বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)–এর সময়কালের ঘটনা
বোরানপুর গ্রামে একজন ধনবান হিন্দু বাস করতেন। লোকজনের মুখে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)–এর গুণ, গরিমা ও ইসলামের কথা বহুদিন যাবৎ শুনে তার অন্তরে ইসলাম ও বড়পীর (রহ.)–এর প্রতি শ্রদ্ধার বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে। শেষে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, কেউ বড়পীর (রহ.)–এর নাম উচ্চারণ করলে তিনি তাকে ধন–সম্পদ দান করতেন, ওয়াজ–মাহফিলের খরচ বাবদ অর্থ সাহায্য করতেন।
শেষ পর্যন্ত তিনি ইসলাম গ্রহণের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। কিন্তু পরিবার ও আত্মীয়–স্বজনের ভয়ে প্রকাশ্যে মুসলিম হওয়া সম্ভব হলো না। তাই তিনি গোপনে ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং হিন্দু ধর্মের সব আচার–অনুষ্ঠান ও পূজা–পার্বণ ত্যাগ করলেন। সমাজের ভয়ে প্রকাশ্যে মুসলমানদের সাথে ওঠা–বসা করাও তার পক্ষে সম্ভব হলো না।
এই ছদ্মবেশী মুসলিমের মৃত্যু হলে তার আত্মীয়–স্বজন শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য তাকে শ্মশানে নিয়ে গেলেন। সেখানে অতি জাঁকজমকের সাথে নিম–চন্দন দিয়ে তার জন্য চিতা প্রস্তুত করলেন। শেষে লোবান ঢেলে চিতায় অগ্নিসংযোগ করলেন। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ল। দেখতে দেখতে সমস্ত কাঠ–খড়ি পুড়ে শেষ হয়ে গেল, কিন্তু মৃতদেহের একটি পশমও আগুন স্পর্শ করল না।
এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত জনতা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। যেভাবেই হোক শবদেহ দাহ করতেই হবে, তাই তারা আরও একটি চিতা তৈরি করে পূর্বের চেয়ে অধিক পরিমাণ ঘি–চন্দন ও শুকনো কাঠ–খড়ি সাজিয়ে অগ্নিসংযোগ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। কিন্তু তার একটি লোমও দাহ হোক, তা আল্লাহর ইচ্ছা হলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে সব কাঠ পুড়ে ছাই হলো, কিন্তু গোপনে ইসলাম পালনকারী এই হিন্দুর একটি পশমও অগ্নি স্পর্শ করল না।
নিরুপায় হয়ে তার আত্মীয়–স্বজন লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিলেন।
ইতিমধ্যে বড়পীর (রহ.) তার এক শিষ্যকে ডেকে বললেন,
“কয়েকজন লোক নিয়ে নদীর পাড়ে যাও, সেখানে একটি মৃতদেহ পাবে। সে গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তার দাফন–কাফনের ব্যবস্থা করো। জেনে রেখো, তার নাম সা’দুল্লাহ।”
বড়পীর (রহ.)–এর প্রধান শিষ্য জানতে চাইলেন,
“সা’দুল্লাহ কোন পুণ্যে জ্বলন্ত ভয়াবহ অগ্নিও তাকে স্পর্শ করতে পারল না?”
বড়পীর (রহ.) বললেন,
“সারা জাহানের মালিক ওয়াদা করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়ার আগুন কেন, জাহান্নামের আগুনও তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।”
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।