এক মহিলা বুজুর্গের কারামতি
এক বুজুর্গ বলেন, জনৈক আবেদকে সাথে নিয়ে আমি জুমআর দিন বাইতুল মোকাদ্দাস হতে রিমলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মরুভূমিতে দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর সেই বিজন ভূমিতে হঠাৎ আমরা এক শব্দ শুনতে পেলাম। মানুষের কোন সাথী না থাকলে মানুষ ভয় পায়। কোন পথ প্রদর্শক না থাকলে তার পথ সংকুচিত হয়ে আসে। আমরা সেই শব্দ লক্ষ্য করে সামনে এগিয়ে দেখলাম, এক মহিলা ঐ কথা বলছে। তার গায়ে ছিল একটি পশমী জুব্বা ও পশমী চাদর। আমরা তাকে ছালাম করলাম।
সে ছালামের উত্তর দিয়ে গিজ্ঞেস করল, তোমরা কোথায় যাচ্ছ? আমরা বললাম বিমলা যাচ্ছি। মহিলা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কি উদ্দেশ্যে বিমলা যাচ্ছ? আমরা বললাম, সেখানে আমাদের কতিপয় বন্ধু বসবাস করেন। এবার সে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের ক্বলবের বড় বন্ধু কে? আমরা বললাম, আল্লাহ পাক আমাদের এবং সকল মুসলমানদের বন্ধু। সে বলল, আল্লাহ পাক তোমাদের মৌখিক বন্ধু, পক্ষান্তরে তিনি আমার মৌখিক ও অন্তরিক বন্ধু। মহিলার কথা শুনে আমরা বললাম, তোমাকে বড় বিজ্ঞ ও বুজুর্গ মনে হচ্ছে। কিন্তু তোমার মধ্যে একটি ক্রুটি দেখতে পাচ্ছি। সে বলল, কি ক্রুটি? আমি বললাম, তুমি একজন যুবতী মহিলা, অথচ কোন মহরম ছাড়া কেমন করে একাকী ছফর করছ? আমার এ প্রশ্নের উত্তরে সে নিম্নের আয়াতটি তেলাওয়াত করল।
অনুবাদঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলাই হচ্ছেন আমার মদদগার, যিনি এই কিতাব অতীর্ণ করেছেন । আর তিনি নেক বান্দাদের সাহায্য করে থাকে।
আমি আমার কম্বল হতে কয়েকটি দেরহাম বের করে তাকে দিলাম। সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, এ দেরহাম তুমি কোথায় পেয়েছ? আমি বললাম, এটি আমি সৎ উপায়ে উপার্জন করেছি। সে বলল, তোমার ঐ সৎ উপায়টি বড় দুর্বল। অতএব তোমার একীন বড় দূর্বল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সবল একীনের আলামত কি? ,মহিলা জবাব দিল, যতক্ষণ না তুমি অবৈধ উপায়ে গঠিত তোমার দেহের গোস্তসমূহ কাঁচি দ্বারা কেটে তদস্থলে বৈধ উপায়ে গোস্ত পয়দান করবে ততক্ষণ তুমি মজবুত একীনের দরজায় পৌছতে পারবে না। আমি জানতে চাইলাম তোমার এ বক্তব্যের সততার প্রামাণ কি? মহিলা সাথে সাথে একটি মুটি কঙ্কর সাতে নিয়ে বলল, হে দুর্বল মন! এটা গ্রহণ কর। আমার সাথী মোহাম্মদ আবেদ মহিলার হাত থেক নিয়ে দেখল ঐ কঙ্কর দিনারে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। মহিলা বলল, এই দিনার ইতিপূর্বে কোন মানুষ ষ্পর্শ করেনি। এটা তোমরা নিয়ে যাও।
অতঃপর সে আমাকে লক্ষ্য করে বলল, এ দিনার তোমাকে এ জন্য দেয়া হয়নি যে, এটা নিয়ে তুমি পলায়ন করবে। আমি জানতে চাই তোমরা এখন কোথায় যাবে? আমি বললাম, আমরা এখন বিমলা যাব। মহিলা বলল, এটা তো বিমলা। সাথে সাথে দেখতে পেলাম, আমি বিমলার ফটকে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা ভেতরে প্রবেশ করে দেখলাম, লোকেরা জুমআর নামায শেষ করে মসজিদ থেকে বের হচ্ছে। মোহাম্মদ আবেদ মহিলার সেই দিনার দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
আল্লাহর ধ্যানমগ্নে এক বেদুইন সম্পর্কে হযরত ওয়াছেতী (রাঃ) বলেন, একবার আমি এক বিজন মরুভূমিতে ভ্রমন করছিলাম। হঠাৎ সেখানে এক আরব বেদুইনের সাক্ষাত পেলাম। সে এক স্থানে বসে ধ্যানমগ্ন ছিল। আমি তার নিকটে গিয়ে ছালাম করলে সে উত্তর দিল। আমি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলে সে বলে উঠল, আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাক। কেননা জিকির হল কলবের শেফা। মানুষ আল্লাহর জিকির ও ইবাদতের ব্যাপারে অবহেলা করছে। অথচ আল্লাহ পাক তাকে দেখছেন এবং ক্রমে সে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কথা বলেই সে চোখের পানি ছেড়ে দিল। তার কান্না দেখে আমিও কাঁদতে লাগলাম।
পরে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এখানে একাকী কি করছ? সে উত্তর দিল, আমি একা নই, আমি আল্লাহকে ভালবাসি এবং তিনি আমার সাথেই আছেন। অতঃপর তিনি দাড়িয়ে এক দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, হে আমার মালিক! তোমার সকল মাখলুক তোমাকে ত্যাগ করে অপরের পেছনে ছুটছে। অথচ তুমিই মানুষের একমাত্র সহায়। আমি তার পেছনে পেছনে হাঁটছিলাম। কিছুক্ষণ পর তিনি আমার দিকে ফিরে বললেন, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক। তুমি আমার পেছনে এসো না, বরং আমার তুলনায় আরো ভাল মানুষের সন্ধান কর এবং আমাকেও নিজের থেকে আরো ভালোর সাথে থাকতে দাও। এ কথা বলেই সে অদৃশ্য হয়ে গেল।