ক্লাস ফ্রেণ্ড — সত্যজিৎ রায়-৩য় পর্ব

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

মোহিত এতক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছেন। সামনের সোফায় আগন্তুক বসার পর মোহিতও তাঁর নিজের জায়গায় বসলেন। মোহিতের নিজের ছাত্রজীবনের কয়েকটা ছবি তাঁর অ্যালবামে আছে; সেই ছবিতে চোদ্দ বছর বয়সের মোহিতের সঙ্গে আজকের মোহিতের আদল বার করতে অসুবিধা হয় না। তাহলে এঁকে চেনা এত কঠিন হচ্ছে কেন? ত্রিশ বছরে একজনের চেহারায় এত পরিবর্তন হয় কি?

‘তোমাকে কিন্তু বেশ চেনা যায়।

রাস্তায় দেখলেও চিনতে পারতাম’—ভদ্রলোক কথা বলে চলেছেন—’আসলে আমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। কলেজে পড়তে পড়তে বাবা মারা গেলেন, আমি পড়া ছেড়ে চাকরির ধান্দায় ঘুরতে শুরু করি। তারপর, ব্যাপার তো বোঝই।

কপাল আর ব্যাকিং এ দুটোই যদি না থাকে, তাহলে আজকের দিনে একজন ইয়ের পক্ষে…’

‘চা খাবে?’

‘চা? হ্যাঁ, তা….

মোহিত বিপিনকে ডেকে চা আনতে বললেন, আর সেই সঙ্গে এই ভেবে আশ্বস্ত হলেন যে কেক মিষ্টি যদি নাও থাকে, তাহলেও ক্ষতি নেই; এনার পক্ষে বিস্কুটই যথেষ্ট।

‘ওঃ।’ —ভদ্রলোক বলে চলেছেন, ‘আজ সারা দিন ধরে কত পুরনো কথাই না ভেবেছি, জান মোহিত!’

মোহিত নিজেরও যে কিছুটা সময় তাই করেছেন সেটা আর বললেন না।

‘এল সি এম, জি সি এম-কে মনে আছে?’

মোহিতের মনে ছিল না, কিন্তু বলতেই মনে পড়ল। এল সি এম হলেন পি-টির মাস্টার লালচাঁদ মুখুজ্যে। আর জি সি এম হলেন অঙ্কের স্যার গোপেন মিত্তির।

‘আমাদের খাবার জলের ট্যাঙ্কের পেছনটায় দুজনকে জোর করে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে কে বঙ্ ক্যামেরায় ছবি তুলেছিল মনে আছে?’

ঠোঁটের কোণে একটা হাল্কা হাসি এনে মোহিত বুঝিয়ে দিলেন যে তাঁর মনে আছে। আশ্চর্য, এগুলো তো সবই সত্যি কথা। ইনি যদি জয়দেব না হন, তাহলে এত কথা জানলেন কী করে?’

‘স্কুল লাইফের পাঁচটা বছরই আমার জীবনের বেস্ট টাইম, জান ভাই,’ বললেন আগন্তুক, ‘তেমন দিন আর আসবে না।’

মোহিত একটা কথা না বলে পারলেন না।

‘তোমার তো মোটামুটি আমারই বয়স ছিল বলে মনে পড়ে’—

‘তোমার চেয়ে তিন মাসের ছোট।’

‘—তাহলে এমন বুড়োলে কী করে? চুলের দশা এমন হলো কী করে?’

‘স্ট্রাগ্ল, ভাই স্ট্রাগল,’ বললেন আগন্তুক। ‘অবিশ্যি টাকটা আমাদের ফ্যামিলির অনেকেরই আছে। বাপ-ঠাকুরদা দুজনেরই টাক পড়ে যায় পঁয়ত্রিশের মধ্যে! গাল ভেঙেছে হাড়ভাড়া খাটুনির জন্য, আর প্রপার ডায়েটের অভাবে।

তোমাদের মতো তো টেবিল-চেয়ারে বসে কাজ নয় ভাই। কারখানায় কাজ করেছি সাত বছর, তারপর মেডিক্যাল সেলসম্যান, ইনশিওরেন্সের দালালি,

এ দালালি, সে দালালি! এক কাজে টিকে থাকব সে তো আর কপালে লেখা নেই। তাঁতের মাকুর মতো একবার এদিক একবার ওদিক।

 

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!