গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সারা মুখে উপহাসের হাসি ছড়িয়ে কথা শেষ করলেন জহর দাশ। এখনও তিনি হাত বুলোচ্ছেন রিমোট কন্ট্রোলারে। বাইরে গম্ভীর ডেকে উঠল একটা কুকুর। একবার… দু’বার… তিনবার। তারপর সব চুপ। চৌবাচ্চার দিক থেকে এতক্ষণ চোখ সরায়নি ইন্দ্রনাথ। এখন আচমকা বলল, “সত্যিই জেলখানায় যেতে চান?”
“সত্যি! মাথায় ব্যামো আছে ভাবছেন?…
“তা একটু আছে। নইলে নিজের হিরে এইভাবে কেউ লোপাট করে?”
“চোখ নাচালেন জহর দাশ,“ তাই নাকি? কীভাবে করলাম, সার ইন্দ্রনাথ?”
“রোলিং শাটার নামানোর ঠিক আগে হিরের বকলস সমেত আরও হিরে নিজেই সরিয়ে নিয়েছিলেন।”
“বটে! বটে!”
“রোলিং শাটার যখন নামানো হয়েছে, তখন শোকেসের বেশিরভাগ হিরেই ছিল আপনার পকেটে। হিরেচোর শুধু কাচ ভেঙেছে, হাত গলিয়েছে, তারপর ছুটেছে। সে আপনার লোক। তাকে হিরে নিতে কেউ দেখেনি, আপনি নাকি দেখেছেন। জহর দাশ, চোর আপনি নিজে – হিরের বকলসের মালিককে বোকা বানাতে সরিয়েছেন, হয়তো রেখেছেন কলের মাছেদের চোখের সকেটে, জেলখানায় যাওয়ার সাধ কি আছে এখনও?”
সে কী হাসি জহর দাশের, “কক্ষনো না। সেরা লেখা মাথায় থাকুক। ওটা আমার সূত্র, দেখছিলাম, আপনার মগজ কতটা ধারালো। ইয়েস সার ইন্দ্রনাথ, সমস্ত হিরে রয়েছে কলের মাছেদের চোখে, আপনার চোখের সামনেই। হা হা হা!”
“রক্তমুখী নীল দেখাতে ডেকে এনেছিলাম তো একই মতলবে- আমার সঙ্গেও চোর-পুলিশ খেলবার জন্য। ফলে জানলাম, কুকর্মে ঝোঁক রয়েছে আপনার।
অভনব পন্থায় হিরে চুরিই বা করবেন না কেন?
“খেলেছিলাম তো বটেই, এ বড় মজার খেলা! এ যুগের বড়লোকি খেলা। আমার পূর্ব পুরুষেরা যদি বেড়ালের বিয়ে দিয়ে টাকা উড়িয়ে মজা করতে পারে,
আমি আমরাই হিরে চুরি করে সজা করতে পারি না? আলবত পারি।”
“নিজের হিরে নিয়ে করতে পারেন, পরের হিরে নিয়ে নয়।”
“হিরের বকলস? আপনিও পারেননি বের করতে,
পারলেই ফেরত পাবেন।”
“কুকুর ডাকছে কোথায়?”
ফের চোখ নাচালেন জহর দাশ। নিজেও যেন নাচলেন- “দেখবার সাধ হয়েছে? আসুন! আসুন! এই তো পাশের ঘরে।”
মৎস্যাধার কক্ষ থেকে বেরনোর আগে চৌবাচ্চার সেই নকল মাছটার দিকে ফিরে চেয়ে ছিলাম। আবার লেজ নাড়ছিল এদিককার কাঁচের গায়ে। রক্তমুখী নীলা চোখ ফেরানো ছিল আমার দিকেই। মেন হল যেন, দপ করে লাল রশ্মি ঠিকরে এল নীলার ভেতর থেকে। চোখের ভুল নিশ্চয়। ভয়ে চোটে কিন্তু হাত পা ঠান্ডা হয়ে এল আমার।
পাশের ঘরের এককোণে দেখলাম বিশাল কুকুরটাকে। ছোট বাছুরের সাইজ। লকলক করছে জিভ। টপটপ করে ঝরছে লালা। ধক ধক করছে দুই চোখ।
পাগলা কুকুর নাকি? সভয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম চৌকাঠে। গলায় যখন শেকল নেই, ও কুকুরের কাছে আমি যাচ্ছি না। চমৎকার চোখে চেয়ে ছিল ইন্দ্রনাথ। পায়ে পায়ে ইগিয়ে গিয়ে হাত বুলিয়ে নিল কুকুরটার গলার চামড়ার বকলসে। বলল, “চামড়ার পাটির নিচেই রয়েছে হিরের বকলস।”
ঠিক এই সময় বিকট হাঁক পাড়ল বিরাট কুকুর। চার দেয়াল যেন চৌচির হয়ে গেল সেই ডাকে। বিরক্ত গলায় বলল ইন্দ্রনাথ, “কী মজা হচ্ছে? হাত সরান রিমোট থেকে।”
অপরাধী মুখে যন্ত্রটা পকেটে রেখে দু’হাত ঝড়াতে ঝড়াতে বললেন জহর দাশ, “ব্রেন বটে আপনার! খেলে আরাম আছে আপনার সঙ্গে। কলের কুকুরকেও ধরে ফেললেন?”
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল ইন্দ্রনাথ, “এর জন্য ব্রেনের দরকার হয় না, চোর মহারাজ। কলের ডাইনোসর যখন তৈরী হচ্ছে, কুকুর কেন হবে না?”
“হো হো হো! হা হা হা! খুব রগুড়ে লোক মশাই আপনি, ইয়ে, সার ইন্দ্রনাথ।”
“বাকি রগড় দেখাবেন জেলখানায়, সেরা লেখাটিও নিখবেন।”
“পাগল! পুলিশকে জানিয়ে দেবেন, সব হিরে পাওয়া গেছে। কীভাবে? সে একটা গল্প এই লেখক বন্ধু লিখে দেবেন’খন। আংটিগুলো? এই তো আমার ট্যাকে। আবার আসবেন। আরও বুদ্ধির লেখা আমি জানি। হা হা গা! হো হো হো! হি হি হি!”
শক্ত গলায় ইন্দ্রনাথ বলল, “জহর দাশ, রক্তমুখী নীলা বিদেয় করুন।”
“কেন, সার ইন্দ্রনাথ?”
“অভিশপ্ত পাথর আপনার মাথা খারাপ করে দিয়েছে।”
জহর দাশ দাঁত খিঁচোলেন এবং পকেটে হাত পুরলেন। কুকুরটা ডেকে উঠল এবং খচমচ করে তেড়ে এল, দুই চোখ দিয়ে ঠিকরে এল লেসার স্পার্ক।
আমরা পালিয়ে এলাম