আমার প্রথম অনুভূতি ও তুমি

প্রথম সব কিছুর অনুভূতি-ই একটু অন্যরকম। জ্ঞান হওয়ার পর প্রথম গোসলের অভিজ্ঞতা আজো মনে পরে। ঢাকা থেকে তখন মাত্র গ্রামে গিয়েছি। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদের কারনে সবাই একসাথে দৌড়ে পুকুরে চলে এসেছি গোসল করব বলে। একা দাড়িয়ে আছি পুকুর পাড়ে। আমারদের পুকুর পাড়ে একটি বিশাল জামগাছ ছিল। পুকুর পাড়ে প্রচুর জাম পরে থাকত। আমি জাম কুড়াচ্ছি আর আমার সমবয়সী সকলে পুকুরে দাপাদাপি করছে। আমি চিন্তা করছি কেমন করে কোনদিক দিয়ে নামলে ভালো হবে। কারন, গোসলে আসার আগেই আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।
আমার এক আত্নীয় বলেছিল যে পুকুরে নাকি পানিভুত থাকে। হুটহাট, যখন তখন, যাকে তাকে পানির নিচে নিয়ে যায়। ঐটা নাকি পানির দেশ। ঐ দেশে নাকি অনেক পানিভুত থাকে। তাদের কাজ হচ্ছে পানিতে থাকা আর বাচ্চা পোলাপান ধরে নিয়ে যাওয়া। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম পানিভুত চিনব কেমন করে আর কিভাবে এর হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব। আর গ্রীষ্মকালে যখন পানি শুকিয়ে যায় বা পুকুরের পানি সেচে ফেলে তখন পানিভুত কই থাকে? এই সব প্রশ্ন শুনে আমার ঐ আত্নীয় কতক্ষন আমতা আমতা করে জবাব না পেয়ে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে ছিল আর বলেছিল “পোলাপাইন মানুষ এত কিছু জাইন্যা কাম নাই। যা তাড়াতাড়ি গোসল শেষ কইরা আইয়্যা পরবি” আশানুরুপ উত্তর না পেয়ে বিষণ্ণ মনে গিয়েছিলাম পুকুর পাড়ে। যাই হোক, কতক্ষন একা দাড়িয়ে থেকে সাত পাঁচ না ভেবে হুট করেই লাফিয়ে পরলাম। পানিতে মিনিটখানেক থাকার পর পানিভুতের ভয় কই যে হারিয়ে গেল! প্রথম পুকুরে গোসল করার স্মৃতি এতুটুকুই। ছোট্টবেলার পানিভুত নিয়ে যে প্রশ্নটা করেছিলাম, দীর্ঘ অনেক বছর পর সেই একই প্রশ্ন তাকে আবারো করেছিলাম। আমার প্রশ্ন শুনে সেই আত্নীয় একগাল হেসে বলেছিল ‘এই কথা তর অহনো মনে রইছে? ’ উত্তরে আমিও একগাল হেসেছিলাম।
প্রথম স্কুলে যাওয়ার স্মৃতিও আমার মনে উকি দেয় মাঝে মাঝেই। যদিও পড়াশুনা মোটেও ভালো লাগেনা। Sir ‘Albert Einsteine’ বলেছিলেন “Education is the process of wasting half of your life to know, how to waste remaining half of your life.” আফসোস, বড় দেরি করেই জেনেছি কথাটা। এই কথাটা যখন জানলাম, ততক্ষনে Education কে সাথে নিয়ে জীবনের অনেকটা পথই পাড়ি দিয়ে দিয়েছি। যাই হোক, আমার প্রথম স্কুল ছিল ‘মীর-হাজিরবাগ স্কুল’ সেই স্কুলে যাওয়া, স্কুলে গিয়ে আম্মুকে খোজা, ভয়ে ভয়ে ভ্যা করে কেঁদে ফেলা। সব কিছুই ভাসে চোখের সামনে। প্রথম হাইস্কুলে পড়া, প্রথম স্কুল পালানো, সত্যি এ এক অন্যরকম অনুভূতি। আমি প্রথম আব্বু আম্মুর সাথে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখি ১৯৯১ সালে। ছবির নাম ছিল “কাসেম মালার প্রেম” প্রথম নিজের টাকায় ছবি দেখেছিলাম ১৯৯৯ সালে বন্ধুদের পাল্লায় পরে। স্কুল পালিয়ে, ১৭টাকা দিয়ে ব্ল্যাকে টিকেট কেটে, ১টিকিটে ২ ছবি দেখেছিলাম। ব্যাটা ব্ল্যাকার মহা শয়তান। পোলাপান পেয়ে এক্কেবারে সামনের সিটের টিকিট ধরিয়ে দিয়েছিল।
তবে পুরো ৩টি ঘন্টা ঘাড় উচু করে থাকলেও সময় কেটেছে অনেক রোমাঞ্চের সাথে। আসলেই সে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি! তবে এর পর আর আমাকে ব্ল্যাকাররা ঠকাতে পারেনি। ব্ল্যাকারের কাছ থেকে টিকিট কিনে সেই ব্ল্যাক টিকিটও ব্ল্যাক করার প্রথম অনুভুতিটাও কিন্তু অন্যরকমই ছিল! প্রথম শেভ করা, প্রথম দাড়িগোঁফ রাখা। নিজেকে বড় মনে করা, তাও কি ভুলে যাওয়া যায়? প্রথম ট্রেনে উঠার আনন্দ ভুলে যাবার মত না। অনেক দিনের ইচ্ছা পুরন করেছে ঐ ট্রেনযাত্রা। প্রথম লঞ্চ জার্নি ছিল ভীষণ আনন্দের, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে।  সেটা ছিল সিনিয়র ভাই ও বন্ধুদের সাথে ‘ঢাকা টু সুন্দরবন’ ট্যুর। প্রোগ্রামের অরগানাইজার ছিলেন আমাদেরই এক বড় ভাই। প্রচণ্ড শীতে লঞ্চে আড্ডা দেয়া, সুন্দরবনের সুন্দর জায়গাগুলোয় ঘুরে বেড়ানো, শেষ বিকেলে লঞ্চের ছাদে বসে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য আর রাতে Bar-B-Q Party. তারপর আবার সিনিয়র ভাইদের সাথে সারারাত তাস পেটানো। ভোর ৪টা ৫টার দিকে ঘুমোতে যাওয়া… এক কথায় ‘ A wonderful journey by launch”. জীবনে আরো বেশ কয়েকবার সুন্দরবন যাওয়ার সুযোগো হয়ত হবে, কিন্তু প্রথম বারের মত মজা হয়ত এই জীবনে আর পাবনা। প্রথম যেদিন তোমায় দেখি সেটাও ছিল অন্যরকম। তুমি আমায় ভুলে গেলেও আমি কিন্তু তোমায় ভুলতে পারিনি। এবং আমি যা ভাবিনি তাই হল তোমার আমার সাথে। কি থেকে কি হয়ে গিয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে তা ভেবেই পাই না। প্রথম তোমার ঐ কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা নিস্পলক, তোমারই অজান্তে। প্রথম তোমার মুখোমুখি দাড়িয়ে কথা বলা। প্রথম তোমার সাথে রিকশায় চড়া এবং রিকশার ঝাকুনিতে একটু একটু করে আলতো স্পর্শ পাওয়া। অনেক গরমেও তোমার সাথে আছি ভেবেই শিহরিত হয়ে যাওয়া। উফফ! কেমন করে প্রকাশ করব তুমিই বলে দিও। প্রথম তোমার লাই পেয়ে মাথায় উঠে যাওয়ার কথা মনে পরলে একা একাই হাসি। প্রথম তোমার সাথে মোবাইলে কথা বলার সময় ভাবতেও ভালো লেগেছিল যে তোমার সাথে কথা বলছি! প্রথম তোমায় স্বপ্নে দেখা ভুলে যাওয়ার মত নয়। অবাক করা ছিল সেই স্বপ্নটা।
সেই অবাক করা স্বপ্নে দেখেছিলাম ‘আমি দাড়িয়ে আছি কোন একটা সমুদ্র সৈকতের ধারে আর তুমি কোথা থেকে যেন দৌড়ে আমার কাছে এসে হাপাতে লাগলে। সবকিছু ছেড়ে আমার কাছে চলে এসেছিলে। আর আমাকে বলছিলে “আমি কিচ্ছু জানিনা, কোথায় থাকব তা জানিনা but তোমার সাথে থাকব তা ই জানি” এই ছোট্ট কিন্তু অবাক করা এবং ভীষণ ভালোলাগার স্বপ্নটা আমাকে অনেকক্ষণ বিছানা ছেড়ে উঠতে দেয়নি। কারন, উঠলেইতো অনুভুতিটা হারিয়ে যাবে, হুট করেই। কবিগুরু শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতার দুটি লাইন মনে পরছে- “প্রহর শেষে আলোয়া রাঙা সেদিন চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ” তোমাকে ভীষণ রকমের ভালো লেগে যাওয়াটাই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল। যা কিনা এই জীবনে আর কোনদিনও হবে না। কারো সাথে হবে না। এমন অনেক কিছু আছে, যা এক জীবনে একবারের বেশি হয় না।
তোমায় ভালো লাগাটাও তেমনি একটা ব্যাপার। যার খেসারত হয়ত শুধু আমিই দিয়ে যাব। এক জনের চোখের দিকে তাকিয়ে আরেকজনকে পাগলের মত খুজে বেড়ানোর কষ্ট তুমি কেমন করে বুঝবে? “পিপীলিকার মন জেগেছে আজ রঙিন ফাগুনে মরণ হবে জেনেও সে ঝাপ দেয় আগুনে” —সংগৃহীত

কোরবানি

কাবা গৃহের প্রতিষ্ঠা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *