ব্যবসায়ী ও তার তিন ছেলের গল্প (দ্বিতীয় পর্ব)

আমরা শুনেছিলাম জুযারের প্রতি বাবার ভালোবাসা ও স্নেহ একটু বেশি থাকার কারণে অপর দু’ভাইয়ের ঈর্ষার কথা। সেলিম এবং সালেম এমনকি মায়ের সম্পদটুকুও জোর করে কেড়ে নিয়ে খরচ করে অবশেষে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছে। ভিক্ষা করতে করতে একদিন জুযারের বাসায় এসে জুযার এবং মায়ের সন্ধান পায়। জুযারের ঔদার্যে সেলিম এবং সালেম তার বাসাতেই খায় আর ঘুমায়। জুযার মাছ ধরতে গিয়ে সপ্তাখানেক কোনো মাছই পায় না। খালি হাতে ফিরতে দেখে রুটির দোকানদার তাকে রুটি এবং টাকা ধার দেয়। তা দিয়েই সংসার চলে। এরপর জুযার সিদ্ধান্ত নেয় সমুদ্রের দিকে আর না গিয়ে কারুন নদীর দিকে যাবে।

 

কারুন নদীর দিকে যায় জুযার। তীরে গিয়ে জাল ফেলতে যাবে ঠিক সে সময় দেখে অদ্ভুত এক দৃশ্য! একটা লোক খচ্চরের পিঠে সওয়ার হয়ে তার সামনে আবির্ভূত হয়। ওই লোকটার পরনে ছিল বেশ দামী পোশাক। খচ্চরের পেটের জিনটাও ছিল সোনালি এবং রূপালি কারুকার্যময়। লোকটা খচ্চরের পিঠ থেকে নীচে নেমে এলো। জুযারকে সালাম দিয়ে বললো: ‘তোমার কাছে আমার একটা আবদার আছে। যদি তুমি আমার কাজটা করে দাও তাহলে তোমাকে আমি বিপুল পরিমাণে পুরস্কার দেবো’।

জুযার বললো: ‘আগে বলো তোমার কাজটা কী’?

 

 

লোকটি তার খচ্চরের জিন থেকে একটা রেশমি সূতা বের করে বললো: ‘এই সূতা দিয়ে আমার হাত-পা বাঁধবে। তারপর আমাকে ফেলে দেবে নদীতে। নদীর পানিতে ডুবে যাবার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে। যদি দেখো পানির ভেতর থেকে আমার দুই হাত বেরিয়ে আসছে, তাহলে তুমি জাল মেরে আমাকে তুলে আনবে।

 

আর যদি দেখো পানির ভেতর থেকে আমার দুই পা বেরিয়ে আসছে তাহলে ধরে নেবে আমি মরে গেছি। তখন তুমি আমার আশা ছেড়ে দিয়ে আমার খচ্চর এবং খচ্চরের পিঠের মূল্যবান জিনটা নিয়ে বাজারে যাবে। বাজারে এক ইহুদি ব্যবসায়ী আছে ‘শামিয়া’ নামে। তার কাছে যাবে। তাকে খুঁজে পেলে এই জিন আর খচ্চর তাকে বুঝিয়ে দেবে। সে তোমাকে ১০০ স্বর্ণমুদ্রা দেবে। তুমি ওই স্বর্ণমুদ্রাগুলো নিয়ে নিজের কাজে চলে যাবে’।

 

জুযার লোকটার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ মেরে থেকে অবশেষে মেনে নিলো। লোকটাকে ওই রেশম সূতা দিয়ে ভালো করে বাঁধলো। তারপর ছুঁড়ে মারলো পানিতে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর লোকটা পা-দুটো ভেসে উঠলো। সে বুঝলো লোকটা মরে গেছে।

 

তাই জুযার খচ্চর আর দামী জিনটা নিয়ে চলে গেল বাজারে। বাজারে গিয়ে বহু খোঁজাখুঁজি করে শামিয়া’কে পেল। লোকটার নির্দেশনা অনুযায়ী শামিয়াকে জিন আর খচ্চরটা বুঝিয়ে দিলো এবং শামিয়াও জুযারকে এক শ’ স্বণর্মুদ্রা দিয়ে দিলো। কিন্তু স্বর্ণমুদ্রা দেওয়ার সময় ইহুদি শামিয়া জুযারকে বলে দিলো এই ঘটনাটা যেন কাউকে না বলে। জুযার স্বর্ণমুদ্রাগুলো নিয়ে বাসায় রওনা হয়ে গেল।

 

 

স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে বাসায় যাবার পথে পড়লো সেই রুটির দোকান-যে দোকানদার জুযারকে রুটি এবং টাকা ধার দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। জুযার দোকানদারের সকল পাওনা মিটিয়ে দিলো। কিছু রুটি আর গোস্ত কিনে চলে গেল বাড়িতে। যথারীতি গোশত পাকালো তার মা। খাবার সময় সব ভাই একত্রে বসে গোস্ত-রুটি দিয়ে মজা করে রাতের খাবার খেলো। খাবার দাবার শেষ করে জুযার বাকি স্বর্ণমুদ্রা মায়ের হাতে দিয়ে বললো: ‘এগুলো তোমার কাছে রাখো মা! আমি যখন থাকবো না, তুমি এবং আমার ভাইয়েরা খিদেয় কষ্ট করো না যেন’।

 

পরদিন সকালবেলা জুযার তার মাছ ধরার জাল নিয়ে চলে গেল কারুন নদীতে। জাল মারার আগেই আরেক লোক আবির্ভূত হল একইভাবে খচ্চরের পিঠে চড়ে। লোকটিও জুযারকে সালাম করে বললো: ‘জুযার! বলো তো! গতকাল এখানে আমার মতো একটা লোক খচ্চরে চড়ে আসে নি?’ জুযার ভেবেছিল তাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই সে বললো: ‘না তো! কেউ আসে নি।’ লোকটা হেঁসে দিয়ে বললো: ‘আমি সবকিছুই জানি’! এই বলেই সে পুরো ঘটনাটা বর্ণনা করলো। জুযার বললো: ‘তুমি তো সবই জানো! তাহলে আমার কাছ থেকে জানতে চাচ্ছো কেন’?

 

লোকটি বললো: ‘এজন্য যে আমিও চাচ্ছি গতকাল লোকটির সাথে যা যা করেছো, একই কাজ আমার ক্ষেত্রেও করো’!

 

এই বলে লোকটা রেশমের একটা সূতা জুযারের হাতে দিলো। জুযার একই কাজ করলো এবং অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর দেখলো লোকটার পা দুটো বেরিয়ে এসেছে পানির ভেতর থেকে। সে ভাবলো লোকটা মরে গেছে। তারপর খচ্চর আর জিন নিয়ে যথারীতি চলে গেল শামিয়ার কাছে। শামিয়া ওই জিনিসগুলো নিয়ে এক শ’ স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে বাসায় ফিরে গেল। আজও একই কাজ করলো জুযার। স্বর্ণমুদ্রাগুলো মায়ের হাতে নিয়ে দিলো। মা অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো: জুযার! আমার কাছে মিথ্যে বলো না! সত্যি করে বলো তো! এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো তুমি কোত্থেকে আনো’?

জুযার মায়ের কাছে সত্যি ঘটনা খুলে বললো। তবে মা’কে বলে দিলো এই ঘটনা যেন নিজের মাঝেই রাখে! ঘুণাক্ষরেও যেন কাউকে না বলে।

 

পরদিনও জুযার কারুন নদীর দিকে যায়। এবার আরেক লোক এলো এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। জুযার লোকটার হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে অপেক্ষা করতে লাগলো। ঘণ্টাখানেক পর লোকটার দুই হাত ভেসে উঠলো পানির উপর। জুযার তাড়াতাড়ি তার জাল নিয়ে এসে মারলো পানিতে। জাল মেরে লোকটাকে বের করে আনলো। মজার ব্যাপার হলো লোকটার দুই হাতে দুটি লাল রঙের মাছ ছিল। সে জুযারকে বললো: ‘আমার খচ্চরের জিনে ছোট্ট দুটি বাটি আছে। সেগুলো নিয়ে আসো’! জুযার তাই করলো। লোকটা দুটি মাছই বাটিতে রাখলো এবং বাটির মুখ ভালো করে বন্ধ করে দিলো। এরপর জুযারের দিকে তাকিয়ে বললো: ‘তোমাকে ধন্যবাদ জুযার! তুমি আমাকে বাঁচিয়েছো। তুমি যদি আমাকে জাল মেরে উঠিয়ে না আনতে তাহলে আমি এই মাছ দুটিকে ছাড়তাম না এবং পানিতে ডুবে যেতাম’।

 

জুযার বললো: ‘খোদার কসম! তুমি আমাকে বলো-কে তুমি? ওই দুই লোকই বা কারা ছিল? কেন তারা পানিতে এভাবে ডুবতে গেলো? শামিয়া’ই বা কে? আর এই দুটি লাল মাছেরই বা রহস্য কী’?#

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!