এক মহিলা আবেদা

শায়েখ আবূ আব্দুল্লাহ ইস্কান্দারী (রহঃ) বলেন, একবার আমি কোন আল্লাহ ওয়ালা পুরুষের সন্ধানে লোকালয় ত্যাগ করে এক পাহাড়ে চলে গেলাম। একদিন হঠাৎ সেখানে কোথা হতে এক মহিলার আগমন ঘটল। আমি মনে মনে বললাম যদি কোন পুরুষের সাথে সাক্ষাত হত, তবে ভালো হত। আমার মনে এ কথা কল্পনা হওয়ার সাথে সাথে সে বলে উঠল, হে আবূ আব্দুল্লাহ কি আশ্চর্য ব্যাপার!

তুমি একজন মহিলার সামনে দাঁড়াবার যোগ্যতা রাখো না। সুতরাং কোন পুরুষের সাক্ষাত পেলেই তোমার কি লাভ হবে? আমি বললাম, তুমি অনেক বড় দাবী করছ। সে বলল, ঐ দাবী হারাম যার পেছনে কোন দলীল  নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার দাবীর পেছনে কোন দলীল আছে কি? জবাবে সে বলল, আমার দলীল হল, আমি যা কামনা করি আল্লাহ আমাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ যেভাবে চান আমি সেভাবে চলি।

এবার আমি বললাম, তোমার বক্তব্য যদি সত্য হয়, তবে এখুনি আমাকে একটি “ভুনা মাছ” এনে দেখাও। আমার বক্তব্য শুনে সে “লা-হাওলা” পড়ে বলল, তুমি একটি সামান্য বিষয় দাবী করছো। তুমি বরং এ দাবী করতে পারতে যে, ইয়া আল্লাহ! আমাকে শত্তক আগ্রহের এমন দুটি বাহু দান কর যা দ্বারা আমি আকাশে উড়ে বিচরণ  করতে পারি। এ কথা বলেই সে আকাশে উড়ে চলে গেল।

আবূ আব্দুল্লাহ বলেন, আমি তার কথা শুনে অনুশোচনা ও লজ্জায় একেবারে মাটির সাথে মিশে যেতে লাগলাম এবং সেই উড়ন্ত মহিলার পেছনে পেছনে দুটি চিৎকার করে বললাম, সরাদায়দানী! ঐ পবিত্র জাতের কসম! যিনি তোমাকে দান করেছেন এবং আমাকে বঞ্চিত করেছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে তুমি আমার জন্য কিছু দোয়া কর।

সে উত্তর দিল, তুমি তো পুরুষদের দোয়া কামনা করছিলে। মহিলার দোয়ায় তোমার কি লাভ হবে? আমি বললাম,  যদি দোয়া করতে না চাও, তবে অন্তত একটু তাওয়াজ্জুহ দান কর। সে বলল, আমি এখন যে অবস্থানে বিরাজ করছি, তা তোমার প্রতি নজর দান হতে বহু উত্তম। সুতরাং সে আশা ত্যাগ কর। অবশেষে আমি বিনীতভাবে নিবেদন করলাম, তবে সামান্য দোয়াই কর। এবার সে বলল, আগামীকাল তুমি এমন ব্যক্তির সাক্ষাত পাবে, যার দোয়া কবূল হয়। এ কথা বলেই সে প্রস্থান করল।

পরদিন সকালে আমি এক আল্লাহওয়ালা বুজুর্গের সাক্ষাত পেলাম। আমি তার নিকট দোয়া প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, তুমি এক আল্লাহ ওয়ালী আবেদার দোয়া হতে  বঞ্চিত হয়েছো। তুমি কি এমন অন্ধ যে, কুফা নগরীর রাইহানকেও চিনতে পারলে না? আগামিকাল তুমি একদল দিওয়ানার সাক্ষাত পাবে, তাঁর পূর্বে আমি তোমার জন্য দোয়া করতে পারবো না। এ কথা বলেই তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

পরদিন যথা সময় আমি এক বুজুর্গের সাক্ষাত পেলাম। তিনি অত্যন্ত করুন স্বরে কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। আমি তাঁর তেলাওয়াতে মুগ্ধ হয়ে বললাম, ঐ পবিত্র জাতের কসম। যিনি তোমাকে এত সুন্দর তেলাওয়াতের তাওফিক দান করেছেন। আমার জন্য রহমতের দোয়া কর। কিছুক্ষণ পর সেখানে অন্য এক বুজুর্গের আগমন ঘটল। তিনি আমাকে বললেন, এমন  দিওয়ানার সাথে তোমার কি সম্পর্ক যার চক্ষু হতে সর্বদা অশ্রু বর্ষন হতে থাকে? কিন্তু যেহেতু তোমার জন্য দোয়া করতে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

তাই বলছি বর্ণিত দিওয়ানদের সাথে সম্পর্ক রাখবে এবং সুন্নতের এত্তেবা করবে। আমি আরজ করলাম, হযরত! আরো কিছু নসীহত করুন। তিনি বললেন, স্বীয় নফসের উপর রহম করো, যাবতীয় গুনাহ হতে বেঁচে থাক এবং দুনিয়ার সাথে সকল সংশ্রব ত্যাগ কর।

কেননা যে ব্যক্তি দুনিয়া হাসিলের উদ্দেশ্যে মেহনত করবে, দুনিয়া তাকে বরবাদ করে ছাড়বে। আল্লাহ পাক তোমার মঙ্গল করুন এবং তোমাকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আবূ আব্দুল্লাহ বলেন, উক্ত বুজুর্গ আমার জন্য যত দোয়া করেছেন তা সবই কবূল হয়েছিল।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।