হোটেলে কাজ করেও স্কুলে প্রথম স্থান !

‘ভাইয়া ভাত দেব? তরকারি লাগবে?’ কোমরে গামছা৷ হাতে ভাতের গামলা৷ খদ্দের সামলানোর দক্ষতা দেখে কে বলবে এই ছেলেটাই মাধ্যমিকে নিজের স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত! ভারতের কালনার ছোটমিত্রপাড়ার টুটুল গুপ্ত৷ স্কুল পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৬২২৷   কালনার নতুন বাসস্ট্যান্ডে কোনও রকমে একটি হোটেল চালান টুটুলের বাবা আর মামা৷ পড়ার ফাঁকে নিজেদের হোটেলে কাজ করতে হয় টুটুলকেও৷ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়েও মাধ্যমিকে সফল কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রটি৷
ছোটমিত্রপাড়ায় টিনের চালের একরত্তি ঘরে বাস টুটুলদের৷ মা শিপ্রা গুপ্ত গৃহবধূ৷ বাবা বিশ্বজিত্‍ গুপ্ত মামার সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডে ছোটখাটো একটি হোটেল চালান৷   শিপ্রাদেবী বললেন, ‘একটাই ঘরে খাওয়া-শোওয়া-বসা সব কিছু করতে হয়৷ দুই ছেলের পড়াশোনার জন্য ওই ঘরেই দেওয়াল তুলে একটা কোণা আলাদা করে দিয়েছি৷’ টিনের চালের ওই ঘরে বসে গরমে ঘামতে ঘামতে টুটুল জানাল, ‘পড়া শেষ হতে রোজই প্রায় রাত তিনটে বাজত৷ তার পর ঘুমোতে যেতাম৷’   টুটুল বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৭৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, জীবনবিজ্ঞানে ৯৭, অঙ্কে ৮৭, ভূগোলে ৮৬ পেয়েছে৷ ইংরেজি ছাড়া সবেতেই লেটার মার্কস৷ টুটুলের বাবা বিশ্বজিতবাবু জানালেন, ‘কোনও রকমে চলে হোটেলটা৷ কোনও কোনও দিন ১০০-২০০ টাকা লাভ হয়৷ তা-ও দু’ভাগ হয় আমার আর শালাবাবুর মধ্যে৷ হোটেলে লোক রাখলে তো হাতে আর কিছুই থাকবে না৷’ বিশ্বজিতবাবুর কাছ থেকে জানা গেল, টুটুলই একদিন বলে ‘বাবা, তোমার খুব কষ্ট হয় তাই না?’ এর পরই পড়ার ফাঁকে হোটেলে যাওয়া শুরু মেধাবী ছাত্রটি৷   বিশ্বজিতবাবু বলেন, ‘দুই ছেলেই মেধাবী হলেও বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্যটুকু নেই আমার৷’ স্কুলের শিক্ষকরা নিয়মিত সাহায্য করেছেন টুটুলকে৷ পড়া দেখিয়ে দিয়েছেন৷ স্কুলের শিক্ষক তাপসকুমার কার্ফা বলেন, ‘ভীষণ মেধাবী ছাত্র টুটুল৷ মাধ্যমিকে এক থেকে দশের সঙ্গে ওর নম্বরের যে ফারাক, তা-ও হয়তো থাকত না৷
যদি ওকে জীবনের লড়াইটাও না লড়তে হত৷’ বায়োসায়েন্স নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক টুটুল৷ ‘অঙ্কুর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সৌজন্যে একাদশ শ্রেণির বই মিলেছে৷ স্কুল থেকে মাধ্যমিকের রেজাল্ট নিয়ে বাড়িতে এসে মাকে প্রণাম করেই সোজা হোটেলে গেল টুটুল৷ রোজকার মতো বাবাকে সাহায্য করতে৷   ভাতের গামলা হাতে খদ্দের সামলাতে সামলাতে বলল, ‘ভবিষ্যতে চিকিত্সক হতে চাই৷ দরিদ্রদের সেবা করতে চাই৷’

Written By

More From Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like

ইফতারে মুড়িতে জিলাপি মাখার পক্ষে vs বিপক্ষে?

মুড়ির সঙ্গে জিলাপি খাবো নাকি খাবো না, এই নিয়ে তো ভয়ংকর তুফান এখন ফেসবুক জুড়ে।…

★ জিনের মিষ্টি ★-

আমার খালা বাড়ির এলাকার এলাকার এক হুজুরের কাহিনী। স্হানটা হচ্ছে সাতক্ষিরা গড়েরকান্দা। ষে যখন মাদ্রাসায়…

ভয়ানক ভূত

ঘটনাটি আমার এক বড় ভাই আনিসের কাছ থেকে শোনা। ঘটনাটি ঘটেছিল জামালপুরে। জামালপুরে একজন রিক্সাচালক…