হযরত মূসা (আঃ) ও মিশরের দক্ষ যাদুকর – পর্ব ২
হযরত মূসা (আঃ) ও মিশরের দক্ষ যাদুকর – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাঠের এক প্রান্তে লাঠি হাতে হযরত মূসা (আঃ) আর হযরত হারুন (আঃ)। অপর প্রান্তে জাদুকরেরা তাদের যাদু প্রদর্শনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে উপস্থিত। জাদুকরদের সংখ্যা কত ছিল তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। জাদুকরদের সর্দারের নাম ছিল শামাউন। কথিত আছে যে, তাদের সর্দার ছিল অন্ধ।
আজকের প্রতিযোগিতায় তারা জয়লাভের আশা নিয়েই মাঠে উপনীত হয়েছে। তাই ফেরাউন ময়দানে আগমনের পর তারা ফেরাউনের কাছে আবেদন করল। কোরআনের ভাষায়- إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِن كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ অর্থঃ যদি আমরা মূসার সাথে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পারি তবে কি আমরা কোন বিনিময় পাব? কেননা, সে জাদুকরদের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই আত্ম বিশ্বাসী ছিল। (সূরা আরাফঃ আয়াত- ১১৩)
ফেরাউনও আনন্দিত। তদুপরি জাদুকরেরা বিজয়ী হওয়ার কথা তাকে শুনিয়েছে। এমন কি তারা নিজেদের উপর আস্থাশীল হয়ে বিনিময়ে কথা পর্যন্ত তুলেছে। এ মুহূর্তে জাদুকরদের সাহস দেয়া একান্ত কর্তব্য। তাই ফেরাউন বলল কোরআনের ভাষায়- نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমরা তো আমার নিকটতম লোকদের মধ্যে গণ্য হবে। (সূরা আরাফ-আয়াতঃ ১১৪)
ফেরাউনের জবাব শুনে তারা সকলেই আনন্দিত। অনন্তর তারা হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হল। হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে দ্বীনে হকের দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন। কোরআনের ভাষায়- وَيْلَكُمْ لَا تَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُم بِعَذَابٍ ۖ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرَىٰ
অর্থঃ ওহে দুর্ভাগার দল আল্লাহ তায়ালার প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। অন্যথায় তিনি তাঁর আযাব দ্বারা তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ ও বঞ্চিত হয়। (ত্ব-হা)
জালীম ফেরাউনী শক্তি ও সমর্থনের ছায়ায় যারা হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে প্রতিযোগিতার জন্য এসেছে মূসা (আঃ) -এর উপদেশমূলক বাণী তাদের প্রতি কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে? কিন্তু নবী রাসূলরা ও এবং তাহাদের অনুসারীদের সাথে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে এমন একটি অদৃশ্য শক্তি সহায়িকা শক্তি হিসেবে থাকে যা তাদের উচ্চারিত শব্দগুলো পাথরের ন্যায় কঠিন হৃদয় পর্যন্ত তীর তলোয়ারের ন্যায় কাজ করে।
হযরত মূসা (আঃ)-এর উপদেশ বাণী জাদুকরদের কানে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের ভিতর আলোড়ন সৃষ্টি হল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল যে এ ধরণের কথা কোন জাদুকর বলতে পারে না। বরং এ ধরণের কথা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকেই হতে পারে। তাদের মনের এ প্রতিক্রিয়া বাইরেও প্রতিফলিত হল। তারা বলেই ফেলল তাঁর সাথে প্রতিযোগিতা করা ঠিক হবে না। কেউ কেউ অবশ্য তাদের পূর্ব সিদ্ধান্তের উপর অটল রইল। এভাবে তাদের মধ্যে মতের দ্বৈততা সৃষ্টি হল। অতঃপর তাদের মধ্য হতে এ দ্বৈততা দূরীকরণার্থে কেউ কেউ প্রয়াস চালাল। নিজেদের মধ্যে পরস্পরে পরামর্শ করে পুনরায় সিদ্ধান্তে পৌঁছুলে যে, তাঁর সাথে অবশ্যই তাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে। কেননা, তারা উভয়ে জাদুকর। তারা জাদুর প্রদর্শন করে তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করতে এবং তোমাদের উত্তম ধর্মমতকে নস্যাৎ করতে চাচ্ছে। সুতরাং তাদেরকে অবশ্যই বাঁধা প্রদান করতে হবে। আল্লাহ পাক তাদের এ অবস্থাকে পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করেছেন-
فَتَنَازَعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ وَأَسَرُّوا النَّجْوَىٰ
قَالُوا إِنْ هَـٰذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيدَانِ أَن يُخْرِجَاكُم مِّنْ أَرْضِكُم بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ الْمُثْلَىٰ
অর্থঃ অতঃপর জাদুকরেরা নিজেদের মধ্যে বিতর্কে লিপ্ত হল এবং বলল, নিশ্চয় তারা উভয়ে জাদুকর। তাদের উদ্দেশ্যে হল জাদুর মাধ্যমে তোমাদেরকে দেশ হতে বের করে দেয়া এবং তোমাদের ধর্মমতকে নস্যাৎ করে দেয়া। (সূরা ত্ব-হাঃ আয়াতঃ ৬২-৬৩)
হযরত মূসা (আঃ) ও মিশরের দক্ষ যাদুকর – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন