মন্ত্রীত্বের পদমর্যাদায় হযরত ইউসুফ (আঃ)-১ম পর্ব
রাজদরবারে এ আলোচনা বৈঠকে আজিজ মেছেরসহ রাজার পরিষদবর্গ সকলে উপস্থিত ছিলেন। আজিজ মেছের তাঁর স্ত্রীর কথা শুনে ঘৃণা ও লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাবার উপক্রম হলেন। তাঁর স্ত্রী এমন জঘন্য চরিত্রের মানুষ। তাকে নিয়ে সে এ যাবত ঘর করেছেন। এই অপবাদের লজ্জায় সে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি জানতাম না আমার স্ত্রী এত জঘন্য, এত ইতর প্রকৃতির। আমি তাকে এখন থেকে চিরদিনের জন্য পরিত্যাগ করলাম। এই বলে তিনি বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এবার রাজা রায়হানের আর বুঝতে কিছুই বাকি রইল না। তাই তিনি শরাব পরিবেশনকারী ভৃত্যের সাথে একদল অশ্বারোহী সৈন্য ও ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে বললেন, ইউসুফকে স্বসন্মানে নিয়ে আস। আর তাকে বলো তিনি আমার তদন্ত ও বিচারে নির্দোষ প্রিমাণিত হয়েছেন। এখন তাঁর আবাসস্থল হবে রাজ দরবারে।
ভৃত্য ও সৈন্য দল রাজার আদেশ অনুসারে কারাগারে গিয়ে পৌছাল এবং হযরত ইউসুফ (আঃ) – কে সমস্ত বৃত্যান্ত খুলে বলল। হযরত ইউসুফ (আঃ) রাজার আদেশ শীর ধার্য করে অদের সাথে রাজ দরবারে চলে এলেন। রাজা রায়হান হযরত ইউসুফ (আঃ) – এর মুখমণ্ডল দর্শন করে অবাক হলেন। এত সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি নিষ্পাপ ছেলেকে ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে দীর্ঘ সাত বছর যাবত তারই শহরে কারাগারে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। আর এ বিষয় কোন দিন তাঁর কাছে কোন খবর পৌঁছে নাই। বিষয়টি রাজার নিকট অত্যন্ত লজ্জাকর বলে বিবেচিত হল।
তাই তিনি হযরত ইউসুফ (আঃ) কে বসিয়ে অতি আদর করলেন এবং তাঁর এই কারা ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। অতপর রাজদরবারে অত্যন্ত মর্যাদা সহকারে তাঁর থাকার বাবস্থা করে দিলেন এবং বললেন, “ইউসুফ! তুমি প্রতিদিন আমার কাছে বসবে। মাঝে মাঝে আমার কাজে সাহায্য করবে। এটাই তোমার প্রাথমিক দায়িত্ব। ” হযরত ইউসুফ (আঃ) রাজার প্রস্তাবে সন্মতি জানিয়ে বললেন, “আপনার যা হুকুম তা আমি যথাযথ পালন করব।”
হযরত ইউসুফ (আঃ) রাজার নির্দেশ অনুসারে প্রতিদিন দরবারে আসেন এবং রাজ কার্যে সহায়তা প্রদান করেন। রাজা বিভিন্ন বিষয় তাঁর নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) এমন নিখুঁত ও নির্ভুল পরামর্শ দান করেন যাতে অনেক বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজা তাঁর মতামতের উপর সম্পূর্ণ ছেড়ে দিতে আরম্ভ করেন। এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হল।
এদিকে দীর্ঘ দিন যাবত আজিজ মেছের দরবারে আসেন না। তিনি জোলেখার অপমান সহ্য করেতে না পেরে খুব অসুস্ত হয়ে পড়েন। রাজা তাকে অনেক বার খবর দিয়েছেন তবুও তিনি আসেন নি। একদিন রাজা তাকে দেখতে যান। গিয়ে দেখেন তিনি শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত অধিক। রাজা তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন রাজদরবারে তোমার দায়িত্ব অনেক এখন দীর্ঘদিন যাবত তোমার অনুপস্থিতির কারনে অনেক কাজ পিছনে পড়ে আছে। এ বিষয় এখন কি করা যায়?
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
মন্ত্রীত্বের পদমর্যাদায় হযরত ইউসুফ (আঃ)-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন