ফেরাউনের পরাজয়ের পর – পর্ব ৫
ফেরাউনের পরাজয়ের পর – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা (আ)-এর দোয়া মঞ্জুর করলেন এবং বন্যা দিয়ে তাদেরকে শস্তি দেয়ার ফয়সালা করলেন। নীল নদের পানি ও আকাশের বৃষ্টির পানি মিলে মিসরে বন্যার তাণ্ডব শুরু হল। মিসরীদের ঘরবাড়ি, শস্যক্ষেত সবকিছু বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেল।
ফেরাউন সম্প্রদায়ের এমন কোন গৃহ বা বাড়ি এবং স্থান বাকী ছিল না যেখানে তারা একটু বসতে শুতে পারে। সাতদিন পর্যন্ত তাদের কষ্টের সীমা ছিল না। অথচ আল্লাহর অপার কুদরতে বনী ইসরাইলীদের ঘর বাড়ী ও জমিজমা বন্যার প্রভাব হতে সম্পূর্ণরুপে মুক্ত ছিল।
এ দুরবস্থা ফেরাউন সম্প্রদায়ের কাছে অসহ্য হয়ে উঠল। তাই তারা এ বিপদ থেকে উদ্ধারের কোন পথ না পেয়ে হযরত মূসা(আ)-কাছে আবেদন করল যে, হে মূসা!
আপনি আপনার রবের কাছে হযরত মূসা (আ)-কাছে দোয়া করুন তিনি যেন এ আযাব হতে আমাদেরকে মুক্তি দেন, আযাব হতে যদি আমরা মুক্তি পাই তবে আপনার রবের প্রতি ঈমান আনব এবং বনী ইসরাইলীকে মুক্ত করে দিব। হযরত মুসা (আ) পুনরায় দোয়া করলেন। পানি সরে গেল বন্যার পানির কারণে জমিতে প্রচুর পলি মাটি পড়ল। ফলে মিসরের ভূমি পুর্বাপেক্ষা আরও অধিক উর্বর হয়ে গেল। এ সকল ভূমিতে পূর্বাপেক্ষা দ্বিগুণ ফসল উৎপন্ন হল। গাছগাছড়া আরও সতেজ হয়ে উঠল। ভূমির ফলনের অবস্থা দেখে সম্প্রদায়ের লোকেরা বলতে লাগল যে, প্রকৃতপক্ষে এ বন্যা আযাব হিসেবে আমাদের প্রতি পাঠান হয়নি বরং আমাদের উপকারার্থে পাঠানো হয়েছিল। আমাদের শস্যক্ষেত ও বন জঙ্গলের দিকে দৃষ্টি দিলে এটা সুস্পষ্ট বুঝা যায়। এতে মূসা (আ)-এর কোন কৃতিত্ত্ব নেই। ইত্যকার নানান কথা বলে তারা মূসা (আ)-কে প্রদত্ত ওয়াদা পালন করার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করল না বরং পূর্বের ন্যায় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেই চলতে লাগল।
কিন্তু আল্লাহ্ পাক তাদেরকে কিছু দিন সময় দিলেন। এক মাস পর্যন্ত আল্লাহ্ পাক তাদের এসব ঔদ্ধাত্যপূর্ণ উক্তির জন্য কিছুই বললেন না বরং তাদের চিন্তা ফিকির করার সুযোগ দিলেন। এক মাস পর্যন্ত নিরাপত্তা ও সুস্থতার সাথে তারা চলাফেরা করল। কিন্তু তাদের হুশ আসল না। অনন্তর তাদের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা দ্বিতীয় আযাবের ফয়সালা করলেন এবং টিড্ডি পাঠালেন। (টিড্ডি এক প্রকার ফড়িং বিশেষ যা ফসল খেয়ে ফেলে) তাদের ফসলের সমস্ত জমি ও বাগবাগিচা টিড্ডিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।
অনেক বর্ণনায় এসেছে যে, টিড্ডি কেবল তাদের শস্য ক্ষেত এবং বাগবাগিচা খাইনি বরং তাদের ঘরবাড়ীর দরজা জানালার কাঠ, গৃহের ছাদ এবং বাড়ীর চাবি পাশ্বের প্রাচীর পর্যন্ত খেয়ে ফেলছিল। এ আযাবের সময়ও হযরত মুসা (আ)এর মোজাযা সামনে ছিল যে টিড্ডি কেবলমাত্র ফেরাউন সম্প্রদায়ের লোকদের শস্যক্ষেত্র, ঘরবাড়ী খেয়েছিল। কিন্তু বনী ইসরাইলীদের ঘরবাড়ী এবং শস্যক্ষেত্র সম্পূর্ণরূপে অক্ষত ছিল। টিড্ডির আক্রমণে ফেরাউন সম্প্রদায়ের লোকেরা অস্থির হয়ে পড়ল। অবশেষে তারা পুনরায় হযরত মুসা (আ)-এর কাছে আবেদন করল যে, আপনি আল্লাহ্ পাকের কাছে দোয়া করুন যেন আযাব দূর হয়ে যায়। আমরা এবার পাকা পোক্ত ওয়াদা করছি যে, আযাব চলে গেলে আমরা ঈমান আনব এবং বনী ইসরাইলীদের আযাদ করে দিব।
তাদের এ আবেদন নিবেদনের প্রেক্ষিতে হযরত মূসা (আ) পুনরায় দোয়া করলেন। তাঁর দোয়ার বরকতে তাদের আযাব দূরীভূত হল। কিন্তু ঔদ্বত্য ও অহংকারী সম্প্রদায়ের এ অভ্যাস প্রায় সর্বকালেই ছিল যে, যখন আযাবে ঘেরাও হত তখন অনুনয় বিনয় সহকারে আনুগত্যের ওয়াদা দিত। আবার যখন আযাব দূরীভূত হত তখন গর্ব ও অহংকারের বশঃবঅর্তী হয়ে পুনরায় নাফরমানীতে লিপ্ত হত। ফেরাউন সম্প্রদায় তার ব্যতিক্রম করে নি। ডিড্ডির আক্রমণে খাদ্যশস্যের বিরাট ক্ষতি হলেও শেষ পর্যন্ত কিছু পরিমাণ খাদ্যশস্য ছিল। তারা দেখল তাদের মধ্যে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য এখনও আছে তা একটু হিসেব করে খেলে খুব সুন্দরভাবেই এক বছর চলে যেতে পারে। খাদ্যাভাবে দেখা দিবে না। আবার নতুন বছর ফসল উৎপাদন করলে চিন্তার আর কোন কারণ থাকবে না। তাই তারা পুনরায় ঔদ্বাত্য প্রকাশ করা শুরু করল। নাফরমানীতে লিপ্ত হল। ঈমান আনা তো দূরের কথা বনী ইসরাঈলীদের মুক্তি দেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করে বসল।