স্বপ্ন যোগে রাসূলের দিদার।
ইমাম কাফেলায় হাবীবের ঈমানী চেতনার প্রকাশ্য শক্তি যেন কয়েকগুণ বাড়াল। ইমাম হোসাইন (রাঃ) গভীর রাতে ঘুমের মাঝে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দেখলেন। খোদার হাবীব ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর স্বীয় নানাজান। হোসাইনকে ডেকে ডেকে বলছেন চির শান্তির বাণী তোমার ধৈর্য্য ধারণ কর। তোমাদের ও আমার মহামিলনের শুভক্ষণ এগিয়ে এসেছে। আর বেশী দেরি নই। ইমাম হোসাইন (রাঃ) স্বপ্নের মাঝে চিৎকার করে উঠলেন।
তিনি যেন হঠাৎ কর কি ভাবলেন। বিষ্ময়ে অভিভুত হলেন। জয়নব এসে হোসাইন (রাঃ) এর গায়ে হাত বুলালেন। তার যাবতীয় সংবাদ জিজ্ঞাসা করলেন। অনেক পরে ইমাম হোসাইন চোখ মেললেন। তাকালেন বোনের দিকে। বললেন, প্রিয় বোন আমাদের জন্য সুসংবাদ। হয়ত অচিরেই আমরা শাহাদাতের এক বিরাট তৃপ্তির সাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছব আমাদের নানাজান মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দরবারে।
পৃথিবীর যাবতীয় পাপরশীর মহাগ্লানী কাটিয়ে মহান পবিত্রতার আনন্দতম মধুর পরিবেশ আমরা পৌঁছব আজ রাতে নানজান আমাকে তাই বলে গেছেন। হয়ত বিধাতার লেখা আমাদের উপর চিরস্বার্থক হতে চলেছে। মহান আল্লাহর ইচ্ছা সফল হউক। আর আমরাও চাই, মহান আল্লাহ যা চান, ঠিক তাই। কারণ তার ইচ্ছায়ই রয়েছে বান্দার পবিত্র তৃপ্তি। জয়নব ভাইয়ের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বললেন- আমরাও মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তে পূর্ণ খুশি। আমরাও চাই একমাত্র আল্লাহর রেজামহী। আর সে জন্য পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখ কষ্ট নির্যাতন অকাতরে মেনে নিব অবশ্যই।
এ সকল কথার কাকুলী যখন দু’জনের মধ্যে চলছিল তখন ঠিক তখনই আব্বাস এসে ইবনে জিয়াদের চিঠি হস্তান্তর করল। আর ওমরের ইচ্ছাও ব্যক্ত করল। সবকিছু শুনে ইমাম সাহেব কিছু সময়ের জন্য চিন্তা করে, পরে বললেন, আজ কোন যুদ্ধ নয় বরং আজ শুধু ইবাদাতের মধ্যে দিয়েই রাত কাটাতে চাই। আজ যুদ্ধ করার মত মানুসিকতাও নেই। আর সময়তো নেইই। কারণ সন্ধ্যা প্রায় সমগত । যুদ্ধ হবে কাল। এটাই আমার সিধান্ত এবং ইচ্ছা।
এ সকল সংবাদে খুশি হলেন। এ সংবাদ সকলের মনে আনন্দ দিলেও সীমারের মনে আনন্দের পরিবর্তে দুঃসহ ব্যাথা এনে দিল। সে বলল, যুদ্ধ হবে এখনই। আর দেরী করা যায় না। সীমারের শক্তি প্রয়োগমূলক কথা শুনে আব্বাস বিন আলীর রক্তেও ঈমানের তরঙ্গ ঢেউ খেলতে লাগল। বললেন, আয়রে পাষান। আয়রে সীমার। আয়রে দানব, তোর রক্তেই বাহাই স্রোতে ধারা। ওমর উত্তেজিত এ অবস্থা দেখে উভয়কে বিনম্র হতে বললেন।
আব্বাস বিন আলীও ভাবলেন যে, একা একাই ইমাম হোসইন এর কথা ব্যতীত যুদ্ধ করা ঠিক হবে না। আর এটা হবে অপরাধ। তাই তখনকার মত সীমার বেঁচে গেল। যুদ্ধ আর হল না। বিরাট ভয়াবহ পরিণতি হতে বেঁচে গেল উভয়েই। আব্বাস ফির এসে গেলেন নিজ শিবিরে। বিধাতার রহমত নাযিল হল সেদিনের মত যুদ্ধ থেকে উভয় দলই বাঁচল।