হযরত মুছা (আঃ)-কে মিশরের নেতৃত্ব দান- ১ম পর্ব
আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনকে তার দলবলসহ নীল নদে নিম্মজ্জিত করার পরে হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি অহি পাঠিয়ে তাকে দলবলে মিশর যেতে আদেশ দিলেন এবং এবং ফেরাউনের নির্মিত রাজপ্রাসেদের সিংহাসনে আহরণের জন্য বললেন। হযরত মুছা (আঃ) আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ অনুসারে সকল লোক জন নিয়ে মিশর অভিমুখে যাত্রা করলেন।
এবার নীল নদের তীরে গিয়ে নৌকার মাধ্যমে নীল নদ পার হয়ে সোজা ফেরাউনের দরবারে পৌঁছালেন। সেখানে সুউচ্চ অট্টলিকা, মেহমান খানা, আম দরবার, খাস দরবার শবই শুন্য পড়েছিল তিনি গিয়ে বনি ইসরাইলদেরকে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের নিমিত্ত সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। এতে রাজ দরবার পুনরায় লোকারণ্য হল। পরিবর্তন শুধু এত টুকু হল এযাবত দরবার ছিল কাফের ও ধর্মদ্রোহীর হাতে আর এখন এল ঈমান দার ও ন্যায় পরায়নদের হাতে।
হযরত মুছা (আঃ) সিংহাসনে অধিকার করে ঘোষণা দিলেন এখন হতে এ রাজ্যের মালিক আল্লাহ তায়ালা নিজে। এখানে আইন ও শাসন চলবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার । কোন মানুষের সামান্য ইচ্ছা ও সজ্জিত এখানে বরদাস্ত করা হবে না। অতএব রাজ্য পরিচালনার জন্য কোন বড় বিধান বিচক্ষণ শক্তিধরের প্রয়োজন নেই। সাধারণ একজন গোলাম ও এই রাজ্য পরিচালনা করতে পারবে। অতএব রাজ্য পরিচালনা করার জন্য আপাতত কয়েক জনের উপর দায়িত্ব প্রদান কর হল। তারা পরামর্শ করে ইনসাফের ভৃত্তিতে রাজ্য পরিচলনা করবে।
যাতে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি লাভ করা আমাদের পক্ষে সহজ হয়। তিনি সারা দেশের মানুষকে আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনার জন্য দাওয়াত দিলেন। নবীর দাওয়াত এ সারা দেশের মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করল। আর যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে সম্মত হল না তারা দেশ ত্যাগ করল। একদিন কয়েক জন লোক এসে হযরত মুছা (আঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করল হে নবী! আপনার দোয়ার বরকতে ফেরাউন ও তার সঙ্গী সাথী সমূলে ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু ফেরাউনের প্রধান মন্ত্রী হামান জিবীত থাকল কেমন করে? হযরত মুছা (আঃ) এ কথা শুনে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে হামানের বিষয় জানতে চাইলনে। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাকে জানান হল হে নবী! হামান কে আরেক ধরনের গজবের মধ্যে ফেলে মানুষের নিকট আর একটি নিশর্দন স্থাপন করেছি। বিরাট প্রতাপশালী উজির হামান আজ নিঃস্ব। সে আজ অন্ধ অবস্থায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ফিরছে। সারা দিনের চেষ্টায় যা কিছু সে সংগ্রহ করে তা দ্বারা তার নিয়মিত রিজিক চলে না। এটা তার খোদাদ্রোহী ভয়াবহ পরিনামের ফল নয় কি? তোমরা তার আরও শোচনীয় অবস্থা দেখতে পারবে।
হযরত মুছা (আঃ) অল্প দিনের মধ্যে রাজ দরবার ও রাজ্যের অবস্থা ফিরিয়ে আনলেন, যদিও মিশর এর অধিকংশ মানুষ ইসলামের দাওয়াত কবুল করল এবং অতি সামান্য সংখ্যক লোক ইসলাম গ্রহনের ইতস্তত করছিল। হযরত মুছা (আঃ) তাদের প্রতি কখনই তাদের দূর ব্যাবহার করেন নাই। বরং সর্বদা তাদেরকে বুজিয়ে নম্র ভাষায় দাওয়াত দিতেন। হযরত মুছা (আঃ) কিছুটা নিশ্চিত হয়ে তার স্ত্রী ছফুরার নিকট গমন করেন। চল্লিশ বছর পুর্বেই দুই সন্তান সহ তার স্ত্রী ছফুরাকে মাদায়েনের এক পার্বত্য অঞ্চলে রেখে আল্লাহার তালার নির্দেশ ক্রমে মিশর চলে আসেন।
পরে নিজ হেদায়াতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি আর স্ত্রী পুত্রের খবর নিতে সক্ষম হয়নি। এবার তিনি দায়িত্ব সম্পাদন করে পরিবারের খবর নিতে অগ্রসর হলেন তিনি একটা একদল সৈন্য নিয়ে যথাস্থানে পৌঁছে দেখলেন স্থানটি শহরে পরিণীত হয়েছে। সেখানে অনেক ইমারাত ও অট্টলিকা গড়ে উঠেছে এবং মানুষের বস্তি স্থাপন হয়েছে। তিনি প্রথমে ছফুরার খোঁজ নিয়ে এক সুউচ্চ অট্টলিকায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিবি ছফুরা চল্লিশ বছর পর স্বামীকে দেখে আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন।
হযরত মুছা (আঃ) স্ত্রী ও পুত্রদের সাক্ষাৎ পেয়ে অবশেষে তৃপ্তি পাভ করলেন। দীর্ঘ সময় তারা একসাথে বসে বিগত দিনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন। বিবি ছফুরা বললেন, আপনি আমাদের এখানে রেখে যাওয়ার পরে আমরা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার রহমত লাভ করেছি। কোনদিন অসুবিধা বা সমস্যা সম্মুখীন হয়নি। আমরা এখানে বসে সর্বদা আপনার জন্য দোয়া করেছি। এছাড়া আপনার আমানাত মেষ, ও ছাগলগুলোকে প্রতিপালন করছি।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুছা (আঃ)-কে মিশরের নেতৃত্ব দান- ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন