
শুধু সুদৃঢ় আকাঙ্ক্ষা করে চুপটি করে সোফায় বসে থাকলেই সাফল্য আসবে? না এক্কেবারে না, এমনকি একরত্তি আলপিনও একচুল পরিমাণ নড়বে না। তাহলে উপায়? হ্যাঁ, আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে চাইলে দরকার সাধনা আর সাধনা।
যেমনটি রাসূল (সাঃ) বিজয়ের জন্যে সব ছেড়েছুড়ে পনের বছর শুধু ধ্যান করেছেন, তের বছর প্রচন্ড ধৈর্য্য ধরে দাওয়াত দিয়েছেন, আর দশ বছর এমনকি মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত জিহাদ চালিয়ে গেছেন।
ইমাম বুখারী (রহ) কুরআনের পর সবচেয়ে সেরা গ্রন্থ বুখারী শরীফ রচনা করতে গিয়ে, একটি হাদিস সংগ্রহে তিনশ মাইল হেঁটেছেন। ঠিক তেমনি স্কটল্যান্ডের রবার্ট ব্রুস তার দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে শক্তিশালী বৃটেনের বিরুদ্ধে পাঁচবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে প্রতিবারই পরাজিত হন।
অতঃপর এক গুহায় আত্মগোপন অবস্থায় দেখতে পান একটি মাকড়সা জাল বুনতে গিয়ে পাঁচবার ব্যর্থ হয়ে ছয়বারের বার সফল হয়। তিনি লজ্জিত হয়ে এই ক্ষুদে মাকড়সা থেকে শিক্ষা নিয়ে ষষ্ঠ বার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বৃটেনের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন।
প্রায় এক হাজার নতুন বিষয়ের আবিষ্কারক বৈজ্ঞানিক এডিসনের মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক পত্রিকায় লেখা হয় মানুষের ইতিহাসে এডিসনের মাথার দাম সবচেয়ে বেশি। কারণ এমন সৃজনশক্তি অন্য কারো মধ্যে দেখা যায়নি।
অতঃপর ১৮৭৯ সালের ২১ অক্টোবর তার আবিস্কৃত পৃথিবীর প্রথম বৈদ্যুতিক বাতিটি যখন জ্বলে উঠলো, তখন ক’জন জানতো যে বিগত দু’বছরে তিনি এটি নিয়ে প্রায় দশ হাজার বার ব্যর্থ চেষ্টা করে আজ সফল হয়েছেন! সত্যি সাফল্যের পেছনে কি নিদারুণ সাধনা।
বিটোফেন সম্ভবত সাধনায় সকল সুরকারকে ছাড়িয়ে যাবেন। তার স্বরলিপিতে এমন একটি দাঁড়ি নেই, যা অন্তত বারো বার কাটাকাটি করা হয়নি। গিবন তার আত্মজীবনী নয়বার লিখেছিলেন। তিনি শীতগ্রীষ্ম সবসময়ই ভোর ছয়টায় পড়ার ঘরে ঢুকতেন।
এভাবে ত্রিশ বছরের চেষ্টায় বিশ্ববিখ্যাত ‘দি ডিক্লাইন এন্ড ফল অফ রোমান এম্পায়ার‘ গ্রন্থটি লেখেন। বাটলার তার এনালজি লিখেছেন বিশবার। আমরা মানুষের সংগ্রামী জীবনে দেখি সাধনার মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে সবাইকে চমকে দিয়ে কিভাবে অন্ধ মানুষ মিল্টন বিশ্ববিখ্যাত কবি হলেন।
একজন অন্ধ, বধির মানুষ বিটোফেন কিভাবে সঙ্গীত রচয়িতা হলেন। একজন অন্ধ, বোবা আর বধির মেয়ে হেলেন কিলার কিভাবে সাধনা করে চব্বিশ বছর বয়েসে তার কাজে সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে বি.এ পাস করলেন এবং পরবর্তীতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলেন।
কিভাবে একজন কাঠুরিয়ার ছেলে আর মুদি দোকানদার বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন হলেন। এসব কিছুর পিছনে যাদুর মতই যে বিষয়টি কাজ করেছে তা হচ্ছে সাধনা- নিরবচ্ছিন্ন সাধনা।
আর তাইতো বৈজ্ঞানিক এডিসন বলেছেন, “প্রতিভা – একভাগ প্রেরণা আর নিরানব্বই ভাগ পরিশ্রম ও সাধনা।” লংফেলো আরো বলেছেন, “প্রতিভা মানে অপরিসীম পরিশ্রম“। সবাইকে চমকে দিয়ে একটি কথা বলেছেন, স্পেলার “প্রতিভা বলে কিছু নেই। সাধনা করো-সিদ্ধিলাভ একদিন হবেই।”