টোপ–নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়-পঞ্চম পর্ব

গল্পের ষষ্ঠ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

—হুঃ, গুড কন্ডাকটরের প্রাইজ পাওয়া ছেলে। রাজাবাহাদুরের সুরে অনুকম্পার আভাস : আমি কিন্তু চৌদ্দ বছর বয়সেই প্রথম ড্রিঙ্ক ধরি।

রাজা-রাজড়ার ব্যাপার—সবই অলৌকিক। জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গেই কেউটের বাচ্চা। সুতরাং মন্তব্য অনাবশ্যক। ট্রে বারবার যাতাযায়াত করতে লাগল : রাজাবাহাদুরের প্রখর উজ্জ্বল্ চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে এল ক্রমশ, ফর্সা লাল গোলাপী রঙ ধরল। হঠাৎ অসুস্থ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।

—আচ্ছা বলতে পারেন, আপনি রাজা নন কেন?

এরকম একটা প্রশ্ন করলে বোকার মত দাঁত বের করে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই! আমিও তাই করলাম।

—বলতে পারলেন না?

—না।

—আপনি মানুষ মারতে পারেন?

এ আবার কী রকম কথা। আমার আতঙ্ক জাগল।

—না!

—তাহলে বলতে পারবেন না, ইউ আর এ্যাবসোলিউটলি হোমলেস।

উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালেন রাজাবাহাদুর। বলে গেলেন : আই পিটি ইউ।

বুঝলাম নেশাটা বেশ চড়েছে। আমি আর কথা বাড়ালাম না, চুপ করে রইলাম সেখানেই। খানিক পরেই ঘরের ভেতর নাক ডাকার শব্দ। তাকিয়ে দেখি তাঁর লাউঞ্জের সেই চেয়ারটায় হাঁ করে ঘুমুচ্ছেন রাজাবাহাদুর, মুখের কাছে কতকগুলো মাছি ভনভন করে।

সেইদিন রাত্রেই শিকারের প্রথম অভিজ্ঞতা।

জঙ্গলের ভেতর বসে আছি মোটরে। দুটো তীব্র হেড-লাইটের আলো পড়েছে সামনের সঙ্কীর্ণ পথে আর দু’ধারের শাল বনে। ওই আলো-রেখার বাইরে অবশিষ্ট জঙ্গলটায় যেন প্রেতপুরীর জমাটে অন্ধকার। রাত্রির তমসায় আদিম হংস্র সজাগ হয়ে উঠেছে চারদিকে—অনুভব করছি সমস্ত স্নায়ু দিয়ে।

এহানে হাতীর পাল ঘুরছে দূরের কোন পাহাড়ের পাথর গুঁড়িয়ে গুঁটিয়ে, ঝোঁপের ভেতরে অজগর প্রতীক্ষা করে আছে অসতর্ক শিকারের আশায়, আসন্ন বিপদের সম্ভাবনায় উৎকীর্ণ হয়ে আছে হরিণের পাল আর কোনো একটা খাদের ভেতরে জ্বলজ্বল করছে ক্ষুধার্ত বাঘের চোখ। কালো রাত্রিতে জেগে রয়েছে কালো অরণ্যের প্রাথমিক জীবন।

রোমাঞ্চিত ভীত প্রতীক্ষায় চুপ করে বসে আছি মোটরের মধ্যে। কিন্তু হিংসার রাজত্ব শালবন ডুবে আছে আশ্চর্য স্তব্ধতায়। শুধু কানের কাছে অবিশ্রান্ত মশার গুঞ্জন ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।

মাঝে মাঝে অল্প বাতাস দিচ্ছে—শালের পাতায় উঠছে এক একটা মৃদু মর্মর। আর কখনো কখনো ডাকছে বন-মুরগী, ঘুমের মধ্যে পাখা ঝাপ্টাচ্ছে ময়ূর। মনে হচ্ছে এই গভীর ভয়ঙ্কর অরণ্যের ভয়ঙ্কর প্রাণীগুলো যেন নিঃশ্বাস বন্ধ করে একটি নিশ্চিত মুহূর্তেরই প্রতীক্ষা করে আছে।

আমরাও প্রতীক্ষা করে আছি।

মোটরের মধ্যে নিঃসাড় হয়ে বসে আছি আমরা—একটি কথাও বলবার উপায় নেই। রাইফেলের একটা ঝকঝকে নল এঞ্জিনের পাশে বাড়িয়ে দিয়ে শিকারী বাঘের মতোই যেন তাকিয়ে আছেন রাজাবাহাদুর।

চোখ দুটো উদগ্র প্রখর হয়ে আছে হেড লাইটের তীব্র আলোক রেখাটার দিকে, একটা জানোয়ার ওই রেখাটা পেরুবার দুঃসাহস করলেই গর্জন করে উঠবে।

গল্পের ষষ্ঠ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!