রহস্য-২য় পর্ব

গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বলেছিলেন,“আটটা বাজতেই রোলিং শাটার নামিয়েছি আমি নিজে। তারপরেই শোকেস থেকে হিরেগুলো তুলে ভল্টে রাখবার জন্য যেই ঘুরেছি, অমনই ভাঙল কাঁচ।” বড়বাবু বলেছিলেন, “কত টাকার হিরে গেল?” “আন্দাজ হিসেবে এক কোটি তো হবেই। ঝামেলা হবে হিরের বকলসটা নিয়ে।”
“হিরের বকলস!”

“আজ্ঞে। কুকুর পোষার শখ ছিল ময়নাগড়ের মহারাজার। সেরা কুকুরকে হিরের বকলস পরিয়ে রাখতেন। রাজত্ব গেছে-তাঁর ছেলে ঠাটবাট বজায় রাখার জন্য এনেছিল বেচবার জন্য। আমি বলেছিলাম, রেখে যান।

বিক্রি হলে দাম পাবেন, আমাকে কমিশন দেবেন। ছোকরা তো এখন আমাকে ছাড়বে না। যেভাবেই পারেন, হিরে উদ্ধার করে দিন।” মাথা চুলকে বড়বাবু বলেছিলেন, “কিন্তু অত হিরে গেল কোথায়? নিশ্চয় হাওয়ায় মিলিয়ে যায় নি”।

পরের দিন সকালে ইন্দ্রনাথের বৈঠকখানায় বসে বললেন খোদ মালিক, যাঁর নামের মধ্যেও রয়েছে জহরতের গন্ধ।

নাম তার জহর দাশ। দিব্যি পেটাই চেহারা। লম্বায় ছ’ফুট তো বটেই। গায়ের রং আর ফেসকাটিং সাহেবদের মতো। খালি যা মাথাজোড়া বিশাল টাক।

যে-বাঙালি ধুতি-পাঞ্জাবি পরে, ইন্দ্রনাথ তাকে একটু বেশি খাতির করে। জহর দাসের হিরের বোতাম, অর্গান্ডির পাঞ্জাবি আর চুনোট করা কোঁচার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “ফাইন! আপনার রুচি আছে।”

“তা আছে। অনেক কিছুর। দেখতে যদি চান, বাড়ি আসুন। আপনার সেই লেখক বন্ধুকেও নিয়ে আসুন। কিন্তু ভাই, বকরসটাকেও উদ্ধার করে দিন। পুলিশ দিয়ে হবে না। অত হিরে কি ভ্যানিশড্‌ হয়ে গেল? হোপলেস! সামান্য এই রহস্যের সমাধান করতে পারছেন না! তাই দৌড়ে এলাম। প্লিজ হেল্প।”

হিরে চুরির কাহিনী শুনে ইন্দ্রনাথ নিজেও মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিল। কিন্তু জহর দাশকে তো আর না বলা যায় না। তাই বলেছিল, “ভাবতে সময় দিন।”
– “তা হলে চলুন, আমার বাড়িতে চলুন, মাথা সাফ হয়ে যাবে।”

ইন্দ্রনাথ আমাকে বালিগঞ্জ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জহর দাশের পেল্লায় গাড়িতেই। তিনি থাকেন আহিরিটোলার একটা বিরাট বাড়িতে। রাজবাড়ি বললেই বলে।

বৈঠকখানায় বনে আগে নিজের কাহিনী ফলাও করে বললেন জহর দাশ। হিরে কেনাবেচা সূত্রে পৃথিবীভ্রমণ তাঁর কাছে টালা থেকে টালিগঞ্জ যাওয়ার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছি। এই তো সেদিন ঘুর এলেন সাউথ আমেরিকা।

ভেনিজুয়েলার এক কিউরেটরের কাছ থেকে কিনলেন একটা রক্তমুখী নীলা।

“রক্তমুখী নীলা!” মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম আমি, “সে তো  সর্বনেশে নীলা।”
“আজ্ঞে,” টাকে হাত বুলাতে-বুলাতে অবজ্ঞার সুরে বললেন জহর দাশ, খুবই সর্বনেশে। যা শুনে কিনেছিলাম, তা যদি  শত্যি হয়, তা হলে সাংঘাতিক সর্বনেশে।”
“কী শুনে কিনলেন?”
“আজটেকদের নাম নিশ্চয় ‍শুনেচেন?”
“শুনবো না কেন?” আহত কন্ঠে বলেছিলাম, “স্প্যানিয়ার্ডদের হামলার আগে মেক্সিকোয় যারা সবচেয়ে প্রবল জাত ছিল।”
“রাগ করলেন?”
“না, করিনি।”
“তা হলে শুনুন। আজটেকদের বিশ্বাস ছিল, সূর্যনাকি রোজ রাতে মারা যায়- নররক্ত না পেলে পরের দিন সকালে ওঠে না। তাই বছরে ১৫০০০ নরবলি দিত রক্তেলোলুপ সূর্যদেবতাকে ঠান্ডা রাখার জন্য। বেশির ভাগ যুদ্ধবন্দী।

আমি এই মন্দিরগুলোর কী নাম দিয়েছি জানেন? রক্ত মন্দির। কী বুঝলেন?”
“রক্তমন্দিরে রোজ নরবলি হত।”
গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

দুঃখিত!