একটা দুঃস্বপ্ন। স্বপ্নটা চলছেই, থামার কোনো নাম নেই।
হঠাৎ উঠে বসল সুমন। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল যেন।
এমন স্বপ্ন মানুষ দেখে!
ডানদিকে ফিরে তাকাতেই চমকে উঠল—
ওটা তো আয়না! আয়নায় নিজেকেই দেখল সে।
সারারাত আর ঘুম আসবে বলে মনে হয় না।
স্বপ্নটা ভয়ানক ছিল—
কে যেন ওকে বেঁধে রেখেছিল, পা দুটো খোলা। ও হাঁটছে, আর কোথা থেকে যেন অজস্র কুড়াল উড়ে আসছে ওর দিকে!
কয়েকবার কিভাবে যে বেঁচে গেছে, নিজেই জানে না।
একবার ভেবেছিল স্বপ্নটা নিয়ে, তারপর নিজেকেই বলল—
“দুঃস্বপ্ন নিয়ে ভেবে কী হবে? ঘুমানোর চেষ্টা করি।”
শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ মিলির কথা ভাবল। ভাবল, তাতে হয়তো ঘুম এসে যাবে।
কিন্তু না—ঘুম এল না।
রাতটা কোনোমতে পার করল সুমন
মিলি সুমনকে দেখে চমকে উঠল।
— “কি হয়েছে তোমার?”
— “কিছু না।”
— “এমন চেহারা কেন?”
— “কিছু না বললাম তো।”
— “বল না, কি হয়েছে?”
— “চুপ করো তো! কথা বলতে ভালো লাগছে না।”
ইদানীং এটা সুমনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে— কথায় কথায় রেগে যায়।
মিলি কিছু বলেনি। ভেবেছে, সময় হলে ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু সুমনের এই অভ্যাসটা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
কি হয়েছে ওর? কিছু তো বলেও না!
এদিকে সুমনের মাথায় অন্য চিন্তা।
ফটোগ্রাফি কোর্সের জন্য ওকে যেতে হবে সোনারগাঁ — আগামীকাল।
কোনোভাবেই মনোযোগ দিতে পারছে না। ভাবল, যেভাবেই হোক আজ রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে হবে।
রাতে বাসায় ফিরে সময়মতো শুয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা লাগতে শুরু করল।
এসি বোধহয় বেশি বাড়ানো!
রিমোট নিয়ে অফ করে দিল এসি।
তারপরও ঠান্ডা লাগছে কেন? বাইরে কি বাতাস বেশি?
জানালাটা তো সামান্যই খোলা।
উঠে বসল ও।
ডানে তাকাতেই — আয়নার দিকে — ভয়াবহভাবে চমকে উঠল!
ওটা কি! গাছের ওপর সাদা আলখেল্লা পরা কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে।
না, শুধু দাঁড়িয়ে নয় — হাততালি দিচ্ছে!
আয়নায় দেখছে, মানে ওর পেছনেই জিনিসটা!
ভয়ের এক শীতল শিহরণ বয়ে গেল সারা দেহে।
পেছনে না তাকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও পেছনে তাকাল।
কিছুই নেই।
আবার আয়নায় তাকাল —
সেখানেও কিছু নেই।
চোখের ভুল? মনের ভুল?
সেই রাতেও আর ঘুম হল না ওর।
ভোরেই ঘুম ভাঙল। আজ যেতে হবে সোনারগাঁ। খেয়ে-দেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল।
সকালে নয়টার মধ্যেই পৌঁছে গেল টিমসহ।
প্রথমে এলাকাটা ঘুরে দেখল সবাই।
সুমনের মনে খটকা —
জায়গাটা কোথায় যেন দেখেছে!
কিন্তু মনে করতে পারছে না কিছুতেই।
ওই তো, দাবার বোর্ডের মতো মার্বেল পাথরের মেঝে,
ওপরে ঝাড়বাতি লাগানোর জায়গা…
কোথায় যেন দেখেছে!
ভাবতে ভাবতেই ক্যামেরা চোখে লাগাল ও।
আর তখনই দেখতে পেল — একটা কুড়াল ছুটে আসছে ওর দিকে!
সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়ল মাটিতে।
কিন্তু কোথায় কি! কিছুই নেই।
তখনই মনে পড়ল —
এই জায়গাটা ওর স্বপ্নে দেখেছিল!
ভয় পেয়ে গেল সুমন।
আবার ক্যামেরা চোখে লাগিয়ে দেখল — কিছুই নেই।
বিভিন্ন জায়গার ছবি তুলে টিমসহ ফিরে এলো ঢাকায়।
দিনে দিনে কাজে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে সুমন।
ওর মাথায় শুধু সেই দৃশ্যগুলো ঘুরছে।
অদ্ভুতভাবে, এখন ওরও ইচ্ছে হচ্ছে ঠিক স্বপ্নের মতো কিছু করতে।
রাত নামতেই গাড়ি নিয়ে রওনা দিল আবার সেই জায়গার দিকে।
ভাবল, “আজ কিছু একটা ঘটুক… মরে গেলেও যাক।”
চারিদিকে অন্ধকার।
দূরে স্ট্রিটলাইটের আবছা আলো।
মেইন গেট খুলে ভিতরে ঢুকল ও।
কিছুই দেখা যায় না। হাঁটতে হাঁটতে সেই ঘরটা খুঁজে পেল।
ভাবল, “স্বপ্নের মতো কে আমাকে বেঁধে দেবে?”
চিন্তাটা বাদ দিল।
সঙ্গে ক্যামেরা ছিল। কয়েকটা ছবি তুলল।
বাসায় ফিরে ছবিগুলো ওয়াশ করল।
ছবিগুলো দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল সুমন —
প্রত্যেকটা ছবিতেই সাদা কাপড় পরা ভূতটা আছে!
লেন্সের সামনে বা আশেপাশে… কিন্তু একবারও চোখে পড়েনি!
ভয় পেল ও।
মেজাজ খারাপ হল।
ভাবল, “যেই গাছে ভূতটা দেখেছিলাম, সেখানে যাই।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাছটার নিচে দাঁড়াল।
চারদিক নিস্তব্ধ। কিছুই নেই।
অল্প পরেই ভূতটা ভেসে এল কোথা থেকে যেন।
সুমন ভয় পেল, কিন্তু ভূতটা থেমে গেল।
তারপর উল্টো দিকে ভেসে চলল।
অবাক হয়ে সুমন ভূতটার পিছনে হাঁটতে লাগল।
ভূতটা যাচ্ছে, সুমনও যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর মনে হলো — আর যাওয়া ঠিক হবে না।
ফিরতে হবে।
কিন্তু না — সুমন দেখতে পেল, পিছনে যেতে পারছে না ও।
পা দুটো যেন নিজের ইচ্ছেমতো সামনেই চলেছে।
ভূতটার পিছনে পিছনে…
হাঁটতে হাঁটতে কবে যে এক গোরস্থানের ভিতর ঢুকে পড়েছে, বুঝতেই পারেনি।
একসময় হোঁচট খেয়ে একটা গর্তে পড়ে গেল।
ভূতটা আর দেখা যাচ্ছে না।
উপুড় হয়ে পড়ে আছে ও। ধীরে ধীরে ঘুরে আকাশের দিকে তাকাল—
আর তখনই সজোরে একটা কুড়াল এসে আঘাত করল মাথায়।
সুমন মারা গেল।
সুমনের বাসায় এসেছে মিলি।
আজ চার দিন হলো সুমন মারা গেছে।
মিলাদে এসেছে ও।
কেউ বুঝতে পারেনি কেন সুমন ওভাবে মারা গেল।
কেঁদে কেঁদে চোখ লাল হয়ে গেছে মিলির।
ও খুব ভালোবাসত সুমনকে।
সুমনের ঘরে ঢুকল মিলি —
ওর ব্যবহার করা কিছু জিনিস নিতে, স্মৃতিস্বরূপ।
আয়নার সামনে এসে বসল।
চোখ লাল, ভিজে।
নিজেকে আয়নায় দেখে অঝোরে কান্না শুরু করল।
মুখ নিচু করে কাঁদছে।
কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে আয়নায় জানালার দিকে তাকাল।
গাছটা চোখে পড়ল।
মুখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকাল মিলি।
কিন্তু…
মিলির প্রতিবিম্বটা মিলির মতো উল্টো দিকে মুখ ফেরায়নি।
আয়নায় মিলির প্রতিবিম্বটা লাল চোখে, ঠোঁটে এক ক্রূর হাসি নিয়ে, মিলির দিকেই তাকিয়ে আছে।
মিলি তখনও জানে না—
কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে সে…
সুমনের পর এবার হয়তো ওর পালা…
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।