হযরত ইদরীস (আঃ) -এর আগমণ
হযরত ইদরীস (আঃ)- এর আগমণ হযরত নূহ (আঃ)-এর পূর্বে না পরে, এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে যথেষ্ট মতবেদ রয়েছে। তাদের আলোচনাদৃষ্টে নিশ্চিত কোন সিধান্তে পৌঁছানো নিতান্তই কঠিন। ঐতিহাসিকদের এক দলের মতে বনী ইসরাঈল বংশীয় নবী ইলিয়াস ও ইদরীস (আঃ) একই ব্যক্তি। ইদরীস (আঃ) হল নাম আর ইলিয়াস হল উপাধি। আরেক দলের মতে হযরত নূহ (আঃ) এর উর্দ্ধতন পুরুষ হযরত ইদরীস (আঃ) তার আসল নাম আখনুখ এবং ইদরীস তার উপাধি।
হযরত ইদরীস (আঃ) এর বংশধারা হল, আখনুখ তার পিতা হযরত ইযদ, তার পিতা মাহলাইল তার পিতা কীনান তার পিতা শীস তার পিতা আদম। হযরত ইদরীস (আঃ) এর অধস্তন বংশধারা হচ্ছে আখনুখ (ইদরীস) এর পুত্র মোতাওয়াশালেহ তার পুত্র লামেক তার পুত্র নূহ। এ আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে হযরত নূহ (আঃ) হযরত ইদরীস (আঃ) এর অধস্তন বংশধারায় তৃতীয় স্তরে জন্মগ্রহণ করেছেন। ঐতিহাসিকদের মতে, হযরত ইদরীস (আঃ) ও নূহ (আঃ) আর আগমন কালের মাঝে সময় ছিল প্রায় চারশ বছর বিখ্যাত চরিতকার মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকও অনুরূপ অভিমতই প্রকাশ করেন।
অনেকে আবার বনী ইসরাঈলী নবী হযরত ইসমাইল (আঃ) এর উপাধি বলে একটা সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ট ঐতিহাসিক আলেমই তাদের স সমন্বয় প্রচেষ্টাকে প্রমাণহীন বলে অভিহিত করেছেন, তাদের দ্বিমতের যুক্তি হল কালাম পাকে বনী ইসরাঈলী নবী হযরত ইলইয়াস ও ইদরীস (আঃ) এর আলোচনা আলাদাভাবে করা হয়েছে। কাজেই এটা সুষ্পষ্ট যে, দু’জই ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি এবং এটাই যুক্তিসঙ্গত প্রমাণসিদ্ধ দিদ্ধান্ত।
আবার অনেকের মতে হযরত ইদরীস (আঃ) এর আগমন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর পরে হয়েছে। তারা হযরত ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী (আঃ) এর হযরত আনাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত মি’রাজের হাদীসকে নিজেদের মতের সপক্ষে পেশ করেন। উক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মিরাজের রাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে অনেক নবী (আঃ) এর সাক্ষাত হয়। এ সময় সকল আম্বিয়ায়ে কিরাম তাঁকে ভাল বলে আর হযরত আদম ও হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁকে পূন্যবান সন্তানের আগমন শুভ হোক বলে সম্ভাষণ জানায়। এ সময় হযরত ইদরীস (আঃ) ও তাঁকে ভাই বলে সম্বোধন করেছেন। সুতরাং তার আগমণ হযরত নূহ ও ইব্রাহীম (আঃ) এর আগেই হলে তিনি ভাইয়ের পরিবর্তে সন্তান বলেই রাসূল (সাঃ) কে সম্ভাষণ জানাতেন।
তাফসীরকার ও ইতিহাসবিদ আল্লামা ইবনে কাসীর এ যুক্তি উপস্থাপন দুর্বল ভিত্তির উপর স্থাপিত বলে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, হযরত আদম (আঃ) এর সাথে রাসূলুল্লাহ (আঃ) এর যে শক্তিশালী বংশীয় সম্পর্ক বিদ্যমান তা হযরত ইদরীস (আঃ) এর সঙ্গে ছিল না বিধায় তিনি তাঁকে ভাই বলে সম্বোধন করেছেন। সুতরাং তার আগমন যে কোন অবস্থায়ই ইব্রাহীম (আঃ) এর পরে নয়, তা নিশ্চিত করে বলা চলে।
হযরত ইদরীস (আঃ) সম্পর্কে উল্লিখিত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে তার আসল নাম মাখনুখ। ইদরীস তার উপাধি। জ্যোতিষশাস্ত্র তার মোজেযা ছিল। তিনি দুনিয়াতে বসে আল্লাহর ইবাদত করতেন আর ফেরেশতাকুল তা আসমানে উঠিয়ে নিত। তার সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কোরআনে বলেন-
অর্থঃ এবং কিতাবে ইদরীসের কথা উল্লেখ কর। কেননা, তিনি ছিলেন সত্য নবী। আমি তাঁকে উচ্চ মর্যদা দান করেছিলাম।