আধ্যাত্মিক শক্তি

শায়েখ আব্দুল্লাহ কারাশী থেকে বর্ণিত। তিনি শায়েখ আবূ ইয়াজিদ কারতাবী (রহঃ) হতে শুনেছেন, যখন কারাশী শায়েখের প্রাথমিক জীবনের অবস্থা জিজ্ঞেস করল, তখন তিনি বললেন, বেটা একটি সমস্যার কারনে আমাকে এই পথে টেনে এনেছে। পেশায় আমি একজন আতর ব্যবসায়ী ছিলাম। আমাদের দোকানে বহু মূল্যবান ও দুষ্প্রপ্য আতরের সমবেশ ছিল। স্বভাবে আমি বড় সৌখিন ছিলাম এবং সর্বদা মূল্যবান দামী দামী পোষাক ব্যবহার করতাম।

একদিন আমি ফজরের নামায আদায় করতে জামে মসজিদে গেলাম। নামাজ শেষে মসজিদের কিছু লোক একত্রিত হয়ে বসল। ঐ সময় আল্লাহ ওয়ালা ও বুজুর্গদের সম্পর্কে আমার বিশেষ কোন ধারণা ছিল না। সাধারণ মানুষের মতই আমি মনে করতাম। আল্লাহ ওয়ালারা বিরাণ ভূমি ও পাহাড় পর্বতের বিচরণ করেন। এর বেশী আমি আর কিছুই জানতাম না। যাই হোক আমি মজলিশে গিয়ে শরীক হলাম। পরে জানতে পারলাম যে, ঐ মজলিশে নিয়মিত আল্লাহ ওয়ালাদের বিভিন্ন অবস্থা ও ঘটনাবলীর উপর আলোচনা হয়। সেদিন শায়েখ আবূ ইয়াজিদের মোজাহাদার উপর আলোচনা হচ্ছিল। আমি শায়েখের বিষ্ময়কর ঘটনা শুনে চাপা স্বরে মন্তব্য করলাম, এমন অবাস্তব কথা কিভাবে কিতাবে লেখা হয়? মজলিশে একজন লোক তা শুনে বলল, তবে কিভাবে কি লেখা হয় বল? জবাবে আমি বললাম, কিতাব হতে যেই বিবরণ পড়ে শোনানো হল এটা আমার নিকট অবাস্তব মনে হচ্ছে। একজন মানুষ এক বছর পানি না পান করে কাটিয়েছে এটা কেমন কথা? কি করে সম্ভব। সে বলল, তুমি ঐ ঘটনা  অস্বীকার কর না। আমি লোকটির সাথে আলোচনা করছিলাম। এমন সময় সভাস্থল হতে শীর্ণদেহী এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আমাকে লক্ষ্য করে বলল, ছালেহীন ও আল্লাহ ওয়ালাদের সম্পর্কে আলোচনা করতে তোমার লজ্জা হয় না? আমি বললাম- আপনি কাকে আল্লাহ ওয়ালা বলছেন?

এ কথা বলেই আমি সভাস্থল থেকে দোকানে চলে এলাম। দোকানে আসার পরও আমি মসজিদে ঘটনাটি নিয়ে মনে মনে বিষ্ময়বোধ করছিলাম। জোহরের নামাযের কিছুক্ষণ পূর্বে আমি দোকানে বসে বেচা-কেনা করছিলাম। এমন সময় দেখতে পেলাম, সকাল বেলার দেখা মসজিদের সেই শীর্ণদেহী লোকটি আমার দোকানের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি লক্ষ্য করলাম, কিছু দূর এগিয়ে আবার এদিকে ফিরে আসছে। আমার মনে হল যেন সে আমাকেই সন্ধান করছে। সে নিকটে এসে আমাকে সালাম করে আমার নাম জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম, আমার নাম আব্দুর রহমান। সে বলল, তুমি আমাকে চিনতে পেরেছ? আমি বললাম হ্যাঁ! তোমার সঙ্গে আজ সকালে মসজিদে কথা হয়েছিল। এবার সে বলল, এখনো কি তুমি তওবা  করনি? সকাল বেলা তুমি যা বলেছিলে এখনো কি তুমি তাই বলছ? তাই বিশ্বাস করছ? আমি বললাম- এমন কোন অন্যায় আমি করিনি যার জন্য আমাকে তওবা করতে হবে। এবার সে আমার দোকানের সামনে রাখা পাথরটির সাথে তার বুক স্পর্শ করে বলল, হে আবূ ইয়াজীদ! ছালেহীনদের আমল সম্পর্কে তোমার অভিমত কি? আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, তুমি ছালেহীন দেখছ কোথায়? সে বলল, তারা তোমাদের এই বাজারেও ঘুরে বেড়ান! তাদের মধ্যে এমন আধ্যাত্মিক শক্তি আছে যে, তারা যদি কোন পাথর কে ইশারা করেন তবে তাদের সাথে হাঁটতে থাকবে।

এ কথা বলেই সে আমার দোকানের সামনের পাথরটির প্রতি ইশারা করলেন। সাথে সাথে তাতে দুটি ছিদ্র হয়ে গেল। ঐ পাথরে মানুষের বন্ধক রাখা কিছু আসবাবপত্র ছিল। যা ঐ ছিদ্র   দিয়ে বের হতে শুরু করল। আমি ব্যস্ত হয়ে পুনরায় ওটা পাথরের ভেতর ঢুকাতে ঢুকাতে বিষ্ময় প্রকাশ করে বললাম, মানুষ কি এমন শক্তিরও অধীকারী হতে পারে?

সে বলল, মানুষ সেই আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারীও হতে পারে

তার মোকাবেলায় এটা তো নগণ্য। আমি বললাম, এটা ব্যতীত মানুষ কি শক্তির অধিকারী হতে পারে বল। সে বলল, যদি তোমার দোকানকে বলা হয় যে, এ মুহূর্তে তুমি উচ্ছেদ হয়ে যাও, তবে সাথে সাথে তা উচ্ছেদ হয়ে যাবে।

লোকটির মন্তব্য শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমার দোকানটি দু’বার নড়ে উঠল।। সেই সাথে দোকানের সকল কাঁচপাত্র ও আতরের শিশাগুলো এমনভাবে শব্দ করে উঠল যে, আমি মনে করলাম, তা হয়ত আমার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। এমন সময় লোকটিও কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। সে চলে গেলে আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি যদি সারা জীবন দোকানদারী করে কাটিয়ে দেই তাহলে কেমন করে আল্লাহর বন্ধু অর্থাৎ ওলীদের সাক্ষাৎ পাব? পরদিন আমি আবার সেই মসজিদে আল্লাহ ওয়ালাদের জলসায় গিয়ে বসলাম। আল্লাহর শপথ! আজ আল্লাহ ওয়ালাদের আলোচনা শোনার পর আমার মনে এমন ক্রিয়া হল যে, আর দোকানে ফিরে যাবার কোন ইচ্ছায় মনের ভেতর খুঁজে পেলাম না।

পরে দোকানের চাবি আমি আমার মামার নিকট দিয়ে দিলাম। দোকানটি তার নিকট থেকেই ভাড়া নিয়েছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- দোকানের চাবি ফেরত দিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছ? আমি আমার মনের গোপন কথা গোপন রেখে শুধু বললাম- ইনশাল্লাহ আবার ফিরে আসব। কিন্তু ঘটনার পর সেই যে আমি আল্লাহর পথে বের হলাম, অতঃপর আর বাড়ীতে ফিরে যাওয়া হয়নি আমার।  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।