আমার কথাটি ফুরোলো–চতুর্থ পর্ব

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

ইন্দিরা বুদ্ধিমতী মেয়ে। সে অবস্থা বুঝে, অন্নদা-মাসীর সঙ্গে চলে গেল। যাবার সময় দাদা আর অর্জুনকে প্রণাম করে মিনতি জানিয়ে গেল তারা যেন মাঝে মাঝে ইন্দিরার খোঁজ-খবর নেয়। দু’চোখ তার বিদায়বেলার জলে ভরে উঠেছিল। আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে সে এক-পা এক-পা করে এগুচ্ছে দেখে অন্নদা-মাসী এক রকম জোর করেই তার হাতটি ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলেন।

রাজকুমার আর অর্জুন স্নান মুখে ইন্দিরার চলে যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইলো। পুরোহিত বললেন, সন্ধ্যারতির সময় হয়ে এলো। আমি চললুম মন্দিরে।

ওরা সে-কথা শুনতেই পেলো না। এতোই অন্যমনা হয়ে পড়েছিল দু’জনেই।

অন্নদা-মাসী যখন ইন্দিরাকে নিয়ে বাড়ি ঢুকছেন, সেই সময় ত্ৰৈলোক্যবাবু কি কাজে বাইরে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ স্ত্রীর সঙ্গে একটি সুন্দরী মেয়েকে বাড়ির মধ্যে আসতে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। অত্যন্ত কর্কশ কণ্ঠে পত্নীকে প্রশ্ন করলেন, সঙ্গে আবার কে ? একে কোথা থেকে জোটালে? মন্দির থেকে কুড়িয়ে এনেছ বুঝি? নাঃ, তোমার দেখছি লজ্জা নেই। সেই যে সে-বার ‘ফকরে বলে একটা ছোড়াকে মন্দির থেকে ধরে এনেছিলে বাড়ির কাজকর্ম করবে বলে, সে তো তে-রাত্রি পেরোবার আগেই আমাদের অনেক কিছু দামী জিনিসপত্র নিয়ে সরে পড়লো। এ তল্লাটে কোথাও তার সন্ধান পাওয়া গেল না।

অন্নদা-মাসী বললেন, সে ছোড়ার কথা ছেড়ে দাও। সে একটা বাউণ্ডুলে লক্ষ্মীছাড়া ছেলে—নেশাখের ছিচকে চোর। এটি ভদ্রলোকের মেয়ে। চেহারা দেখে বুঝতে পারছে না, বড়ো ঘরের সন্তান।

পেট-ভাতায় থাকতে রাজী করিয়ে এনেছি। তোমাকে এক পয়সাও মাইনে দিতে হবে না। দেশসুদ্ধ লোক জানে, তুমি কি রকম কঞ্জস আর কৃপণের জাসু! কিন্তু আমার বয়স বাড়ছে, বুড়ো হয়ে পড়ছি। আমি আর এখন একলা তোমার সংসার চালাতে পারছিনে। একজন লোক আমার চাই।

ত্ৰৈলোক্যবাবু বললেন, বেশ তো। আমি কি আর নিষেধ করছি? রাখো না তুমি যত খুশি লোক। শুধু আমার সেজন্যে এক পয়সা বাড়তি খরচ না হলেই হ’ল। ফকরে ছোড়া তোমার আমার পাতের ভাত খেতো।

তার জন্যে আলাদা চালের খরচ ছিল না। বছরে দুখানা ধুতিও দিতে হত না। আমার পুরোনো ছেড়া কাপড়গুলোই সেলাই করে সে পরতো। কিন্তু তুমি যে এই রাজরানীর মতো মেয়েটিকে ধরে এনেছো, এ কি ও ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে চাইবে ?

অন্নদা-মাসী ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, সে ভাবনা তোমায় ভাবতে হবে না। ওর ভাল যখন আমি নিয়েছি, তখন ওর যা দরকার হবে সে আমি ব্যবস্থা করবো। তোমাকে এর জন্য কিছু খরচ করতে না হলেই তো হ’ল।

ব্যস, তাই চাই। লোক রাখায় খরচ না বাড়লে আমার আপত্তি নেই। বলে ত্ৰৈলোক্যবাবু বেরিয়ে গেলেন।

ইন্দিরা অন্নদা-মাসীর বাড়িই রয়ে গেল। কিন্তু মনে তার সুখ ছিল না। দু’চারদিনের মধ্যেই ইন্দিরা বুঝতে পারলো, এখানে থাকা তার পক্ষে কতো কষ্টকর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে বাড়ির সব কাজই একলা করতে হয়।

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!