো একটা আলো আর তার কাঁধের মাঝখানে একটা তারকা ফুটে উঠেছিল। শাহরবনু চিন্তায় পড়ে গেল। এই চাঁদ আর তারা নিয়ে সে যদি বাসায় ফিরে যায় মোল্লাবাজি তাকে আরও বেশি কষ্ট দেবে, জ্বালাতন করবে। তাড়াতাড়ি সে তার কপাল এবং কাঁধ ঢেকে নিলো স্কার্ফ দিয়ে। তারপর বাসায় গিয়ে মোল্লাবাজির হাতে সূতা বুঝিয়ে দিলো। তার দুষ্টু মা আশ্চর্য হয়ে গেল। মনে মনে বললো: শাহরবনু কী করে একদিনে তিন বস্তা তুলার সূতা বানালো! সে সূতাগুলো ভালো করে দেখতে শুরু করলো কোথাও কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায় কিনা; কিন্তু না, কোনো ত্রুটি ধরার সুযোগ পেল না সে। রেগেমেগে সে শাহরবনু বললো: যা! ঘর ঝাড়ু দে। তার টার্গেট ছিল অন্ধকারে ঘর ভালো করে ঝাড়ু না দিতে পারলে তাকে মার দেওয়ার অজুহাত পাবে সে।   মোল্লাবাজি রান্নাঘরের কাছে যেতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। কোত্থেকে যেন আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। পা টিপে টিপে সামনে গিয়ে দেখে শাহরবনুর কপালে ছোট্ট একটা চাঁদ। ওই চাঁদ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আর তার ঘাড় থেকে বেরুচ্ছে তারকার আলো। শাহরবনু এমনিতেই বেশ সুন্দর ছিল, এখন আরও সুন্দর হয়ে গেছে। মোল্লাবাজি শাহরবনুর হাত ধরে রুমের ভেতর নিয়ে বললো: মার খাবার আগে সত্যি করে বল কীভাবে এসব হয়েছে। এই চাঁদ এই তারা কীভাবে কোত্থেকে পেলি? শাহরবনু এমনিতেই সহজ সরল ছিল। সে সবকিছু খুলে বলে দিলো মোল্লাবাজিকে। মোল্লাবাজি কিচ্ছু না বলে ভাবলো পরদিন তার মেয়েকে শাহরবনুর সাথে পাঠাবে যেন সেও ওই কূপে যায় এবং কপালে চাঁদ আর কাঁধে তারা নিয়ে ফেরে।

মোল্লাবাজি শাহরবনুর সাথে ভালো ব্যবহার করতে শুরু করলো। তাকে আদর করে বললো: শাহরবনুজান! কাল তুমি তোমার সাথে আমার মেয়েকেও নিয়ে যাবে,কেমন! তোমার বোনকেও ওই কূপের ভেতর পাঠাবে। তুমি যা যা করেছো সব তাকে শিখিয়ে দেবে যাতে ওর কপালে আর ঘাড়েও তোমার মতো চাঁদ আর সেতারা ফুটে ওঠে, কেমন! তাহলে সেও তোমার মতো সুন্দরী হয়ে উঠবে। শাহরবনু বললো: ঠিক আছে! আমি তাকে সাহায্য করবো। পরদিন সকালবেলা মোল্লাবাজি তিন পোটলার বদলে আধা পোটলা তুলা দিলো শাহরবনুকে কারণ আজ তার নিজের মেয়েও যাচ্ছে। দুপুরের খাবারের জন্য শুকনো রুটি আর বাসি পনিরের পরিবর্তে মুরগির কাবাব এবং দুধের তৈরি রুটি দিলো। মোল্লাবাজির মেয়ে শাহরবনুর হাত ধরে চললো চারণভূমির দিকে। তাদের সঙ্গে রয়েছে হলুদ গরু মানে শাহরবনুর প্রকৃত মা।   যেতে যেতে একসময় তারা গিয়ে পৌঁছলো চারণভূমিতে। মোল্লাবাজির মেয়ে শাহরবনুকে বললো: তাড়াতাড়ি আমাকে ওই কৗপে নিয়ে যাও! শাহরবনু তা-ই করলো। সে কূপ দেখিয়ে দিলো।

মোল্লাবাজির মেয়ে তুলাগুলো ফেললো ওই কূপে এবং সে নিজেও ঢুকে গেল কূপের ভেতর। ভেতরে গিয়ে দেখলো একটা বাগিচায় ঘুমোচ্ছে ওই দৈত্যটা। মোল্লাবাজির মেয়ের পায়ের শব্দের দৈত্যের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে দেখলো বিশ্রী একটা মেয়ে তার সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা তাকে কোনোরকম সালামও করলো না। দৈত্য তাই গভীর দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটাও অপলক চোখে তাকিয়ে থাকলো দৈত্যের দিকে।#

আসিফ ও দানবের গল্প

শাহারবনু’র গল্প-১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *