আদম (আঃ)- কে জান্নাতে প্রেরণ ও হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টি

এরপর আল্লাহ পাকের হুকুমে ফেরেশতারা আদম (আঃ) এর আসন জান্নাতুল ফেরদাউসে এনে রাখেন এবং আল্লাহ পাক আদম (আঃ) কে সকল নিয়ামত দান করেন। এতদসত্ত্বেও তিনি মানসিক ভাবে সস্তিবোধ করছিলেন না। কেননা, সকল আরাম আয়েশ ও মানসিক প্রশাস্তি আসে সমগ্রোত্রীয়ের সাহচর্য থেকে। কিন্তু সারা দুনিয়ার কোথায়ও  তার সমগোত্রীয় কেউ ছিল না।

আদম (আঃ) এর অবস্থা আল্লাহ পাকের অজানা ছিল না। তাই তিনি আদম (আঃ) এর জোড়া সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন। কেননা, আল্লাহ ব্যতিত আর কেউই জোড়ার প্রয়োজন মুক্ত নয়। হযরত আদম (আঃ) যখন অস্থির-চঞ্চল হলেন আল্লাহ তার ওপর নিদ্রা পাচিয়ে দেন। এ অবস্থায় আল্লাহ পাক জিব্রাইল (আঃ) এর দ্বারা আদম (আঃ) এর বাপ পাজরের একটি হাড় বের করে আনেন।

কিন্তু এতে আদম (আঃ) কোন ব্যথা-বেদনা বা কষ্ট অনুভূত হয় নি। এ অবস্থায় তিনি যদি ব্যাথা বেদনা কষ্ট অনুভব করতেন, তবে পুরুষের হৃদয়ে নারীর জন্য প্রেমপ্রীতি আর ভালবাসা সৃষ্টি হত না। আদম (আঃ) এর পাঁজরের হাড় থেকে তার জীবন সাথী হযরত হাওয়া (আঃ)- কে সৃষ্টি করেন। চেহারার সৌন্দর্য। রূপ-লাবণ্য তিনি ছিলেন অনন্যা।

তদপুরি আল্লাহ তাআলা হাওয়া (আঃ) কে বুদ্ধিমত্তা, লজ্জাশীলতা, এবং পরিপূর্ণ প্রীতি ও ভালবাসা গুন বৈশিষ্ট দিয়ে পরিপূর্ণ করেই সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে বেহেশতের সুসজ্জিত পোশাক পরিয়ে স্বর্ণখচিত মুকুট মাথায় পরিয়ে স্বর্ণখচিত আসনে বসান। অতঃপর হযরত আদম (আঃ) কে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে হাওয়া (আঃ)-এর সাথে তার দেখা করানো হয়। 

হযরত আদম (আঃ) তাঁকে দেখার পর তার দিকে হাত বাড়াতে চাইলে আল্লাহর তা’আলার পক্ষ থেকে আওয়াজ এল হে আদম! সাবধান বিয়ের পূর্বে তার সংস্পর্শে যাওয়া তোমার জন্য হারাম। তখন আদম (আঃ) বিয়ে করার নিবেদন করলেন। আল্লাহ তা’আলা তার আবেদন কবূল করে উভয়ের বিয়ে দেন। এ উপলক্ষে আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের লক্ষ্য করে বলেন- সকল পর্দা লাগানো হোক এবং আজ গহনাগাটি, মারওয়ারীদ ও হীরা জহরত উৎসর্গীকৃত হবে।

এ সাদী মোবারক কেন্দ্র করে সকল ফেরেশৎ তুবা বৃক্ষের নীচে হাজির হলে আল্লাহ তা’আলা স্বীয়পর্দা সরিয়ে ফেলেন এবং নিজেই স্বীয় স্তব-স্তুস্তি, প্রশংসা ফেরেশতাদেরকে শুনিয়ে দেন। আলাহ তা’আলা হযরত আদম (আঃ) – এর সাদী মোবারকে যে খোতবা পড়েন তার মর্মার্থ নিম্নরূপ-

সকল স্তব-স্তুতিই আমার, প্রশংসা সম্মান ও বুযুর্গী আমার চাদর, মহত্ত্ব ও বড়ত্ব আমার তহবন্দ, সমগ্র সৃষ্টি আমার দাস-দাসী, পয়গম্বররা আমার রাসূল ও ওলী, মুহাম্মদ (সাঃ) আমার হাবীব, বন্ধু ও রাসূল। আমি বস্তুনিচয় সৃষ্টি করেছি যেন সেসব আমার একত্বের সাক্ষী হয়। সকল ফেরেশতা, আসমানের সকল অধিবাসী এবং আরশ বহনকারীরা আমার একত্বের সাক্ষ্য প্রদান  করে। আমি  আমার নতুন সৃষ্টির শক্তিমত্তায় হাওয়াকে আদমের নিকট বিয়ে দিচ্ছি।

আদমের উপঢৌকন এবং হাওয়ার মহর হচ্ছে আমার তসবীহ- তাহলীল এবং আমার পবিত্র ও মহত্ত্ব বর্ণনা। আল্লাহ ব্যতীত কোন হুকুম কর্তা নেই, তিনি এক তার কোন শরীক নেই। হে আদম হাওয়া! তোমরা আমার বেহেশতে যথারীতি বসবাস করতে থাক। তোমারা তথাকার ফলফলাদি সানন্দে খাও কিন্তু ঐ গাছটির নিকটেও যেও না, যদি যাও তবে, তোমরা জালেমদের  অন্তর্ভূক্ত হবে। তোমাদের উভয়ের প্রতি আমার সালাম, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।

এরপর হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ পাকের প্রশংসা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-

অর্থঃ আমি আল্লাহ তা’আলার পবিত্র বর্ণনা ও প্রশংসা করছি। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন হুকুম কর্তা নেই। আল্লাহ অতি মহান। আল্লা তা’আলার শক্তি-সামর্থ ব্যতীত কারো কোন শক্তি-সামর্থ নেই। যিনি অত্যন্ত মহৎ মহানও সম্মানিত।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।