শাদ্দাদ তার তৈরি বেহেশত নামক প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে হাজার হাজার সৈন্যের একবাহিনী নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হল। প্রায় তিন হাজার গজ দূরে এসে তার বাহিনীসহ অবস্থান নিল। সেখান থেকে এবার ভিতর প্রবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। এমন সময় একটি হরিণের দিকে তার নজর পড়ল। যার পদসমূহ ছিল রূপার, শিংদ্বয় ছিল সোনার আর নয়ন দ্বয় ছিল ইয়াকুতের। শাদ্দাদ তার রূপে মুগ্ধ হয়ে শিকার করার লোভে একাই তার পশ্চাদ্ধাবন করল। সে তার সেনাবাহিনী হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল হঠাৎ করে ভয়ঙ্কর আকৃতি বিশিষ্ট এক অশ্বারোহী তার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বলল, এ সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণের মাধ্যমে কি তোমার নিরাপত্তা মিলবে? শাদ্দাদ এটা শুনে কেঁপে উঠল আর জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? শাদ্দাদের প্রশ্নের জবাবে অশ্বারোহী বলল, আমি মালাকুল মউত। শাদ্দাদ বলল, তুমি এখানে কি চাও? আযরাইল বলল, তুমি কি এখনও তা অনুভব করতে পার নাই? আমি তো এখনই তোমার জান কবজ করব। শাদ্দাদ বলল, আমাকে আমার পরম সাধের বেহেশত এক নজর দেখার সুযোগ দাও। আমার প্রতি নির্দেশ হল এখনই তোমার জান কবজ করা। সাদ্দাদ বলল তবে আমাকে একটু ঘোড়া হতে নামতে দাও।
আযরাঈল (আঃ) বললেন- না তুমি যে অবস্থায় আছ সে অবস্থাতেই তোমার জান কবজ করা হবে। আর এটা আল্লাহর নির্দেশ। তখন শাদ্দাদ ঘোড়া হতে নামবার জন্য তার এক পা জমিনের দিকে বাড়াল। আর এক পা ঘোড়ার রেকাবেই ছিল তার বাড়িয়ে দেয়া পা অল্পের জন্য বেহেশতের চৌকাঠে ঠেকল না। ঠিক এ অবস্থায় আযরাঈল (আঃ) শাদ্দাদের জান দেহপিঞ্জর থেকে বের করে ফেললেন। তার বেহেশত নামের প্রাসাদে প্রবেশের আশা চিরতর নির্মূল হয়ে গেল।
ইতোমধ্যে আল্লাহর নির্দেশ ফেরেশতা জিবরাইল এসে এমন প্রচণ্ড হাঁক মারল যে, সে প্রচণ্ড হাঁকে শাদ্দাদের সমস্ত লোক লশকর এবং যানবাহনাদি যা যেখানে ছিল, সকলই মৃত্যু এবং ধ্বংস প্রাপ্ত হল। আর আল্লাহর হুকুমে অসংখ্য ফেরেশতা এসে তখনই শাদ্দাম নির্মিত বেহেশত নামক প্রাসাদ মাটির নীচে লুপ্ত করে দিল।
সাদ্দাদের এ বেহেশত কিয়ামতের পূর্বে কোনদিনই আত্মপ্রকাশ করবে না। এক বর্ণনায় আছে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর খেলাফত কালে আবদুল্লাহ ইবনে কলব তার উট হারিয়ে ফেলে। বিভিন্ন স্থানে স্থানে তন্ন তন্ন করে তা তালাশ করতে করতে গিয়ে ইয়ামনের যে নিদির্ষ্ট স্থানটির উপর দিয়ে পথ অতিক্রমকালে সে বালুকার নীচে কতিপয় উজ্জ্বল জওহর দেখতে পেয়ে তা উঠিয়ে নিয়ে তা খলীফা মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর সম্মুখে পেশ করল।
সেখানে তখন কাব আহবার (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি উক্ত জওহরগুলো দেখে বললেন, নিশ্চয় শাদ্দাদ নির্মিত বেহেশতের জওহর। কেননা, আমি স্বকর্ণে রাসূল (সাঃ)-এর মুখে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে আবদুল্লাহ নামক কোন এক ব্যক্তি শাদ্দাতের বেহেশতের নিকট কারণবশতঃ গমন করে তার কিছু নিদর্শন দেখতে পাবে। এ ব্যক্তির নাম আব্দুল্লাহ বলে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, রাসূল (সাঃ)-এর সে ভবিষ্যৎ বাণী আজ পুরাপুরিভাবে ফলে গেল।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।