হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বিবাহ-৪র্থ পর্ব

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বিবাহ-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত ইউসুফ (আঃ) কিছুক্ষণ অপলক চোখে জোলেখার যাত্রাপথের দিকে তাকিয়ে থেকে মলিন মুখে বিদায় নিলেন। জোলেখার রূপের ঝলকে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর হৃদয় জ্বলে উঠল প্রেমের এক অনির্বাণ শিখা। তাঁর অন্তরে আরম্ভ হল জোলেখার বিচ্ছেদ যাতনা। ভীষণ কঠিন ও অসহ্য ছিল সে যাতনা। উন্মত্ত তরঙ্গের ন্যায় উথাল পাথাল করছিল তাঁর হৃদপিণ্ড।

এত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জোলেখা তাঁকে আকৃষ্ট করে সঙ্গে সঙ্গে আবার তাঁকে চুড়ে ফেলে দিবে দু্র দুরন্তরে তা তিনি কল্পনা করতে পারেন নি। তাই এ ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সহ্য করা সম্ভব হল না তাঁর পক্ষে। দিন দিন তিনি নিজকে দুর্বল ও অসহায় ভাবতে লাগলেন। তাঁর মনের মাঝে প্রেমের উন্মত্ততা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করে।

দিন বয়ে যায় আর হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতির দিকে গড়াতে থাকে। রাজকার্যে শিথিলতা দেখা দেয়। আহার-নিদ্রা পরিত্যাগ করে উদাস মনে বাগিচা ভ্রমণ ও রাস্তায় পদাচরণ তাঁর স্বাভাবিক নেশায় অন্তর্ভুক্ত হয়। রাজদরবারের পরিষদবর্গ, পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর অবস্থা দর্শনে ভীত সন্ত্রস্ত হলেন। রাজদরবারের সকল কাজ-কর্মে দেখা দিল ভীষণ শিথিলতা।

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর এ অস্থিরতার খবর মিশরের বৃদ্ধ রাজা রায়হানের নিকট পৌঁছালে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন হলেন। তখন তিনি হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে নিজের কাছে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁর নিকট তাঁর জীবনের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা জেনে নিলেন। অতঃপর একদিন তিনি জোলেখাকে খবর দিলেন। জোলেখা রাজা রায়হানের নিকট পৌঁছালে তাঁকে নানারকম বুঝালেন। জোলেখা উত্তরে রাজাকে বলেন মহাত্মন! আমি বৈষয়িক ও পার্থিব নেশা থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি তাঁর অফুরন্ত রহমত ও নেয়ামত বর্ষণ করেছেন, যার ফলে আমি আজ সে মহান প্রভুর প্রেমে এত অধিক তৃপ্তি লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। যার কোন হিসেব নেই। সুদীর্ঘ ত্রিশ বছর হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ধ্যানে যতটুকু তৃপ্তি লাভ করেছি। এমতাবস্থায় আপনি আমাকে ক্ষুদ্র স্বার্থের বিনিময়ে অফুরন্ত স্বার্থ ত্যাগ করার উপদেশ দিচ্ছেন। এটা আমার পক্ষে গ্রহণ করা কোন দিন সম্ভব নয়। আপনি একজন ইনছাফগার বাদশা। আপনি ভালভাবে চিন্তা করে ইনছাফের দৃষ্টিতে বিচার করুন।

রাজা রায়হান জোলেখার কথা শুনে একটু নিরব থেকে বলতে আরম্ভ করলেন, জোলেখা! মনে কর আমি একজন প্রতাপশালী রাজা। আমি দেশের মানুষের জন্য যে সব আইন-কানুন বা হুকুম জারী করি, সে হুকুমের তাবেদারী করে যারা নৈকট্য লাভ করতে চায়, আর যারা আমার হুকুমের নাফারমানী করে আমার নৈকট্য লাভ করতে চায়। তাঁরা উভয় কি আমার নিকট সমমানের বলে বিবেচিত হবে?

জোলেখা বললেন, না তা কখনই হতে পারে না। বরং যিনি আপনার হুকুমের তাবেদারী করবে তিনিই আপনার নৈকট্য লাভে সক্ষম হবে।

জোলেখার উত্তর শুনে রাজা রায়হান বললেন, তুমি যাকে লাভ করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছ, তাঁর কঠোর নির্দেশ রয়েছে, “ হে ইমানদার ব্যক্তি, তোমাদের মধ্যে পুরুষ নারী একে অপরের ভূষণ স্বরূপ। অতএব তোমরা এক অপরের সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হও। তাহলে তোমাদের এবাদতসমূহে দশগুণ অধিক সওয়াব দান করা হবে।” এমতাবস্থায় তুমি তোমার মহান প্রভুর আদেশ পালন না করে কিভাবে তাঁর অধিক নৈকট্য লাভ করতে আশা রাখ।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী 

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বিবাহ-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।