একটি চমৎকার আরবী গল্প-২য় পর্ব

গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সংগীতের সুরমূর্ছনা সারা পরিবেশ নৃত্য-পাগল অথচ বাইরের সূচিভেদ্য আঁধার কেউ থাকতে পারে না ?
মন নিরাশ-তিমিরে এতটুকুন হয়ে গেল৷ ও দিকে বাড়ছে দুরন্ত ব্যাধির মরণ-যাতনা। হামাগুড়ি দিয়ে চললো দরোজার দিকে। কোন রকমে খুলে মুখ বাড়িয়ে দিলো। অপেক্ষা করতে লাগলো অসীম আগ্রহে।

আকুতিভরা দুহাত তুললো আকাশের দুয়ারে। ক’টা ইঁদুর এবং বিড়াল ছাড়া আর কেউ ঘরে ঢুকলো না। ওরা সেই প্রথম থেকেই তার সাথে আছে৷ প্রথম প্রথম ভেবেছিলে বৃষ্টির ধারা ফোঁটায় ফোঁটায় আসে।

হয়ত ওদের দিয়েই রহমাতের শুভ সূচনা। কাজেই ওদেরকে ঘরে ঠাঁই দিতে দোষ কি। দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি, মারামারি-হরেক রকম খেলা দেখিয়ে ওরা তাকে হাসাতো। কিন্তু তারপর থেকে শুরু হলো বিদ্রুপের পালা। বইগুলো টুকরো টুকরো করলো, খাদ্যগুলো দিলো সাবাড় করে,এরপর ওষুধের পাত্রে দিলো পেশাব করে।

কিন্তু…
ও যে ফজরের আযানের সাথে সাথে দরোজায করাঘাত শুনেছিল। ভেবেছিলো বাদামী রঙের আশ্বারোহী এ ডাক্তার অবশেষে আসবেই। ও-যে বড় পরিচিত। নিশুতিরাতে কতবার তাকে স্বপ্নে দেখেছে! না, না, ও নুওয়াইল চোরের মত নয়। ওরে আল্লাহ্রে, ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন চোরটা খিড়কি দিয়ে ঢুকেছিলো।

না, র‌্যাম্বোর স্টাইলে বোমা নিয়েও সে আসবে না। নিশ্চয় ও-খালী হাতে আসবে। অশ্বারোহী বটে, তবে তার অস্ত্র হবে একমুখ হাসি, কিছু প্রত্যয় এবং মেধা ….. ছুরিও না, বন্দুক না।
-আসুন ডাক্তার দরোজা ভেজানো। একটু ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে। আসুন, আমার বিশ্বাস, আবদ্ধকালের দুর্বিসহ ও দুর্গম এ-পথ আপনি হাতে ধরে আমাকে পার করতে পারবেন, হে চপল অশ্বারোহী, আসুন, আমার হাতটা ধরুন।
ওর গলার স্বর বাড়াতে চেয়ে ব্যর্থ হলো। গলা আটকে গেল।

শুরু হলো শুকনো কাশি। প্রাণ বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন। দুচোখ বেদনার অশ্রু ঝরানো। যন্ত্রণায় সারা মুখ নীল হয়ে গেল। সমস্ত শরীর কাঁপছে রি রি করে। ভয়ার্ত চোখজোড়া ঠিকরে পড়লো- দেয়ালে টাঙানো মৃত জীবনসংগিনীর কাঁচে বাধা ছবির ওপর। সেটাও যেন কাঁপছে। ওইতো, যেন ছবিটা ধীরে ধীরে লম্বা হয়ে নীচে নামছে।

কাঁচের আবদ্ধতা ভেঙে মেঝেতে পা দিচ্ছে।

হেঁটে হেঁটে কাছে আসছে৷ আহ্‌ আলতো করে বুকে হাত রাখলো সে! ভিজে ঘাম মুছে দিচ্ছে!! ঘটনার আকস্মিকতায় শ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেল সে। দেখলো ক্ষুব্ধতা ও ঘৃণায়ভরা নয়ন জরা-ব্যাধিগ্রস্থ মুমূর্ষু স্বামীর আপদমস্তক নিরীক্ষণ করে চলছে- বড় লজ্জায় অভিভূত হয়ে গেল।
কাঁপা গলায় বললো-
-তুমিতো জানো প্রিয়তমা, আমি কত বলিষ্ঠ ছিলাম!
-হ্যাঁ ছিলে বটে!
কিছু সাহস সঞ্চারিত হলো- ডুব দিলো অতীতের মরাগাঙে-ভাব লেশহীন কণ্ঠ বলে উঠলো-
-চিনতো আমায় অশ্ব এবং রাতের আঁধার, উষর মরু…
-চুপ কর -কথা শেষ না করতে দিয়েই ওর স্ত্রী ধমক দিয়ে উঠলো -এখন কী হয়েছে তাই বলো।
দুর্বল দুটি হাত উঠিয়ে দিলো বাতাসের কাঁধে…বাড়িয়ে দিলো আপন প্রিয়তমার দিকে৷ আবার ফিরিয়ে আনলো। পৃথিবীর বয়ে চলা নদীর মত তার সারা দেহ হতে ঘাম ঝরে পড়ছে একে-বেকে। অনুচ্চ স্বরে বললো:
-জাতির বিরুদ্ধে আক্রমণ তো ওরাই করেছিলো…. ওরাইতো বোম ফেলেছিলো। চেরোনোবিলের দুর্ঘটনার যেন আবার হলো পুনরাবৃত্তি। কই আজো কোন শান্তির জন্য শীর্ষ সম্মেলন হলোনা!!
-তারেক কোথায়?

কোথায় আমার তারেক আর ছেলে মেয়েরা?
ভেজানো কপাটের দিকে ইশারা করে বললো:
– তারেক সমুদ্রে গেছে, ওর ভাই বোনেরাও তার সাথে৷

ওরা নাকি বেঁচে থাকার জন্য এক মুঠো হালাল রুজির সন্ধানে বেরিয়েছে।
কিছুক্ষণ নীরব হয়ে পড়ে রইলো। অবাধ্য অশ্রু তখনো বয়ে যাচ্ছে দুচোখ দিয়ে। বললো- লোকেরা বলা-বলি করে, তারেক নাকি আমার মুখ দেখবে না বলে জাহাজ পুড়িয়ে দিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছে। লোকেরা বলে বেড়িয়েছে, তারেক আমার নাম শুনে ঘৃণায় থুথু ফেলতো।
গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!