পথিমধ্যে কাফেলার সামনে যে ঘটনাটি ঘটলো, তাহলো এক মন্ত্রীর ছেলে শাহজাদাকে হত্যা করে ফারামারযকে ফাঁসানোর জন্য তার বস্তার বিছনায় এনে রেখে দেয়। ফারামারয তলোয়ার দিয়ে আঘাত করলে তার নাক কাটা যায়। ওই নাকের কাটা অংশ দিয়ে ফারামারয প্রমাণ করে যে সে হত্যাকারী নয়, আসল হত্যাকারী হলো মন্ত্রীর ছেলে। প্রমাণিত হবার পর রাজা ফারামারযকে বললো: তুমি যেহেতু আমার ছেলের হত্যাকারীকে শনাক্ত করেছো সুতরাং আমার কন্যাকে তুমি বিয়ে করতে পারো।
ফারামারয বললো: আমার স্ত্রীর প্রয়োজন নেই। তবে আমার এক মনিব আছে, তুমি তার সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারো।
ফারামারয তার মনিবের কাছে সব ঘটনা খুলে বললো। এরপর দুজনেই চললো বাদশার দরবারে। এবারও ব্যবসায়ীপুত্র আরেক রাজকন্যাকে বিয়ে করলো। সাত রাত সাত দিন উৎসব হলো ব্যাপক জাঁকজমকের সাথে। বিয়ের পর ওই শহরে বেশ কিছুদিন কাটালো ফারামারয এবং তার মনিব। তারপর আবারও মালামালের বোঝা বাঁধলো। সোনা-গয়নার নতুন পঞ্চাশটি বোঝা আর দশজন চাকর বাকর মিলে মোট বোঝার সংখ্যা দাঁড়ালো দেড় শ’ আর চাকর গোলামের সংখ্যা দাঁড়ালো বিশ। মনিব আর দুই স্ত্রীসহ বিশাল এক কাফেলা নিয়ে যাত্রা শুরু করলো ফারামারয। ব্যবসায়ীপুত্র যখন দেখলো মালামালের পরিমাণ তো প্রচুর হয়ে গেছে, ফারামারযকে বললো: আমাদের এবার বাবার কাছে ফিরে যাওয়া উচিত।
ফারামারয মনিবের কথায় ফেরার পথে পাড়ি জমালো। যে পথ দিয়ে এসেছিল সে পথেই ফিরতে লাগলো। পথের মাঝে সুন্দর একটা জায়গায় যাত্রাবিরতি করলো। চমৎকার তাঁবু গাড়া হলো। বিশ্রাম নিলো। রাতের খাবার দাবার খেতে শুরু করলো এমন সময় এক বৃদ্ধা মহিলা এসে একটু খাবার ভিক্ষা চাইলো। বুড়িকে তারা একটু রুটি দিলো এবং বুড়ি চলে গেল। ফারামারয কিন্তু বুড়ির পেছনে পেছনে গেল। অনেকদূর যাবার পর ফারামারয দেখলো ওই বুড়ি একটা কূপের মুখ থেকে পাথর সরালো এবং পাথরের নীচে গিয়ে বেশ কিছু লোককে বললো: এখানে একটা কাফেলা এসেছে, অনেক মাল সামান আছে তাদের সাথে। এরা বেশি সময় থাকবে বলে মনে হয় না। ওদের মালামাল লুট করতে হলে দেরি করা যাবে না,তাড়াতাড়ি করো।
ফারামারয বুড়ির সব কথাই শুনলো। সে এক কোণে দাঁড়ালো। গর্তের ভেতর থেকে যে-ই বেরিয়ে এলো তাকেই মেরে ফেললো ফারামারয। কেউ যখন আর বের হলো না ফারামারয গেল গর্তের ভেতর। বুড়িকে দেখে বললো: এই তোমাকে রুটি দেওয়ার প্রতিদান? স্বর্ণ গয়না কোথায় আছে তাড়াতাড়ি দেখাও! বুড়ি সব দেখালো। ফারামারয বুড়িকে আগে মারলো। তারপর ভেতরে ঘুরে দেখলো অসংখ্য মানুষ ছাদের সাথে ঝুলে আছে। এখনো কারো কারো প্রাণ আছে। ফারামারয সবাইকে মুক্ত করে দিলো। যারা বেঁচেছিলো তারা ফারামারযের পায়ে লুটিয়ে পড়ে বললো: আপনি আমাদের প্রাণে বাঁচিয়েছেন আমরা সারাজীবন আপনার গোলামি করবো।
ফারামারয গয়নাগাটি বস্তা বেঁধে মনিবের কাছে ফিরে গেল। মনিবকে সে পুরো ঘটনা খুলে বললো। আগের দেড় শ’ বোঝা গয়নাগাটির সাথে এই নতুন স্বর্ণগয়নাও রাখলো ফারামারয। এরপর রওনা হলো শহরের উদ্দেশ্যে। শহরের কাছাকাছি গিয়ে ফারামারয বললো: এখানে তাঁবু গাড়তে হবে। মাল-সামান নামিয়ে রেখে তাঁবু গাড়া হলো। ফারামারয শহরের লোকজনকে খবর দিতে গেল। মনিবকে বললো: আমি যাচ্ছি আপনার বাবার কাছে। তাঁকে খবর দেবো যে আপনি এসেছেন। ফারামারয এই বলে চলে গেল মনিবের বাবার কাছে। গিয়ে দেখলো তাঁর বাবা অন্ধ হয়ে গেছেন, চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। জিজ্ঞেস করে জানলেন ছেলের জন্য কান্নাকাটি করতে করতে তিনি অন্ধ হয়ে গেছেন। ফারামারয বৃদ্ধের চোখে কী যেন একটা ওষুধ মালিশ করে দিলো আর অমনিই বৃদ্ধের চোখ ভালো হয়ে গেল।
বৃদ্ধ দেখলো তাঁর সামনা সামনি দাঁড়িয়ে ফারামারয। তাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়ে গেল বৃদ্ধ। ফারামারয তাড়াতাড়ি বৃদ্ধকে নিয়ে রওনা হলো শহরের দিকে যেখানে তাঁবু গাড়া হয়েছে। যেতে যেতে তাঁবুর কাছে পৌঁছে গেল তারা। বৃদ্ধ ফারামারযকে বললো: এখানে আবার কারা তাঁবু গেড়েছে।
ফারামারয বললো: এরা সবাই আপনার ছেলের দাস দাসী। বৃদ্ধ আশ্চর্য হয়ে গেল। এগিয়ে গেল ভেতরের দিকে। তাকিয়ে দেখলো তার ছেলের দুই পাশে চতুর্দশী চাঁদের মতো দুই সুন্দরী কন্যা বসে আছে। ছেলে বাবাকে দেখেই উঠে এলো এবং আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দীর্ঘ কোলাকুলি করে কান্নাকাটি করলো।
কোলাকুলিরত অবস্থাতেই বৃদ্ধ বাবা এবং ছেলে অজ্ঞান হয়ে গেল। ফারামারযের সেবায় তারা চেতনা বা জ্ঞান ফিরে পেল। এরপর তাদের নিয়ে রওনা হলো শহরের দিকে। বৃদ্ধের ছেলে আদেশ দিলো একটা সুন্দর বাগানবাড়ি তৈরি করতে। ওখানেই ছেলে তার বাসভবন গড়ে তুললো। সুন্দরভাবে বসবাস করার জন্য যা যা দরকার সবই ফারামারয জোগাড় করলো। আরামে, সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো তারা। ছেলে একদিন বাবার কাছে জানতে চাইলো তার অন্যান্য ভাইদের সম্পর্কে। বাবা তাদের কথা বলার পর ছেলে আদেশ দিলো তাদেরকে প্রাসাদে নিয়ে আসতে। তাই হলো। পরে তাদেরকে তার সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দিলো।
সবশেষে ফারামারয বললো: এখন তো সবকিছুই হলো। এবার যে লাশকে আপনি টাকা দিয়ে মুক্ত করে দাফন করেছিলেন তার জন্য কিছু দান-খয়রাত আর দোয়া দরুদের ব্যবস্থা করেন। মনিব কবুল করলো এবং সেদিনই মহা আয়োজন করলো। খানা-পানি আর মিষ্টি তবররুক যা যা দরকার সব প্রস্তুত করে পঞ্চাশটি বোঝা বানালো। সেগুলো নিয়ে কবরস্থানের দিকে রওনা হলো ব্যবসায়ীপুত্র আর ফারামারয। এতিম অনাথসহ সবাইকে খাওয়া দাওয়া দিয়ে ফারামারয গেল একটি কবরের পাশে। কবরের মাথার দিকটা ফাঁকা করে বললো: মনিব! আমি সেই লাশ যাকে আপনি এক শ’ তুমান দিয়ে মুক্ত করেছিলেন। আমি এসেছি সেই এক শ’ তুমানের ক্ষতিপূরণ দিতে। এখন তো আপনার চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হলো। এবার আমি আসি। খোদা হাফেজ। ফারামারয ঢুকে গেল কবরের ভেতর। কবর মাটিতে পুরে গেল। ব্যবসায়ী আর তার ছেলে যতোই ডাকাডাকি করলো কোনো জবাব দিলো না ফারামারয। #
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।