পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্লাবন-৩য় পর্ব
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্লাবন-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
উম্মতেরা জমিনের চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন । সর্বত্র পরিষ্কার দেখা যায়। তবে উত্তর দিকে কিছু দূরে একটি বাগানের মত কি যেন মনে হয়। উম্মতেরা এ ব্যাপারটি দেখে অবাক হলেন এবং রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য সেদিকে রওয়ানা করলেন। ধীরে ধীরে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে দেখলেন বাস্তবিকই একটি বিরাট বাগানের অস্তিত্ব সেখানে বিরাজমান। এমন প্লাবন এর পরে কোন বাগানের অস্তিত্ব পৃথিবীতে বাকি থাকতে পারে; কি এটা তাদের নিকট অতি বিস্ময়কর বলে মনে হল। তারা আরো সম্মুখে অগ্রসর হয়ে দেখল এক সুবিশাল বাগিচা। উম্মতেরা কৌতুহল বশে বাগানের মধ্যে প্রবেশ করে দেখলেন এক গোয়াল ঘরে অনেক গাভি, আস্তাবলে অনেক ঘোড়া এবং কতিপয় মানুষও সেখানে ঘোরাফেরা করছে। তখন তারা লোক গুলোর নিকটে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ভাই আপনারা কারা ? তারা বলল, আমরা গরীব কৃষক । উম্মতেরা জিজ্ঞেস করল। আপনারা এখানে কিভাবে বেঁচে রইলেন।
সারা পৃথিবী ব্যাপী এত বড় ভয়াবহ প্লাবন হল, তাঁর মাঝে আপনাদের বস্তি ও আপনারা কিভাবে রক্ষা পেলেন? কৃষকেরা বলল ভাই আমরা এখানে অসামান্য বৃষ্টি ব্যথিত আর কিছুর খবর জানি না। আমরা হযরত নূহ (আঃ)-এর উম্মত বলে দাবি করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁকে আমরা আজ পর্যন্ত চোখে দেখি নি। তাঁকে এক নজর দেখার জন্য আল্লাহর দরবারে সেজদায় পড়ে আমার আম্মা আজ কয়েক বছর যাবত কান্নাকাটি করে দিন গুজরান করছেন। তিনি ঐ ঝুপড়িতে থাকেন এবং নবীর সাক্ষাতের জন্য ব্যকুল হয়ে কাঁদছেন। আমরা তাঁর আঠারো জন সন্তান-সন্ততি সদা সর্বদা তাঁর খেদমত করে থাকি। তাঁর উপদেশ অনুসারে চলি এবং যুগের নবী হযরত নূহ (আঃ)-এর অনুসন্ধানে দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়াই। বর্তমানে আমাদের আম্মার অসুস্ততার জন্য কেও নবীর সন্ধানে যেতে পারি নি। সকলেই আম্মার নিকটে আছি। আমরা চাষাবাদ করি এবং বাগানে ফলমূল উৎপাদন করে জীবন ধারন করে থাকি। উম্মতেরা এ সব লোকের কথা শুনে বলল, ভাই তোমার আম্মার নিকট আমাদের একটু নিয়ে যাবে? তারা বলল চলুন, তিনি এখন কিছুটা সুস্থ। উম্মতেরা সাথে রওনা হল। বিশাল সে বাগান। মনে হয় যেন কয়েকটি গ্রাম জুড়ে বাগানের পর বাগান রয়েছে। অনেকক্ষণ হাটার পরে তারা গিয়ে একটি গাছের পাতার তৈরি ঘরের নিকটে পৌঁছল । অতপর তাদের একজনে ঘরে ঢুকে তার আম্মাকে মেহমান আগমনের খবর দিল। বৃদ্ধা তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে বললেন, এবার হয়ত আল্লাহ তা’য়ালা হযরত নূহ (আঃ) – এর খাস উম্মতদের সাথে সাক্ষাতের নছিব দান করবেন। এই বলে বৃদ্ধা তাদেরকে ঘরে নিয়ে আসার জন্য ছেলেদেরকে বললেন । তখন উম্মতেরা বৃদ্ধার নিকট গমন করল । বৃদ্ধা তাদেরকে ধেকে বললেন, বাবা! আজ আমি ধন্য, তোমাদের ন্যায় নবীর প্রিয় ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য আল্লাহ আমাকে এত সহজে দান করবেন তা কোন দিন কল্পনা করি নি।
আমি হযরত নূহ (আঃ) এর সাথে স্বপ্নে কিছুটা সম্পর্ক রাখার সৌভাগ্য লাভ করেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে তাকে দর্শন করার সৌভাগ্য আমার হয় নি। তাই দিবা-রাত্র আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে বলি, হে আল্লাহ! আমার জীবনে অন্তত একবার নবীর দর্শন লাভের সৌভাগ্য দান কর। আপনারা যে নবীর একান্ত ঘনিষ্ঠ সহচর সে খবর আমি পেয়েছি । আপনাদের দর্শন লাভে আমি অন্তরের যে কত তৃপ্তি লাভ করেছি তা আপনাদিগকে বলে বুঝাতে পারব না। আমি আজ আপনাদের মারফত নবীর দরবরে ছালামটুকু প্রেরণের ভাগ্য লাভ করছি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। আপনারা আমার অ আমার সন্তানদের জন্য একটু দোয়া করুন যেন নবীর প্রদর্শিত পথের সন্ধান লাভ করতে পারি। কিয়ামতের দিন যেন নবীর কদমের নিকট আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের একটু স্থান করে দেন ।
উম্মতেরা বৃদ্ধার অবস্থা দেখে অবাক হলেন এবং বললেন, আম্মা! আপনি আল্লাহ তা’য়ালার একজন অতি প্রিয় ব্যক্তি । আপনার পদমর্যাদার কথা আমরা এখানে বর্ণনা করব না। আমারা আপনার খবর ও আপনার কথা নবীর খেদমতে পৌঁছে দেব। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন। এই বলে উম্মতেরা বিদায় হলেন।
ওদিকে আল্লাহ তা’য়ালা নবীকে হুমুম দিলেন তিনি যেন জাহাজ ভেঙ্গে জুদী পাহাড়ের উপর একখানা মসজিদ নির্মাণ করেন এবং উম্মতদের জন্য আবাসিক ঘর তৈরি করেন। জাহাজে নবীর উম্মতদের সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই শত । তাদের মধ্য থেকে স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে জুদী পাহাড়ের উপর নির্মিত নতুন শহরের নামকরণ করেছেন ‘ছামানীন’ ছামানীন অর্থ আসা। বাকি উম্মতদেরকে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আদেশ করেন।