ব্যবসায়ী ও তার তিন ছেলের গল্প (তৃতীয় পর্ব)

সেলিম সালেম এবং জুযার-এই তিন ভাইয়ের গল্প শুনছিলাম আমরা। ব্যবসায়ী বাবা ছোটো ছেলে জুযারকে বেশি আদর করতো বলে বড় দু’ভাই তাকে হিংসার চোখে দেখে এবং বাবার মৃত্যুর পর তার বিরুদ্ধে মামলা করে সর্বস্ব হারায়। অবশেষে মায়ের সম্পদও জোর করে কেড়ে নেয়। তারপরও তারা নিঃস্ব হয়ে ভিক্ষা করতে করতে একদিন ছোটোভাই জুযারের বাসায় যায়। সেখানে মাকে দেখে। মা তাদেরকে বরণ করে খাবার দাবার দেয়। জুযারও কাজ থেকে এসে ভাইদের দেখে গ্রহণ করে নেয়। ভাইয়েরা বাসায় খায় দায় ঘুমায় আর জুযার বাইরে গিয়ে নদীতে মাছ ধরে। এক পর্যায়ে কারুন নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। খচ্চরের পিঠে আরাহী এক লোকের কথা অনুযায়ী কাজ করে এক শ’ স্বর্ণমুদ্রা পায়। সেগুলো এনে মায়ের হাতে দেয় জুযার।

 

তৃতীয় দিন মাছ ধরতে গেলে অন্যরকম ঘটনা ঘটে। পানিতে যাকে হাত পা বেঁধে ফেলা হয়েছে সে মরে নি। তাকে জাল মেরে উপরে তোলার পর দেখে তার হাতে দুটি লাল রঙের মাছ। পরপর তিন দিন অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটায় জুযার মাথা খারাপ হয়ে যাবার মতো অবস্থা হলো। সে ওই লোকটাকে বললো: এইসব কী হচ্ছে, আমাকে একটু খুলে বলো!

 

লোকটা বললো: ঘটনা হলো, গত দু’দিন যে দু’জন পানিতে ডুবে মারা গেল, তারা ছিল আমারই ভাই। তুমি শামিয়া নামে যাকে চেনো সেও আমার আরেক ভাই। সে আসলে ইহুদি নয়, মুসলমান। তার নাম হলো আব্দুর রহিম আর আমার নাম আব্দুস সামাদ। আমরা চার ভাই। আমাদের বাবা ছিলেন ভবিষ্যতজ্ঞানী এবং গোপন রহস্য ভেদকারী। বিশেষ করে গুপ্তধন কোথায় লুকিয়ে আছে সেটা জানতো। তিনি আমাদেরকেও সেই জ্ঞান শিখিয়েছেন। বাবা মারা যাবার পর আমরা তাঁর সম্পদ নিজেদের মাঝে ভাগ করে নিলাম।

 

অনেক বই ছিল তাঁর। বইগুলোও ভাগ করেছি। কিন্তু একটি বই নিয়ে আমাদের চার ভাইয়ের মাঝে মতপার্থক্য দেখা দিলো। বইটি ছিল খুবই মূল্যবান এবং একেবারেই বিরল। এর কারণটা হলো ওই বইতে গুপ্তধন কোথায় কোথায় আছে, কী কী আছে সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া ছিল। আমার বাবার একজন ওস্তাদ ছিল বৃদ্ধ। সেই ওস্তাদের কাছে গেলাম বিচার চাইতে-কে আমাদের চার জনের মাঝে ওই বইটা পাবার উপযুক্ত। ওস্তাদ একটা শর্ত দিয়ে দিলেন ওই বইটা পাবার ব্যাপারে। বললেন: যে এই বইটা পেতে চাও তাকে একটা কাজ করতে হবে। ‘শামারদাল গাঞ্জ’ নামক ধনভাণ্ডার খুলে তার ভেতর থেকে মূল্যবান চারটি জিনিস নিয়ে আসতে হবে’।

 

ওস্তাদ শামারদাল গাঞ্জ খুলে মূল্যবান চারটি জিনিস নিয়ে আসতে বললেন। ভাইয়েরা তখন জানতে চাইলো: ওই মূল্যবান চারটি জিনিস কী?

 

ওস্তাদ বললেন: একটা মণিমুক্তার আংটি, একটা তরবারি, একটা গ্লোব এবং একটা সুরমাদানি। এগুলোর প্রত্যেকটারই বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আংটির একজন খাদেম আছে নাম হলো রাদ। রাদ হলো শক্তিশালী এক দানব। সে চাইলে সমগ্র পৃথিবী দখল করতে পারে। তলোয়ারের বৈশিষ্ট্য হলো খাপ থেকে যে তাকে বের করবে, তার শত্রুপক্ষে যত সৈন্যই থাকুক না কেন পরাজিত হবে। তলোয়ার যার হাতে থাকে সে যদি বলে: হে তলোয়ার! সকল শত্রুসেনাকে মেরে ফেল, তাহলে তলোয়ার থেকে আগুনের একটা গোলা বেরিয়ে শত্রুদের ওপর গিয়ে পড়বে এবং সবাই মারা যাবে।

 

গ্লোব দিয়ে সকল শহর এবং সেখানকার জনগণকে দেখা যাবে। গ্লোবটাকে কেউ যদি সূর্যের দিকে ধরে বলে অমুক শহর ধ্বংস হয়ে যাক, তাহলে ওই শহর আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু সুরমাদানি থেকে যে-ই সুরমা চোখে দেবে তার চোখ এতো সূক্ষ্মদর্শী হবে যে মাটির নীচের গুপ্তধনও অনায়াসে দেখতে পাবে।

 

ওস্তাদতে জিজ্ঞেস করলাম: শামারদাল ভাণ্ডারে কীভাবে যাবো?

তিনি বললেন: শামারদাল ভাণ্ডারটি এখন মালেক আহমাদের সন্তানদের এখতিয়ারে আছে। কেবল জুযার নামের যুবকের মাধ্যমে ওই ভাণ্ডার খুলতে পারা যাবে। জুযার মাছ শিকার করতে কারুন নদীতে যাবে। সেখানে গিয়ে জুযারের সাথে দেখা করতে হবে এবং তাকে বলতে হবে দুই হাত বেঁধে যেন পানিতে ফেলে দেয়।

 

পানিতে ফেলে দেওয়ার পর আহমারের সন্তানদের সাথে যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে যদি মারা যাও তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আর যদি আহমারের সন্তানদের পরাজিত করা যায় এবং তাদেরকে বন্দী করা যায় তাহলে নিজের বাঁধা হাতগুলো পানির উপরে তুলে ধরে জুযারের সাহায্য চাইতে হবে। আমি এবং আমার দুই ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই কাজটা করবো। কিন্তু আব্দুর রহিম বললো: আমি বইও চাই না, নদীতেও যেতে চাই না। এরপর আমরা চলে এলাম এই শহরে এবং রহিম এই শহরে এসে নিজেকে একজন ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। বাকি ঘটনা তো তোমার জানাই আছে।

 

 

জুযার পুরো ঘটনা শোনার পর জিজ্ঞেস করলো: তো মালেক আহমারের ছেলেরা এখন কোথায় আছে?

 

আব্দুস সামাদ বললো: ওই যে দুটি লাল রঙের মাছ দেখেছো না, যাদেরকে আটক করে রাখলাম.. ওরাই হলো মালেক আহমারের ছেলে। তবে জুযার! জেনে রাখো! শামারদাল ভাণ্ডারটি কেবল তুমিই খুলতে পারবে। তুমি কি আমার সাথে ওই শহরে যাবে, যে শহরে ভাণ্ডারটি আছে?

 

জুযার চিন্তাভাবনা করে বললো: না, যেতে পারবো না। আমার মা এবং ভাইয়েরা আমার অপেক্ষায় আছেন। আমি যদি এখন তোমার সাথে চলে যাই তাহলে তাদের খরচপাতি কে দেবে?

 

আব্দুস সামাদ বললো: আমার এবং তোমার সফরে তো চার মাসের বেশি সময় লাগবে না। তোমাকে আমি এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেবো, তুমি সেগুলো তোমার পরিবারের খরচের জন্য দাও। যাতে এই চার মাসে তাদের কোনো অসুবিধা না হয়।

 

জুযার মেনে নিলো। আব্দুস সামাদের কাছ থেকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেল। ঘটনাটা মাকে খুলে বললো। স্বর্ণমুদ্রাগুলো মায়ের হাতে দিয়ে বললো: মাগো! এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো তোমার জন্য এবং আমার ভাইদের ভরণপোষনের জন্য। এগুলো রাখো! আর আমার জন্য দোয়া করো!

 

এরপর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আব্দুস সামাদের কাছে ফিরে গেল এবং শামারদাল ভাণ্ডার খুলতে ওই শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।#

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!