হযরত ইলইয়াস (আঃ) পর্ব ২
সে সময় থেকেই বিভিন্ন সম্প্রদায় বা’ল দেবতার উপাসনা করে আসছিল। ইতিহাসবেত্তাদের কেউ কেউ আবার মক্কার মূর্তি হোবল বা’লেরই অপর নাম বলে ধারণা করেন। ইবরানী ও শামী (সিরীয়) ভাষায় বা’ল শব্দের অর্থ মালিক, সর্দার, হাকিম। তাই আরবী ভাষায় স্বামীকে বা’ল বলা হয়।
তাফসীরসমূহে বা’ল দেবমূর্তিটি স্বর্ণ নির্মিত ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে। এটির চারটি মুখ। এর পরিচর্যায় চারশ লোক নিয়োজিত ছিল। হযরত ইলইয়াস (আঃ)-এর সময় সিরিয়া ও ইয়ামেনে এ দেবমূর্তিটির জনপ্রিয়তা ছিল খুব বেশী এবং সে অতি ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে উপাসিত হত।
হযরত ইলইয়াস (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা অন্যান্য দেবমূর্তির সাথে বা’ল দেবমূর্তির উপসানা ও অত্যন্ত গুরত্ব সহকারে করত। পরবর্তী কালে বনী ইসরাইলী ইয়াহুদা ও ইসরাইল নামে দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইসরাইলের রাজধানী ছিল সামাররা এবং ইয়াহুদার রাজধানী ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস। আখিয়াব ছিল ইসরাইলের শাসক। হযরত ইলইয়াস (আঃ) তাদেরকে বা’ল প্রতিমার উপাসনা পরিত্যাগ করে মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাকের ইবাদতের আহবান জানান। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَلَا تَتَّقُونَ
أَتَدْعُونَ بَعْلًا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ الْخَالِقِينَ
اللَّهَ رَبَّكُمْ وَرَبَّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ
অর্থঃ যখন তিনি তার কওমের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা কি আল্লাহকে ভয় কর না? তোমরা কি বা’ল-এর উপাসনা করছ আর সর্বশ্রেষ্ট স্রষ্টাকে ছেড়ে বসেছ? আল্লাহ তোমাদেরকেও রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষেরও রব। (সূরা-সফফাতঃ আয়াত- ১২৪-১২৫)
বা’ল দেবমূর্তির উপাসনা পরিহার করে মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাকের এবাদতের প্রতি আহ্বায়ক শাসক আখিয়াব ও তার অনুসারী অনুগতদের পছন্দ হয়নি। তার এ আহবান স্বল্প সংখ্যক দেব লোক ছাড়া আর সকলেই শরীকে আগুন ধরে যায়। তারা হযরত ইলইয়াস (আঃ)-কে নানাভাবে কষ্ট যাতনা দিতে আরম্ভ করে। তাদের দেয়া অবর্ণনীয় কষ্ট যাতনা হযরত ইলইয়াস (আঃ)-এর ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে। শেষ পর্যন্ত প্রতিমা উপাসক শাসক আখিয়াব ও তার পত্নী ইযাবেলা তাঁর প্রাণহরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
তিনি প্রতিমা উপাসক শাসক দম্পতির এ হীন ষড়যন্ত্রের কথা অবগত হয়ে শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। সেখানে আশ্রয় নিলেন সেখানকার সম্প্রদায়কে হিদায়াতের কথা বিস্মৃত হননি। তিনি মনে ভাবলেন, এখন যদি বনী ইসরাইল দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়ে অস্থির হয়ে পড়ে, তা হলে মুজিযার মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ দূরীভূত করতে পারলে হয়ত বা মূর্তি পূজক এ দুর্ভাগা সম্প্রদায় এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে পারে। এ ভাবনায় তিনি বনী ইসরাইলের প্রতি দুর্ভিক্ষ নাজিল করার জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করেন। আল্লাহ পাক তাঁর এ দোয়া কবুল করেন। সমগ্র দেশে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে। দেশময় দুর্ভিক্ষজনিত খাদ্যভাবে হাহাকার পড়ে যায়।
দুর্ভিক্ষের করালগ্রাসে নিপতিত দেশবাসী যখন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়ে তখন আল্লাহ পাক হযরত ইলইয়াস (আঃ)-কে প্রতিমা উপাসক আখিয়াবের সাথে দেখা করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তিনি নিরাপদ আশ্রয় হতে বের হয়ে সামাররায়
পৌঁছে আখিয়াবের সাথে দেখা করে বলেন, এ দুর্ভিক্ষজনিত আযাবের একমাত্র কারণ মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাকের নাফরমানী। তাঁকে ছেড়ে প্রাণহীণ দেব প্রতিমার উপাসনা করে তোমরা আল্লাহর যে নাফরমানি করেছে তার ফলশ্রুতিতে দুর্ভিক্ষজনিত আযাব সমগ্র দেশ গ্রাস করেছে। তোমরা যদি লা শরীক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন কর তবে তিনি তোমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে দুর্ভিক্ষের দুর্বিসহ আযাব তুলে নেবেন। ফলে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাবে এবং তোমাদের স্বস্তি ও শাস্তি ফিরে আসবে এবং আমি সত্যবাদী কিনা তাও জানতে পারবে। তোমরা তোমাদের বিশ্বাস মতে তোমরা বা’ল দেবমূর্তির নামে কুরবানী কর আর আমি মহান আল্লাহর নামে কুরবানী করব। আসমান হতে আগুন নাজিল হয়ে যার কুরবানী জ্বালিয়ে দেবে সে সত্য বলে প্রমাণিত হবে এবং তার দ্বীনই সত্য দ্বীন বলে সাবস্ত্য হবে। আখিয়াবসহ বা’ল দেবতা মূর্তির সকল উপাসকই এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করে। তারা এটাকে তাদের জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ বলে ভাবতে শুরু করে। কেননা, তারা তখনও এ বিশ্বাস পোষণ করছিল যে, তাদের বা’ল দেবমূর্তির সত্যতাই প্রতিষ্ঠিত হবে এবং হযরত ইলইয়াস (আঃ) পরাজয় বরণ করবেন।