হযরত আদম (আঃ) এর ইন্তেকাল
হযরত আদম (আঃ) এক হাজার বছর বয়ক্রমকালে রোগশয্যায় পতিত হয়ে ছেলেদেরকে বিভিন্ন প্রকার ফলফলাদি আনতে বলেন, যাতে সেগুলো খেতে পারেন। শীস (আঃ) ব্যতীত হযরত আদম (আঃ) এর অন্যান্য ছেলেরা ফলফলাদি আনতে যাই। কিন্তু হযরত শীস (আঃ) পিতার সেবায় নিয়োজিত থাকেন। আদম সন্তানদের যারা ফলফলাদি আনতে গিয়েছিল, তারা আসতে দেরী দেখে হযরত আদম (আঃ) শীস (আঃ) কে বললেন, তুমি অমুক পাহাড়ে গিয়ে প্রার্থনা কর, তাহলে মহান আল্লাহ তোমার দোয়ার বরকতে আমার জন্য ফলফলাদি পাঠিয়ে দিবেন। শীস (আঃ) বললেন, আপনি আমার সম্মানিত পিতা। আপনি দোয়া করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ আপন মেহেরবাণীতে ফল পাঠাবেন।
আর আপনার দোয়া আল্লাহর দরবারে কবূলও হয়। হযরত আদম (আঃ) বলেন, নিষেধকৃত বৃক্ষের ফল গন্দম খাওয়ার পর থেকে আমি তার নিকট খুবই লজ্জিত। আর তুমি এসব থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। অবশেষে পিতার নির্দেশে হযরত শীস (আঃ) পাহাড়ে গিয়ে দোয়া করেন। দোয়া শেষে দেখেন, হযরত জিব্রাইল (আঃ) একটি সোনালি রংয়ের রেকাবীতে করে ডুমুর, ডালিম, সেব, নারীঙ্গী,কমলালেবু, আঙ্গুর, আঞ্জির, খরবুজা প্রভৃতি ফল নিয়ে এসেছেন।
ফলভর্তি রেকাবীটি অপর একটি লাল বর্ণের রেকাবীতে একজন হুর মাথায় করে বহন করছে। এ হুর মুখোশ খুলে হযরত আদম (আঃ) এর সম্মুখে হাযির হলে তিনি জিব্রাইল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, এ হুর কে? তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা এ হুরকে হযরত শীস (আঃ) স্ত্রী হিসাবে জান্নাত থেকে পাঠিয়েছেন। কেননা, শীস (আঃ) ব্যাতিত আপনার আর সব সন্তানই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হয়েছে।
কারো কারো মতে সে হুর পুনরায় জান্নাতে চলে যায় এবং কিয়ামত পর্যন্ত হযরত শীস (আঃ) এর জন্য জান্নাতে অপেক্ষায় থাকবে। আবার কারো কারো মতে হযরত আদম (আঃ) শীস (আঃ) এর সঙ্গে বেহেশতী এ হুরের বিবাহ দিয়ে দেন। এ হুরের ভাষা ছিল আরবী। তার গর্ভজাত সব সন্তানই আরবী ভাষায় কথা বলতেন, এমন কি আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (আঃ) এ হুরের গর্ভজাত সন্তানেরই অধস্তন বংশধর। জিব্রাইল (আঃ) কর্তৃক বেহেশত থেকে আনাতী ফলফলাদির কিছু হযরত আদম (আঃ) খান এবং কিছু তার সন্তানদের দেন।
তার সন্তানদের যে এ বেহেশতী ফল ভক্ষণ করেছে সেই জ্ঞানী-গুনী ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন হয়েছে। এবার হযরত আদম (আঃ) সন্তানদেরকে অন্তিম উপদেশ দিলেন-অল্প সময়ের মধ্যেই আমি অস্থায়ী জগত থেকে চিরস্থায়ী জগতে চলে যাব। শীস আমার স্থালাভিষিক্ত থাকবে। তোমরা সকলে তার আনুগত্য করবে এবং তার অপর বিশ্বাস স্থাপনের অঙ্গীকার করলে তিনি এ অস্থায়ী জগত থেকে চিরস্থায়ী জগতে পাড়ি জমান। পিতার বিচ্ছেদে সন্তানদের সকলেই অনেক কান্নাকাটি করে এবং জানাযা পড়ে দাফন শেষে সবাই দু বছুর পর্যন্ত কবরের কাছে অবস্থান করে। এরপর পৃথক হয়ে সকলেই চলে যায়।