হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বিবাহ-৩য় পর্ব

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বিবাহ-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

 সেবিকারা তখন জোলেখাকে নিয়ে হাম্মামখানায় গেল এবং উত্তম রূপে গোসল করে তাঁকে পাক-পবিত্র পোশাকে সাজিয়ে গুছিয়ে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সম্মুখে নিয়ে এল। হযরত ইউসুফ (আঃ) তখন দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাত তুললেন। আল্লাহ তায়ালার অপূর্ব মহিমা। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর দোয়ার সঙ্গে সঙ্গে জোলেখার শরীর ও চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল হল তাঁর চেহারা। শারীরিক দুর্বলতার অবসান ঘটল। ঢলঢল যৌবনের কান্তি ফিরে এল সর্ব অঙ্গে। জোলায়খা আয়নার সম্মুখে গিয়ে নিজের রূপ দেখে মোহিত হলেন এবং বললেন ইউসুফ! এবার তুমি আমাকে তোমার দ্বীনের দীক্ষা দান করে আমার থেকে দায়মুক্ত হও। হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁকে পাঠ করালেন লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ইউসুফ নবি উল্লাহ। অতঃপর তিনি নামাজ, রোজা ও পবিত্রতা অর্জনের জরুরী কিছু বিষয় তাঁকে শিক্ষা দিলেন।

হযরত ইউসুফ (আঃ) বিদায়কালে জোলেখার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিস্মিত হলেন। ত্রিশ বছর পূর্বে জোলেখার যে রুপ-লাবণ্য ছিল, আজকে তাঁর চেয়ে তাঁকে দশগুণ রূপসী বলে মনে হয়। তাঁর মুখমণ্ডল এত উজ্জ্বল হল যাতে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর চক্ষু ঝলসে গেল, মনের মাঝে সৃষ্টি হল এক দুর্দমনীয় আকর্ষণ। প্রেমের বান ডাকল তাঁর শিরা-উপশিরায়। তাই জোলেখার প্রতি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগল, জোলেখা! আজিজ মেছের জীবিত থাকা অবস্থায় তোমাকে বিবাহ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না এবং বিবাহ ছাড়া তোমার মনের কোন চাহিদা পূরণ করাও বৈধ ছিলনা। এছাড়া ধর্মের দিক দিয়েও তোমার আমার মাঝে দূরত্ব ছিল বিরাট। এ সব প্রতিবন্ধকতার কারণে আমি তোমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছি। কিন্তু আজ সকল প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটেছে। তোমার আমার মাঝে আর কোন দূরত্ব নেই। অতএব আমি সতস্ফুর্ত মনে আজ তোমাকে বিবাহ করতে চাই।

জোলেখা হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কথা শুনে বললেন, হযরত ইউসুফ (আঃ) তুমি সে বিভ্রান্তির দিনগুলোর কথা ভুলে যাও। আমি আজ আত্মভোলা রূপ ও মহা সৌন্দর্য সৃষ্টিকারী সত্ত্বা, মহান আল্লাহ তায়ালার সন্ধান পেয়েছি যিনি তোমাকে পৃথিবীর মাঝে শ্রেষ্ঠ রূপ দান করে পাঠিয়েছেন, যিনি তোমার মুখমণ্ডলের জ্যোতির মাঝে সৃষ্টি করেছেন উন্মাদনাকর আকর্ষণ এবং তোমাকে একজন মহামানব করে পাঠিয়েছেন ধরার মানুষের কাছে। সর্বপরি যিনি আজ আমার বার্ধক্য , আমার মলিন মুখশ্রী ও আমার দুর্বল স্বাস্থের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ক্ষণিকের মধ্যে এনে দিলেন এক দীপ্তিমান যৌবন। আমি যে ব্যক্তিকে লাভের সাধনায় বিগত ত্রিশ বছর উন্মত্তের ন্যায় দিন কাটিয়েছি, কিন্তু ক্ষণিকের জন্য ও তাঁকে লাভ করা সম্ভব হয় নি। সেই ব্যক্তিত্বকে অতি সহজে যিনি এলেন আমার এ জীর্ণ দ্বার প্রান্তে। আমি সে মহান রাব্বুল আলামিনের সন্ধানে জীবন উৎসর্গ করব।

কে এই মহান সত্তা যার অপার করুণাময় মুহূর্তের মধ্যে সম্ভব হল এতবড় পর্বততুল্য পরিবর্তন। তাঁকে আমি লাভ করতে চাই। একমাত্র তিনিই দিতে পারবেন আমার প্রাণের তৃপ্তি ও সকল জিজ্ঞেসার সমাধান। সে মহান প্রভুকে পরিপূর্ণ ভাবে লাভ করার নিমিত্ত তাঁর প্রেমে নিজ সত্তাকে ডুবিয়ে দিব চিরতরে। তাহলে সার্থক হবে আমার সাধনা। সেখানে পাব তৃপ্তি, আনন্দ ও সজীবতা। অতএব হযরত ইউসুফ (আঃ) তুমি আর আমার দিকে তাকিয়ে থেক না। চিরদিনের জন্য আমাকে ভুলে যাও। খোদা হাফেয। এই বলে জোলেখা তড়িৎ গতিতে সেখান থেকে বিদায় নিলেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বিবাহ-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।