অন্যের গৃহে প্রবেশের অনুমতি

অনেকেই আছে যারা অনুমতি না নিয়ে হুট করে অন্যের ঘরে ঢুকে পড়ে। অন্যের ঘর কিংবা বাড়িতে ঢুকার আগে যে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন, সেটা তারা বুঝতে চায় না। হঠাৎ করে একটা লোক কোন ঘরে ঢুকে পড়ার ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই ইসলাম ধর্মে অন্যের গৃহে প্রবেশের জন্য অনুমতি নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। শুধু প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়দের ঘরেই নয়, মা-বাবার রুমে, বোনের রুমে, কিংবা বোন ভাইয়ের রুমে প্রবেশের ক্ষেত্রেও অনুমতি নিতে হবে। কারণ, প্রত্যেক মানুষেরই একটা ব্যক্তিগত দিক রয়েছে, যা অন্যদের নিকট প্রকাশ হওয়া কখনোই কাম্য নয়।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কারো গৃহে প্রবেশের আগে তিন বার অনুমতি প্রার্থনা করবে। যদি তোমাকে অনুমতি দেয়, তবে ঠিক আছে, নইলে ফিরে যাবে।” রাসূল (সাঃ)ও যখন কারো বাড়িতে যেতে চাইতেন তখন তিনি ঘরের বাইরে থেকে গৃহবাসীকে সালাম দিতেন। ঘর থেকে সালামের জবাব ও প্রবেশের অনুমতি পেলে তিনি সেই ঘরে প্রবেশ করতেন।

এখানে আরেকটি বিষয় বলা দরকার আর তা হলো, অনেকেই আছে যারা অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে দরজার কাছে আওয়াজ দেয়। দরজায় আওয়াজ করার পর যখন ভেতর থেকে জানতে চাওয়া হয়-‘কে?’ তখন জবাবে বলে- ‘আমি’। এই অদ্ভুত জবাবকেও নিরুৎসাহিত করেছেন রাসূল (সাঃ)। তাই কেবল ‘আমি’ না বলে নিজের নামটাও বলা উচিত।

রংধনু আমরা অন্যের ঘরে প্রবেশের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে একটি সত্য কাহিনীসহ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছি।

মদীনায় এক সাহাবীর বাগানে সামারাহ বিন জুনদার নামের এক ব্যক্তি একটি খেজুর গাছ লাগিয়েছিল। ওই সাহাবী তার পরিবার-পরিজন নিয়ে সেই বাগানেই একটি বাড়ী তৈরি করে তাতে বাস করতেন। সামারাহ মাঝেমধ্যে তার খেজুর গাছটি দেখাশোনার করার জন্য অথবা খেজুর তোলার জন্য ওই সাহাবির বাড়িতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতো। একবার ওই সাহাবী সামারাহকে বললেন, “অনুমতি ছাড়া বেপরোয়াভাবে ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয়।”

সামারাহ এ কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলে বাড়ির মালিক বাধ্য হয়ে মহানবী (সা.)-এর খেদমতে এসে অভিযোগ করলেন।

তিনি বললেন, হে রাসূলুল্লাহ! এ লোকটি অনুমতি ছাড়াই আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। আপনি তাকে একটু বলে দিন যেন সে ঘরে প্রবেশ করার আগে শব্দ করে যাতে আমার পরিবারের লোকেরা তার দৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সামারাহকে ডেকে বললেন, “তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যে, তুমি অনুমতি না নিয়েই অন্যের বাড়িতে প্রবেশ কর। ভবিষ্যতে কারো বাড়িতে প্রবেশ করার আগে আওয়াজ দিয়ে তোমার আগমন সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেবে। মনে রেখ, কারো বাড়িতে তার অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা উচিত নয়।”

সামারাহ রাসূলের এ নির্দেশও মানতে অস্বীকৃতি জানালো। এবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “আমার কথা যদি তোমার পছন্দ না হয় তাহলে তুমি তোমার গাছটি বিক্রি করে দাও।” লোকটি এ প্রস্তাবেও রাজি হলো না।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “তুমি যদি এ কাজ কর তাহলে বেহেশতেও তোমাকে একটি ফলের গাছ দেয়া হবে।” এবারও লোকটি গাছ বিক্রি করতে অস্বীকার করলো। সে তার গোয়ার্তুমিতে অনড় থাকলো। সে বললো, “আমি গাছটি বিক্রিও করবো না, আর বাগানে প্রবেশের সময় কারো কাছ থেকে অনুমতিও নেবো না।”

লোকটির সব কথা শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন, “তুমি একজন অনিষ্টপ্রিয় ও পাষাণ হৃদয়ের মানুষ। জেনো রেখ, ইসলামে কাউকে কষ্ট দেয়া বা কারো ক্ষতি করার অধিকার দেয়া হয়নি।”

এবং এরপর নবীজী বাগানের মালিককে লক্ষ্য করে বললেন, “যাও বাগান থেকে খেজুরের গাছটি উপড়ে ফেলো।” গাছটি কাটা হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সামারাহকে বললেন, “যাও, আল্লাহর যমীন খোলা আছে। যেখানে মন চায় সেখানে গিয়ে গাছ লাগাও।”

এ ঘটনাটি থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, অন্যের বাড়িতে প্রবেশের আগে অনুমতি নেয়ার ব্যাপারে ইসলামে কত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে! তাই আমাদের সবার উচিত অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে সালাম দেয়া এবং অনুমতি নেয়া। এর মাধ্যমে গৃহবাসী যেমন খুশী হবে তেমনি সমাজে নেমে আসবে শান্তি, শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ববোধ।

Written By

More From Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like

আজব রোগী, আজব চিকিৎসা

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতির পথে সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছেন। ইবনে…

খোলা জানালা দিয়ে বয়ে আসছে মৃদু হাওয়া।

১. খোলা জানালা দিয়ে বয়ে আসছে মৃদু হাওয়া। বালিসে মাথা রেখে রবীন্দ্রনার্থের গল্পগুচ্ছ পড়ছি। মাথার…

জীন

আমি সুমন, ঘটনাটা সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসরের কাছ থেকে শোনা। তিনি আমাকে যেভাবে বলেছেন,…