পানির ব্যবস্থা
বনী ইস্রাইলদের তীহ প্রান্তে কোন পানির ব্যবস্থা ছিল না। তারা পিপাসার্ত হয়ে হযরত মূসা (আঃ) এর দরবারে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করার আবেদন জানায়। তাদের আবেদন প্রেক্ষিতে মূসা (আঃ) পানির জন্য দোয়া করেন। আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবূল করেন। মূসা (আঃ) এর জন্য দোয়া এবং পানি প্রান্তরে গৃহীত ব্যবস্থার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-
অর্থঃ আর মূসা তার কাওমের জন্য পানির প্রার্থনা করলে আমি বললাম, আঘাত করুন আপনার লাঠি দিয়ে অমুক পাথরটিতে, তখনই বের হল তা হতে বারটি ঝর্ণাধারা, প্রত্যেই জেনে নিল স্ব-স্ব পান করার ঘাট, খাও এবং পান কর আল্লাহর রিযিক হতে, আর ভূপৃষ্টে ফাসাদ সৃষ্টি করে না।
হযরত মূসা (আঃ) এর বনী ইস্রাইলদের জন্য পানি প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা স্বীয় কদরতলে পাথর হতে বার সম্প্রদায়ের জন্য বারটি পানির নহর প্রবাহিত করে পানির ব্যবস্থা করেন। আর যেহেতু, বনী ইস্রাইলদের স্বভাব বক্রু অসহনশীল তাই আল্লাহ প্রত্যেক গোত্রের জন্য পৃথক পৃথক ব্যবস্থা করেন। নতুবা যদি এক্ত্রে একই স্থানে পানি সংগ্রহের জন্য সব গোত্রের লোক এক্ত্র হত তবে ঝগড়াঝাটি হওয়ার সম্ভবনা ছিল। এতে সহাবস্থানের পরিবেশ বিনষ্ট হত। আর যদি সহাবস্থানের পরিবেশ বজায় না থাকে তবে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা দূরহ হয়ে পড়বে। আর সে কারণেই আল্লাহ পাক প্রত্যেক গোত্রের জন্য পানির পৃথক ব্যবস্থা করেন।
পানির নহর প্রবাহিত পাথরটি সম্পর্কে বিভিন্ন রেওয়াতে রয়েছে। এক বর্ণনায় আছে, হযরত মূসা (আঃ) এ পাথরটি তুর পর্বত হতে নিয়ে এসেছিলেন। এটি দেখতে ছিল ষাড়ের মাথার ন্যায়। এটি একটি চৌকোণা বিশিষ্ট পাথর। একটি ষাড় এটি বহন করত। হারুন (আঃ) এটি মৃত্তিকায় রাখতেন এবং মূসা (আঃ) তার লাঠি দিয়ে তাতে আঘাত করতেন আর প্রতি কোণ হতে তিনটি করে পানি নহর প্রবাহিত হত। প্রথমবার আঘাত করলে পানি বের হত এবং দ্বিতীয় বার আঘাত করলে শুকিয়ে যেত। পাথরে লাঠি দিয়ে আঘাতের সময় হযরত মূসা (আঃ) প্রত্যেক গোত্রের একেকজন লোক দাঁড় করিয়ে রেখে তার গোত্রের জন্য নির্দিষ্ট ঝর্ণার পরিচয় করিয়ে দিতেন।
আরেক বর্ণনায় আছে এটি জান্নাতি পাথর। হযরত আদম (আঃ) দুনিয়াতে আগমনকালে এ পাথরটি সাথে এনেছিলে। এটি দশ গজ দীর্ঘ। আদম (আঃ) থেকে নবী রাসূলদের হাত পরিবর্তীত হয়ে এটি এনেছিলে। এটি দশ গজ দীর্ঘ। আদম (আঃ) থেকে রাসূলদের হাত পরিবর্তীত হয়ে এটি হযরত শুয়াইব (আঃ) এর নিকট পৌছে। তিনি হযরত মূসা (আঃ) কে লাঠি এবং পস্তরখণ্ড উভয়ই দান করেছিলেন। এ প্রস্তরখণ্ড থেকে দুটি উপকার লাভ করা যেত। এটি রাতে আলো বিকিণ করত এবং মূসা (আঃ) এর লাঠির আঘাতে পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হত।
আরেক বর্ণনায় আছে এটি সে পাথর যে পাথর মূসা (আঃ) এর পরিধেয় কাপড় নিয়ে পালিয়েছিল। তখনকার দিনে বিবস্ত্র অবস্থায় গোছল করাই ছিল বনী ইস্রাইলের মাঝে প্রচলিত সাধারণ রীতি। তারা জনসমক্ষেই নগ্ন হয়ে গোসল করত। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) গোপনে গোসল করতেন। হযরত মুসা (আঃ) এর হযরত মূসা (আঃ) এ রীতি বনী ইস্রাইলদের নিকট ভাল লাগে নি। তাই তারা অপবাদ দিতে থাকল যে, মূসা (আঃ) এর একটি অণ্ডকোষ খুবই বড়। এ জন্যই তিনি জনসমাগম এড়িয়ে গোপনে গোছল করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের এ অপবাদ মিথ্যা প্রমানের ইচ্ছা করেন। একদা হযরত মূসা (আঃ) পরিধেয় বস্ত্র খুলে একটি পাথরের উপর রেখে জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত এক পুকুরে গোছল করতে নামেন। গোছল শেষ করে তিনি কাপড় আনতে গেলে পাথরটি কাপড়সহ পালাতে শুরু করে।
অনেক চেষ্টা করেও তিনি পাথরটির লাগান পাচ্ছে না। তাই নগ্ন দেহেই তিনি পলায়ন প্রস্তরের পিছু পিছু দৌড়াতে থাকেন। পাথরটি এমন এক স্থানে গিয়ে থামে যেখানে বনী ইস্রাইলের লোক সমাগম ছিল। ফলে তারা একযোগে দেখে নিল যে হযরত মূসা (আঃ) এর দৈহিক ক্রুটির যে অপবাদ তারা প্রচার করে আসছে তা সত্য নয়। এ সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) হযরত মূসা (আঃ) কে পরামর্শ দেন পাথরটি উঠিয়ে নিতে জিব্রাইল (আঃ) বলেন, হে মূসা! আপনি পাথরটি উঠিয়ে নিন। এতে আল্লাহর বিশেষ কুদরত ও আপনার মোজেযা নিহিত রয়েছে। এ পাথর হতেই তীহ প্রান্তরে মূসা (আঃ) এর লাঠির আঘাতে পানির নহর প্রবাহিত হয়েছিল।