পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্লাবন-৪র্থ পর্ব

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্লাবন-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ইবলিস জাহাজ থেকে আবতরন করে সারা পৃথিবী ঘুরে কোথাও কোন পুরুষ বা অন্য প্রাণীর অস্থিত্ব খুঁজে পেল না। তখন সে হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয় জীবন-যাপন শুরু করল। কয়েক দিন এভাবে থাকার পর তার ধৈর্য্য আর মানল না । তখন সে সোজা হযরত নূহ (আঃ) – এর নিকট গিয়ে বলে, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমার বিরাট উপকার করেছেন । প্লাবনের ভয়াবহতা থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। এ জন্য আমি আশেষ কৃতজ্ঞ । এখন বিনিময়ে আমি আপনাকে কিছু দিতে চাই। আপনি আমার নিকট কি চান? নবী বললেন, তোর নিকট চাইবার আমার কিছুই নেই। তবে একটি বিষয় চাইতে পারি, সেটা হল আমার উম্মতদেরকে পথভ্রস্ট করার চেষ্টা করিস না।

শয়তান নবীর কথার উত্তরে বলল, হুজুর! আমি আল্লাহর কসম করে বলতে পারি জীবনে আমি কোন মানুষকে অন্যায় করার জন্য প্ররোচিত করি নি। বরং এ বাপারে মানুষেরাই চিরদিন আমাকে উত্যাক্ত করেছে ।  আমি শুধু মাত্র অন্যায় কাজের সূচনা করে বিদায় নিতাম । পরে ওটাকে সঠিক রুপদানকারী বা সঞ্জিবীত করার দায়িত্ব চিরদিন বনী আদমেরাই পালন করেছে। দ্বিতীয়ত আমি বিনা দাওয়াতে কোথাও গিয়ে উপস্থিত হই না। ঘন ঘন দাওয়তের পর হয়ত একবার গিয়ে দু’একটা উপদেশ দিয়ে এসেছি । এর অতিরিক্ত কোন দিন কিছু করি নি। আগামীতেও করব না। এ ওয়াদা আপনাকে দিতে পারি ।

যেমন ধরুন জনৈক নবি ইন্তেকালের পরে আমি একখানা সুসজ্জিত ঘর নির্মাণ করে তার মধ্যে মৃত নবীর হুবাহু আকৃতির একটি মূর্তি তৈরি করে রাখি । এর পরে আমি কাউকে তার পূজা করতে দাওয়াত দেই নি । মানুষেরা স্ব-ইচ্ছা মূর্তির নিকট আসে তার পূজা-অর্চনা আরম্ভ করে। অল্প দিনে মজলিশটি ভালই জমে গেল । বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে মানুষ এসে এ পূজায় অংশ গ্রহণ করতে থাকে । এমন কি শেষ দিকে মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে নবীর মূর্তির নিকট নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রার্থনা করত। নিঃসন্তান রমণীরা সন্তান লাভের কামনা করত। অর্থহীনতা দূর করণার্থে মূর্তির নিকট তার দয়া প্রার্থনা করত। কালক্রমে এখানে পুরোহিতের আস্তানা হয় এবং বার্ষিক মেলার নিয়ম প্রবর্তিত হয়।

এক সময় ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা নবীর মূর্তি নিয়ে এভাবে বাড়াবাড়ি ও শেরেকী করার প্রতিবাদে দল বেধে এসে নবীর মূর্তি রক্ষিত মন্দিরের উপর আক্রমণ করল । তখন পুরোহিত চিৎকার দিয়ে তার ভক্তবৃন্দকে ডাকল । বেশ লোক সেখানে সমবেত হল । তখন উভয় দলের মধ্যে প্রথমে কথাবার্তা পরে ঝগড়া, শেষ পর্যন্ত মারামারি ও যুদ্ধে রুপ নিল। ধর্ম পরায়ণেরা মনে করেছিল তাদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা সরাসরি সাহায্য করবেন। তাই তারা খালি হাতে সেখানে উপস্থিত হয়।  আর ধর্মদ্রোহীরা অস্ত্রে সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সেখানে আসে । এ অবস্থায় মারামারি ও যুদ্ধের পরিণাম অত্যন্ত দুঃখজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে । ধর্মপরায়ণের দল মার খেয়ে হতাহত হয়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। আর ধর্মদ্রোহীরা বিজয় পতাকা উড়িয়ে আনন্দ করতে থাকে । এ বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধরা ও বুদ্ধিজীবীরা আলোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছল যে, যুদ্ধে যারা বিজয়ী হয়েছে তারাই হকপন্থী। আর যারা হেরে গেছে তারা বাতিলপন্থী। অতএব হকপন্থীদের সাথে থাকাই আমাদের নাজাতের একমাত্র পথ । এই বলে সারা দেশের অধিকাংশ মানুষ মূর্তি পূজায় অংশ গ্রহণ করে । এ ক্ষেত্রে মানুষের কৃতকর্মের জন্য আমাকে আদেী দায়ী করতে পারেন না।

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্লাবন-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।