নবীজী ও কাঠুরিয়া

আরব দেশের মক্কা শহর। ৫৭০ খৃষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সেই শহরে জন্ম নেয় এক শিশু । তার নাম রাখা হয় মুহাম্মাদ- মানে প্রশংশিত। তার পিতার নাম আবদুল্লাহ, মায়ের নাম আমিনা। তিনি আমাদের মহানবী। পৃথিবীর শেষ নবী। তিনি জানতেন, পরিশ্রম করা ছাড়া জীবনে উন্নতি করা যায় না। তাই পরিশ্রম করাকে তিনি খুব গুরত্ব দিতেন।

একবার হলো কি, এক গরিব লোক তার কাছে সাহায্য চাইতে এলো। নবীজী তাকিয়ে দেখলেন লোকটির পরনে ছেড়া কাপড়, চোখে-মুখে বেদনার ছাপ। লোকটি পঙ্গু বা বুড়ো নয়। ইচ্ছে করলেই কাজ করে খেতে পারবে। তিনি বললেন, তুমি ভিক্ষা করছো কেন? খেটে খেতে পারো না।

লোকটি বলল, কি করবো হুজুর কাজ পেলে কি আর ভিক্ষা করতাম? কাজ না পেয়েই তো পেটের দায়ে ভিক্ষায় নেমেছি। নবীজীর মায়া হল। ভাবলেন, সাহায্য দিলে হয়তো একবেলা তার আহার জুটবে। কিন্তু তারপর? সারাজীবন কি লোকটা ভিক্ষা করে কাটাবে? এমন কিছু করা দরকার যাতে ওর অহাব দূর হয়। মানুষের কাছে হাত পেতে অপমান হইতে না হয়। মহানবী (সাঃ) তাকে বললেন, তোমার বাড়িতে এমন কিছু আছে যা বিক্রি করতে পারবে? লোকটি বলল, হুজুর আমি গরিব মানুষ। তেমন তো কিছুই নেই। তবে ঘরে একটি কম্বল আছে, চাইলে ওটা বিক্রি করা যায়।

নবীজী বললেন, ঠিক আছে, তাই করো তোমার একমাত্র সম্বল কম্বলটাই নিয়ে এসো।

লোকটি তাই করল। নবীজির কথা মতে চলে গেল বাড়ি। একটু পর ফিরে এল কম্বল নিয়ে। নবীজি কম্বলটি সাহবাদের দেখালে।

বললেন। এটি বিক্রি হবে। কেউ কি উপযোক্ত মূল্য দিয়ে কম্বলটি কিনতে রাজি আছ?

নবীজীর কথা শুনে এক সাহাবা বললেন, আমি কিনবো হজুর। নবীজী (সাঃ) তাকে উপযোক্ত দামে কম্বলটি বিক্রি করে দিলেন।

কম্বল নিয়ে সাহাবী চলে গেলে নবিজী লোকটিকে ডাকলেন। তার পর হাতে কিছু অর্থ তুলে দিয়ে বললেন, এই অর্থ দিতে কিছু খাবার কিনে খাও।

এরপর বাকী অর্থ দিতে তিনি কুঠার কিনলেন। সেই কুঠারে নিজেই হাতল লাগালেন। লোকটিকে বললেন, এই কুঠার নিয়ে প্রতিদিন বনে যাবে।

লোকটি তাই করল। সে প্রতিদিন বন থেকে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করতে থাকলো এতে তার খুব লাভ হলো। তার অহাভ দূর হয়ে গেল। এখন তাকে আর ভিক্ষা করতে হয় না। বরং অভাবী মানুষকে সে নিজেই সাহায্য করতে পারে।

কিছুদিন পর সে মহানবী (সাঃ) এর সঙ্গে আবার দেখা করলো। এবার তার গাঁয়ে নতুন জামা। মুখে হাসি। সে রাসূল( সাঃ) কে বলল, আমি এখন মেহনত করে খাই। আমার আর কোন অভাব নেই। আপনার কথা শুনে আমার অনেক উপকার হয়েছে। আপনি আমাকে সুন্দর জীবনের পথ দেখিয়েছেন।

তার কথা শুনে নবীজী (সাঃ) হাসলে, বললেন, যে মেহনত করে খায় আল্লাহই তাঁকে সাহায্য করেন।

তাই কবি বলেন, নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।

এই ঘটনা আমাদের বলে, জীবনে উন্নতি করতে চাইলে পরিশ্রমী হও,

জীবনকে সফল করতে চাইলে ও পরিশ্রমী হও।

যে পরিশ্রমী নয় সে অলস, সে কখনো জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারে না। একজন কবি চমৎকারভাবে এই কথাটি বলেছেন তার কবিতায়, তিনি বলেন,

পরিশ্রমে ধন আনে, পূন্যে আনে সুখ

আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে সুখ।

লেখকঃ আসাদ বিন হাফিজ।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।